অরুণ

      1 Comment on অরুণ

[শুরুর আগেঃ

সত্যি বলতে অরিজিতের কাছে শেখার আছে অনেককিছুই। লেখার মধ্যে নতুনত্ব, একই বাঁধাধরা লেখাগুলির বাইরে গিয়ে লেখার তাগিদ, অনেককিছুরই অণুপ্রেরণা যুগিয়েছেন এই নবীন বন্ধু। বঙ্কু পত্রিকার মাধ্যমে আরো কিছু বন্ধুদের সাথে কাজ করে চলেছে নিয়মিত। আর শুধু লেখা নয়, কখনো ছবি তোলা, কখনো সিনেমা বানানো ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করেছে ভিন্নধর্মী যৌনতা আর লিঙ্গচেতনার গাঁথা। বন্ধু, তোকে অনেক আন্তরিক শুভেচ্ছা। জাঁদরেল কিছু নামের পাশে তোদের মতো কিছু মানুষেরা সবসময়ই নিজেদের মতো করে আন্দোলনটাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কখনো প্রশংসিত, আবার কখনো নিন্দিত ব্যঞ্জনায়।]

অরুণ

অরিজিত দাস

এবার গপ্পো অরুণকে নিয়ে। অরুণ যে কিনা বরুণ এবং কিরণমালার ভাই নয়। তাহলে কে? অনেক সময় সুয্যিমামাকে অরুণ বলে ডাকা হয়। ভোটার কার্ড কিন্তু অন্য কথা বলছে। অরুণ কিন্তু অ্যাকচুয়ালি সুয্য নয়। অরুণ সূর্যের সারথি। অরুণের গায়ের রং ফরসা । উজ্জ্বল। দীপ্তি আছে। কিন্তু তবুও স্নিগ্ধ। অরুণ বেরোয় ভোরে। সূর্য বেরোয় অনেক পর। সূর্যের দীপ্তি পুড়িয়ে দেয়। (নির্ঘাত সাদা চামড়া) অরুণ শান্ত। ভোরের সূর্য। যে কিনা ভিটামিন ডি বানায় । এই কান্তি অরুণ পেয়েছে… মহর্ষি ইয়ের জন্যেই -আরে মহর্ষি কশ্যপ আর কি!…ওর বাবা। কিন্তু তবুও অরুণ একটু একটু অন্য রকম। কেন অন্য রকম। তাহলে জানতে হবে। পেছনে গপ্পো আছে। অরুণ জন্মাবধি অন্য রকম কেন।

অরুণ এর ভাই কিন্তু বিখ্যাত লোক -গরুড় –বিষ্ণুর বাহন।

অরুণের বাবা মহর্ষি কশ্যপের তেরোটা বৌ। মা গো মা :O । তার মধ্যে একজন বিনতা। তো এই বিনতার গর্ভে দুটো ডিম হয়। (মহর্ষি সরীসৃপ ছিলেন কিনা জানিনে বাপু একদিকে অরুণ –গরুর- এরা হয়েছে যারা কিনা পিতার নাম রওশন করেছে উড়ে উড়ে ওদিকে গরুড়ের সৎ ভাইরা সব সাপ ) যাইহোক বিনতার চিন্তার শেষ নেই। সতীনদের সন্তানরা সবাই বড় হয়ে যাচ্ছে। ইস্কুলে পড়ছে (সাপের ইস্কুল ? ছোবল শেখায় নিশ্চই ) ওদিকে বিনতার ডিম আর ফোটে না কবে বিনতার ডিম ফুটবে, কবে তারা ইস্কুলে যাবে ভেবে ভেবে আকুল। আর পারিনা। বিনতা অধৈর্য হয়ে একটা ডিম ভেঙে ফেললে। তা থেকে বেরোয় অরুণ । দামড়া।শিশু টিশু নয় একেবারে দামড়া। কিন্তু একটু অসম্পূর্ণ বেরিয়েই মাকে এই মারে কি সেই মারে। তোমার জন্যে আমার জীবন টার আজ এই হলো। কিছু হলোনা লাইফ তা হেল হয়ে গেলো তুমি সময়ের আগেই ডিম ভেঙে ফেললে। মা ও দুঃখী ইশ এ কি করলাম সত্যি -ই অরুণ অনেক ট্যালেন্টেড হয়ে জন্মানোর কথা ছিল সেখানে কিনা সূর্যের ড্রাইভার হয়ে সারা জীবনটা কাটাতে হলো যাইহোক বিনতা আর অন্য ডিমটা ভাঙলো না। ঠিকঠাক সময় পরে সেই ডিম ফুটে গরুড় বেরোলো এবং বিষ্ণুর খাস পাইলট।

যাই হোক অরুণ তো এবার চাকরি করছে সূর্যের। রোজ সময় মতো বেরোয় সূর্যের রথ নিয়ে কিন্তু একদিন একটা কেস হয়ে গেলো। অরুণের গাড়ি বের করতে দেরি হয়ে গেলো। সূর্য তো ওদিকে পায়চারি করছে আর ঘড়ি দেখছে। আরে একি কাণ্ড আমি সময় মতো না বেরোলে জগত সংসার তো ঘুমিয়ে থাকবে। ভোর হবে না। অ্যালার্ম বাজবে না। সূর্য তো অস্থির। দাড়া ব্যাটাকে আসতে দে আজ।। এমন সময় অরুণ এলে ।

-সরি স্যার লেট হলো।

-ন্যাকামো আর না করে এখন তাড়াতাড়ি আগে রথ বের কর। পরে শুনছি।

তো পরে যখন সময় হলো তখন সূর্য ডেকে পাঠালেন। -হ্যাঁ রে তোর কি ব্যাপার বলতো? তুই তো কখনো এমন লেট করিস না! কি অসুবিধে? মায়ের অসুখ না ঝি-চাকর? দেবতারা কেউ মিথ্যে বলেন না। অরুণও বলল না।

-আজ্ঞে সে সব কিছু নয়। অন্য ব্যাপার।

-কি ব্যাপার খুলে বল। অরুণ তো মনে মনে ভাবছে বলে দি? ইশ কি ভাববে কে জানে?

– ওরে নিশ্চিন্তে বল।

এবার ঝুলি থেকে বেরোলো আসল বেড়াল। এই বোধয় পৃথিবীর প্রথম কাম আউট

-দেখুন স্যার আমি না একটু অন্য রকম। আমি মেয়ে সাজতে ভালোবাসি

-মানে??

-হ্যাঁ!

-হয়েছেটা কি খুলে বল।

এবার অরুণ বলতে শুরু করলে ছোটবেলা থেকেই তার খুব ইচ্ছে করতো মেয়ে সাজবে। মেয়েদের পোশাক পরবে। মেয়েদের মতো কলাবিনুনী ঝুলিয়ে পায়ে আলতা নাকে নথ কোমরে বিছেহার গলায় সাতনরি। তারপর ছমছম করে কোমর দুলিয়ে সগ্গে গিয়ে মুজরো করবে

-ইন্দ্রসভায় আরকি। রম্ভা-মেনকারা হায় হায় করতে থাকবে আর দেবরাজ হা—য় করতে থাকবে কিন্তু অ্যাদ্দিন সে আর হয়ে উঠতো নি।

কাল সে সুযোগ এলে। অরুণ নাকি কোত্থেকে খবর পেয়েছে সগ্গে সব অপ্সরা ফুলের সাজ করে নাচবে সারারাত দেবরাজ ছাড়া আর কোনো পুরুষ অ্যালাও না। কেউ থাকবেনি। অরুণের তো খুব ইচ্ছে হলো। সে নাচতে নাচতে সগ্গে ‘নাচতে’ গেলে। ‘ইন আখো৺কি মাস্তি কি মাস্তানে হাজারো হ্যা’

এতো নিখুঁত বোধয় মিস প্রিয়ম্বদাও নয়। মিস গোবিন্দাও নয়। কমল চাচীও নয় রবিন উইলিয়ামসও নয়।

রম্ভা- মেনকা তো ভাবছে এ আবার কে এলে গা আমাদের বাজার মারতে?

দেবরাজ পর্যন্ত অজ্ঞান -কে এই মেয়েটা হায় হায় হায় । চিস সহিমে বড়ি মস্ত মস্ত। ক্যা মাল হ্যায়।

লাল গড়ানোর আগেই উনি ভেতর ঘরে গেলেন। ডেকে নিলেন মেয়েটাকে। এবার তো অরুণের ভয়। সেকি? ধরা পরে যাবো গা! 🙁 এবার কি হবে? :(সে সব খুলে বললে -মহারাজ প্লিজ ছেড়ে দিন। আমি মেয়ে নই ছেলে। আমি অরুণ। খুব ইচ্ছে ছিল ঘোমটা পরে খেমটা নাচার। তাই এসেছিলাম। ৮-১০ পেগের ঢুলু ঢুলু চোখের দেবরাজ কি আর সে কথা শোনে? যা হবার তাই হলো। অরুণ মু দিখানে কি কাবিল না রহি। ফলতঃ পরদিন সকালে উঠতে দেরি। কেন যামিনী না যেতে জাগালে না।

এদ্দুর শুনে রোদ্দুর মানে সুরজ তো হা? আস্ত সুজ্জি ঢুকে যায় মুখে।

অরুণ তো দাঁড়িয়ে আছে শাস্তির জন্যে। সুজ্জি বললে আমাকেও মেয়ে সেজে দেখাও না প্লিজ। অরুণ তখনি যা বোঝার বুঝে গিয়েছে তবু কিনা সেজে দেখালো। গান শোনাও বললে কে না গায় 😛 । ঠিক সেরম নাকে নথ কানে ঝুমকো গলায় মালা। দেখেই সূর্য বললে ভাবতেই পারছিনা এতো সুন্দর !! বুকে এসো। সূর্য মিলন প্রার্থনা করলেন। অরুণের তো পোয়া বারো একসাথে দুটো পারিক উঠলো। চাকরি ঠেকাতে গেলে ওরম একটু আধটু বসের কথা শুনতে হয় .. সে সব আমরাও বুঝি :/

ব্যাংককে ওয়াট অরুণ বলে একটা বৌদ্ধ মন্দির আছে যেটা কিনা মনে করা হয় হিন্দু দেবতা অরুণের উদ্দেশ্যে একচুয়ালি।

[ছবিঃ ভুটান]


1 comment on “অরুণ

  1. Pingback: কালিজা ২০১৮- সূচীপত্র - কাঁচালঙ্কা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *