গেলমানের গল্প

[শুরুর আগেঃ

অনিন্দ্যর সাথে আলাপ খুব পুরনো নয়। কিন্তু মাটির কাছাকাছি মিশুক মানুষটি খুব সহজেই জিতে নিতে পারে বন্ধুত্ব। এখন তো রীতিমত চিন্তা হয় যখন শুনি ওর শহরে সমকামী হওয়ার সন্দেহে কিছু লোক ওর পিছু নিচ্ছে, যখন জানতে পারি ও শহর পাল্টাচ্ছে। সেদিন বললো কি একটা পার্টীতে যাবে, সেটা শুনেও ভয় পেয়েছিলাম। অনেক চ্যালা/ভক্তদের কাছেই ও মাসী, এই নামেই ও সচ্ছন্দ। অনিন্দ্য, জানি তুমি খুব ডানপিটে, তবুও বলবো সাবধানে চলাফেরা করো। তোমার আন্দোলন চলুক, কিন্তু চোড়াগোপ্তা পথে, ছদ্মনামে। আমরা সত্যিই আরেকটা চাপাতির আঘাত নেওয়ার জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। বিঃ দ্রঃ লেখকের নাম, ছদ্মনামে।]

গেলমানের গল্প

অনিন্দ্য অ্যাঞ্জেল

 

প্রতিদিনের আর দশটা সকালের মতই আজকের সকালেও রাশেদের ঘুম ভেঙ্গেছে হোটেলের বিছানায়৷ পাশে পঞ্চাশোর্ধ ব্রিটিশ ভদ্রলোক মিঃ জেমস (Mr. James) তখনও ঘুমিয়ে৷ গাল বেয়ে লা লা পড়ে বালিশের কিছুটা অংশ ভিজেও গিয়েছে৷ মনে হচ্ছে নিষ্পাপ একটা বাচ্চা৷ নিঃশ্বাসের সাথে একটা বাজে আঁশটে গন্ধ বেরিয়ে আসছে৷ দাঁত ব্রাশ করেনি হয়তো ঘুমানোর আগে৷ রাশেদের দু’পায়ের সাথে তাঁর দু’ পা সাপের মত প্যাঁচ লাগানো অবস্থায় রয়েছে৷ ওদিকে ভোরের আলো ফুটছে৷ উত্তরার বিমানবন্দর রোড (ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক) চব্বিশ ঘন্টাই ব্যস্ত থাকে৷ কত যে গাড়ি চলাচল করে তার ইয়ত্তা নেই৷ আসলে তিলোত্তমা ঢাকা শহর কখনই ঘুমায় না, ঠিক রাশেদের মতই৷ রাশেদও গত তিন বছর ভাল মত ঘুমাতে পারেনি৷ গতরাতেও তার ভাল ঘুম হয়নি৷ হবেই বা কি করে সাহেবদের মনোরঞ্জন করাটাই তার কাজ৷ তাই তো তাকে রাত জাগা পেঁচার মত তার দায়িত্ব পালন করতে হয়৷ হ্যাঁ, রাশেদ একজন কলবয় (Call Boy) বা এস্কোর্ট ( Escort). সহজ বাংলায় বললে “পুরুষ পতিতা”৷ ধনী পুরুষদের সঙ্গ প্রদান, তাদেরকে মনোরঞ্জন করা, বিনোদন দেওয়া এবং সর্বোপরি তাদের যৌনক্ষুধা মেটাতে তার শরীরকে বিলিয়ে বেড়ানোটাই তার পেশা ও আহার-রুজি-রোজগারের একমাত্র মাধ্যম৷ অনেকে তাকে “সমকামী দেহব্যবসায়ী” বলে৷ আবার অনেকে বলে “সমকামী যৌনকর্মী”৷ ইসলামী পরিশব্দ অনুয়ায়ী সে একজন “গেলমান”৷ “গেলমান” আরবি শব্দ৷ শুদ্ধ বাংলায় এর অর্থ “প্রমোদ বালক”৷ এনজিওকর্মীরা তাকে বলে “MSW” (Male Sex Worker). যে যাই বলুক, দিন শেষে সমাজের কাছে সে একজন অন্ত্যজ, ব্রাত্যজন, দলিত, সংখ্যালঘু, এ্যাবনর্মাল (Abnormal), মাইগ্গ্যা, মেয়েলী পুরুষ, প্রান্তিক, ঝুঁকিপূর্ণ দেহোপজীবী এবং সর্বোপরি এক নষ্ট সমকামী ছেলে বেশ্যা৷ ঢাকার গে কমিউনিটির অনেকে তাকে ঈর্ষা করে বলে, “slut”, “whore”, “prostitute”, “bitch”, “ধূরানী মাগী”, “কাচ্চিখোয়াড়ী কোতি”, “বেলখুড়া কোতি”, “নডী মাগী”, “রেন্ডি”, “খানকি”, “খাইখুড়া কোতি মাইগ্গ্যা” ইত্যাদি৷ অনেকে হয়তো তাকে নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, নিন্দা, কুৎসা, গল্পগুজব, কানাঘুষা এমনকি গবেষণাও করে৷ কিন্তু তাতে তার যায় আসে না বিন্দুমাত্র৷ যে যাই বলুক না কেন, সে যা করছে সেটাতে সে কাউকে ঠকাচ্ছে না বা ক্ষতি করছে না৷ যা করছে পেটের তাগিদে করছে, দেহের তাগিদে নয়, কিংবা মনের তাগিদেও নয়৷ বেঁচে থাকতে হলে কিছু তো একটা করতেই হতো তাই না? কিন্তু কিই বা করতে পারতো সে? এই তো সবে ইন্টার বা এইচএসসি (উচ্চ মাধ্যমিক) পাশ করলো সে৷ বাবা-মা এবং পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব জেনে গেল যে সে গে – সমকামী৷ ব্যাস, যা হবার তাই হলো, ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল ঘর থেকে৷ সেই থেকে তার যাত্রা শুরু৷ এই যাত্রা হলো যাযাবরের যাত্রা৷ এই যাত্রার কোন গন্তব্য নেই৷ এই যাত্রার কোন শুরু নেই, শেষ নেই, Random ভাবেই চলছে৷ শুধুই চলছে৷

 

কিভাবে তার বাবা-মা বা অন্যরা তার সম্পর্কে জেনেছিল এবং কেন তাকে ঘর থেকে বের করে দিল সেটা আজকে না হয় নাই বললাম, কারণ সেটা আবার বিশাল ইতিহাস যা শুরু করলে শেষ করা মুশকিল৷ তবে প্রেম-ভালবাসা সম্পর্কিত কিছু ঘটনার যেরেই সবকিছুর সূত্রপাত৷ আচ্ছা পৃথিবীতে ভালবাসাই কি সব? রিলেশন বা সম্পর্ক করাই কি সব? কিংবা শুধু সেক্স করাটাই মূখ্য? শুধু ভালবাসায় পেট ভরে না, বাস্তবতা অনেক কঠিন৷ যারা ভালবাসা, ভালবাসা করে চিৎকার করে, তাদের প্রেমবিলাসী মন হয়তো বলিউড মুভি কিংবা বাংলা সিনেমা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকবে৷ কিন্তু পরিবার কর্তৃক ত্যাজ্য রাশেদের ক্ষেত্রে সে সব প্রযোজ্য নয়৷ রাশেদের তেমন কোন যোগ্যতা ছিল না৷ সে কখনও পুরান ঢাকার বাইরে কোন জগৎ আছে সেটাই জানতো না, বইমেলায় গিয়ে কিছু ভাল বই কিনে পড়া সেটা তো কল্পনার বাইরে৷ টিপিক্যাল (Typical) ঢাকাইয়া কুট্টীরা যেমন হয় আরকি! শুধু বন্ধুবান্ধবদের সাথে এলাকার মধ্যে আড্ডা দেওয়াটাই তার জগৎ ছিল৷ বড়জোড় বঙ্গবাজার বা গুলিস্তানই ছিল তার শেষ গন্তব্য৷ বন্ধুরা বলতো; “ল মামা, ল যাই, সদরঘাটের তন ঘুইরা আহি”৷ রাশেদের আর কোন গুণ বা যোগ্যতা থাক বা না থাক, একটা যোগ্যতা বা দক্ষতা তার ছিল বা আছে, সেটা হলো ভাল ইংরেজী বলার দক্ষতা যা সে আরমানীটোলার সেন্ট গ্রেগরী’স স্কুলে পড়া কালীন শিখেছিল আর দ্বিতীয়টি হলো ইন্টারনেট প্রযুক্তি সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা, যা সে এসএসসি (মাধ্যমিক) পরীক্ষার পর একটা কম্পিউটার কোর্স থেকে শিখেছিল৷ রাশেদের পুরো পরিবার খুব খুব খুব রক্ষণশীল যেমনটা বেশীরভাগ ঢাকাইয়া কুট্টীদের মধ্যে দেখা যায়৷ সে যাকগে, অতিসাধারনীকরণের (Broad Generalization) দিকে যাবো না৷ মূল কথা হলো, বাঁচার তাগিদে রাশেদকে এ পথে নামতে হলো, বিলাসীতা করবার জন্য নয়, কিংবা ঢং করে বাংলিশ বলবার জন্য নয়৷ তার ভাগ্য ভাল যে সে কোন হিজড়াগুরুর পাল্লায় পড়েনি৷

 

জনসন রোডের বিরিয়ানী রাশেদের খাওয়া হয় না সে অনেকদিন হলো৷ বিকেলে দুধ চায়ের সাথে বাকরখানিও খাওয়া হয় না তার৷ সারাদিন শুধু পাস্তা, স্যুপ, ইতালিয়ান, ফ্রেঞ্চ, চাইনিজ, সিচুয়ান, থাই, ইন্ডিয়ান, শর্মা, পিজা ইত্যাদি হাবিজাবি খেয়েই কাটাতে হয় তাকে৷ আর রাতে হুইস্কি, জিন, ভদকা ইত্যাদি ছাইপাস৷ মূলতঃ তার ক্লায়েন্ট বা সেবাগ্রহীতারা যা তাকে খাওয়ান, সেগুলোই তাকে খেতে হয়৷ খাবারের জন্য বাড়তি পয়সা তাকে কেউ দেয় না৷ অতএব, কম্প্লিমেন্টারী (Complementary) হিসাবে যে  মাগনা খাবার সে পায় সেগুলোই উদরস্থ করে৷ শেষবার কবে যে সে সাদাভাত আর ইলিশ মাছের ঝোল খেয়েছে তা এখন আর তার মনে পড়ে না, শুধুই ইতিহাস হয়ে রয়েছে, বিশেষ করে মায়ের হাতের রান্না! চকবাজারের বিখ্যাত ইফতারী আইটেমগুলোও খাওয়া হয় না তার৷ গুলশান, বনানী, বারিধারা, বসুন্ধরা, নিকুঞ্জ, নিকেতন, উত্তরা, বিভিন্ন ডিওএইচএস (DOHS) এলাকাগুলো এবং বড় বড় হোটেলগুলোতেই রাত কাটে তার৷ উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে অবশ্য সে বাসা নিয়েছে, কিন্তু থাকা হয় না তেমন একটা, শুধু দৌঁড়ের উপরেই থাকতে হয় তাকে, যেখানে রাইত সেইখানেই কাইত৷ জনসন রোডের গলিগুলো, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, আরমানী টোলা, নারিন্দা, বংশাল, সদরঘাট, লালবাগ, সোয়ারীঘাট, গেন্ডারিয়া, চকবাজার ইত্যাদি পুরান ঢাকার এলাকা ও রাস্তাঘাটগুলো এখন ফিকে হয়ে গেছে তার স্মৃতিপটে৷ Rashed (রাশেদ) হয়ে গেছে Rash (র-এ্যা-শ)৷ বাংলা মাতৃভাষা হলেও খুব একটা ব্যবহার করা হচ্ছে না তার ইদানীং, ইংরেজীটাই হয়ে উঠেছে তার প্রাথমিক ভাষা৷ আর পুরান ঢাকায় যে কুট্টী উপভাষা বলতে বলতে শুনতে শুনতে সে বড় হয়েছে সেটাও অনেকটা ভুলতে বসেছে সে৷ বাংলা বলতে গেলে পুরাই জগাখিচুড়ীমার্কা বাংলিশ বলে ফেলে সে৷ অবশ্য ফঁরাসীবাবুদের কাছ থেকে দু’ একটা ফঁরাসী শব্দও শিখে নিয়েছে সে কাজ চালানোর মত; যেমন ধরুনঃ Bonjour (বঁ জোর),  Baise Moi (বেইজে মোয়া), Je t’aime (জ তেইম) ইত্যাদি৷

 

হোটেল রুমের বন্ধ চার দেওয়ালের মধ্যে নরম তুলতুলে বিছানার ওপরে শুয়ে থাকতে থাকতে ছাদের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রাশেদ৷ একটু কল্পনার রাজ্যে চলে যায় সে৷ সে ভাবতে থাকে আর মনে মনে বলতে থাকে; “ইশ! যদি সত্যি জীবনে বিশেষ কোন একজন নির্দিষ্ট ও স্থায়ী ভাবে থাকতো, যে কিনা আমায় অনেক ভালবাসতো?! তাহলে আর এসব নষ্টামী করতাম না৷ আল্লাহ যে আমারে কত পাপ দিতেসে! দিক গা পাপ, পেট না ভরলে পাপ দিয়া কি হবে?! বালের পাপ! জান বাচানো ফরজ৷ না, সত্যই একজন স্পেশাল বয়ফ্রেন্ড থাকলে ভাল হইতো৷ দূর, কি সব ভাবি আমি৷ না থাকলেও ক্ষতি নাই, স্বাধীনতা তো আছে, আর কিছু না থাকলেও৷ এইসব ভাইবা কাম নাই, এখন বাইর হবো৷ মায়া বাড়ায়া কাম নাই৷ বালের মায়া-মহব্বত৷ Fucking fucked up life. All are motherfuckers bastards! মাল ফেলানোর পর সব পিরীত শ্যাষ, বাল! সব নডীর ঘরের নডীর পোলারা!”

 

একটু পরেই তাকে তৈরী হয়ে নিতে হবে৷ সকাল ৮টায় গোরাসাহেব বেরিয়ে পড়বেন৷ তার আগেই তার পাওনা পেমেন্ট নিয়ে উবার ডেকে কেটে পড়তে হবে রাশেদকে৷ দুপুর ১টায় একজন ক্লায়েন্টের সাথে লাঞ্চ করতে হবে৷ পরবর্তী গন্তব্য Raddison Blu Hotel. সেখানে অবস্থানরত মিঃ বব (Mr. Bob) আমেরিকান ভদ্রলোকের সাথে থাকতে হবে পুরোটা দিন৷ ওদিকে ঢাকার রাস্তাঘাটে যে ভয়াবহতম যানজট তার কথা মনে পড়লেই গা গুলিয়ে ওঠার যোগাড়৷ রাতে তাকে বডি ম্যাসাজ করতে হবে, তাই কিছু জিনিস কিনতে হবে তাকে৷

 

এখন রাশেদের ভরা যৌবন৷ এই যৌবনই তার একমাত্র সম্পদ৷ কিন্তু আগামী দশ কিংবা বিশ বছর পরে তার যৌবন থাকবে না, তখন তার কি গতি হবে? কে থাকবে তার পাশে? এদেশে সমকামিতাকে একটি গুরুতর অন্যায়, অপরাধ, মহাপাপ, প্রতিবন্ধিতা, মানসিক বিকার, রুচী-বিকৃতি, চরিত্রগত সমস্যা বা লাম্পট্য কিংবা ব্যভিচার, বহুগামীতা, পরকীয়া ইত্যাদি হিসাবে গণ্য করা হয়৷ রাষ্ট্র, ধর্ম, আইন-আদালত, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র এমনকি সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক পরিমন্ডলে এবং বন্ধুমহলেও নিন্দনীয় ও ঘৃণ্য হিসেবে বিবেচ্য হয় সমকামিতা, উভকামিতা এবং রূপান্তরকামিতার মত বিষষগুলো৷ রাশেদ একে তো গে (Gay) সমকামী বটম (Bottom), তার উপর আবার কলবয় টাইপের, তাই তাকে ঘৃণা করার মত লোক প্রচুর৷ সে যদি উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্ম নিত তাহলে হয়তো বিদেশে পাড়ি জমাতে পারতো৷ কিংবা যদি বিভিন্ন এনজিওর সাথে কাজ করে এলজিবিটি এ্যাক্টিভিস্ট (LGBT Rights Activist) অথবা দু’টো নাস্তিক্যবাদী ব্লগ লিখে ব্লগার হিসেবে নিজেকে জাহির করতে  পারতো তাহলে হয়তো এ্যাসাইলাম ভিসা (Asylum Visa) নিয়ে ইউরোপে পগারপার হতে পারতো৷ কিন্তু ব্লগ লেখার মত সময়, ধৈর্য্য, গুণ, জ্ঞান ইত্যাদি কিছুই তার নেই৷ কিংবা সে যদি খুব উচ্চ শিক্ষিত হতো তাহলে তাকে হয়তো এই পেশায় নামতে হতো না৷ হয়তো খুব ভাল বেতনের একটা চাকরী পেতো৷ হয়তো স্কলারশীপ (Scholarship) নিয়ে বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে আর ফিরে আসতো না বাংলাদেশে, যেমনটা বেশিরভাগ বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীরা করে৷ হয়তো ভাল একজন মালদার সঙ্গী পেয়ে যেতো সে এবং সেই ব্যাটাকে বিয়ে করে (গে ম্যারেজ – Gay Marriage) সিটিজেনশীপ বা স্থায়ী নাগরিকত্ব পেয়ে যেত, আর ফিরে আসতো না এই হোমোফোবিক (Homophobic) দেশে৷ অথবা গে এ্যাক্টিভিস্ট হিসাবে বা এনজিও কর্মকর্তা হয়ে বিদেশে সেমিনার বা কন্ফারেন্সে গিয়ে পালিয়ে যেতো, আর ফিরে আসতো না৷ কিন্তু সে সব যোগ্যতা তো নেই তার৷ তাহলে কি করবে সে? কিংবা ভবিষ্যতে টাকা না থাকলে কিভাবে বাঁচবে? মালদার ধনী বয়ফ্রেন্ড পাবে কোথায় যার ঘাড়ে বসে খাবে সে? এসব নানা বিষয়, নানা প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরপাক খায়৷ বেশ্যা কিংবা নটী হলেও সেও তো মানুষ, তারও একটা প্রেমের কাঙ্গাল মন আছে, কিছু স্বপ্ন আছে, কিছু কল্পনা, কিছু দিবাস্বপ্ন এবং ইচ্ছা বা আবদারও আছে৷ গে কলবয় বলে কি সে মানুষ নয়? কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার সময়ও তার নেই৷ সে বাঁচে প্রতি বেলার আয়ের উপর নির্ভর করে৷ মাসে সঞ্চয় করতে পারেই না বললে চলে৷ রূপচর্চা, শরীরচর্চা, পোষাকাদি কেনা, ইন্টারনেট বিল, মোবাইল বিল, যাতায়াত ইত্যাদি করতে করতেই সব টাকা শেষ হয়ে যায়৷ এই বেলা টাকা আয় করলে আরেক বেলায় শেষ হয়ে যায়৷ অতএব, পরবর্তী বেলায় সে কোথায় যাবে, কি করবে, কত আয় করবে এগুলোর মধ্যেই মনের ভাবনাগুলোকে সীমাবদ্ধ করে রাখতে হয় তাকে, মন-মগজ-আবেগকে লাগাম দিয়ে টেনে ধরে রাখতে হয়৷ কিছু কিছু মানুষ সুখ-শান্তি-ভালবাসা-স্বাধীনতা ভোগ বা উপভোগ করতে পৃথিবীতে আসে না৷ কিছু ফুল ফুলদানীতে স্থান পেতে ফোটে না৷ রাশেদ হয়তো সেই কাতারেই পড়ে?!

 

হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে ওদিকে ঘড়ির কাঁটা প্রায় পৌনে সাতটায় গিয়ে পৌঁছেছে৷ এবার সত্যিই তাকে তৈরী হতে হবে বেরিয়ে পড়ার জন্য৷ আজ সকাল থেকেই বেশ পিটপিট করে বৃষ্টি পড়ছে আর মৃদু ঠান্ডা বাতাস নিদ্রালু ও আবেগাপ্লুত করে ফেলছে তাকে৷ সে মনে মনে ভাবে এসব বুড়ো গোরা সাহেবগুলো বড্ড নিঃসঙ্গ, তাদের দেশের যুবকদের কাছে পাত্তা পায় না বলে বাংলাদেশের পোলাপানদের পিছনে টাকা উড়িয়ে একটু ফুর্তি করে, একটু মজা নেয়৷ কিন্তু ওদিকে আবার স্বাধীন থাকতে চায়, কোন রিলেশন কিংবা কমিটমেন্টে থাকতে যেতে চায় না৷ আচ্ছা, স্বাধীন থাকাটা কি ভাল? নাকি একটা সত্যিকার রোমান্টিক প্রেমের সম্পর্ক ভাল? সে নিজেকে প্রশ্ন করে৷ তার উত্তর সে নিজেই দেয়; “দু’টোই ভাল”৷ মিঃ জেমসের (Mr. James) ঘুমন্ত মুখটা এতই স্নিগ্ধ লাগছে এই মুহুর্তে যে সে একটু ক্রাশ খায়, একটু আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে৷ সে মনে মনে আকাঙ্খা করে মিঃ জেমস যদি একটিবার তাকে বলতেন; “Please don’t go today, love. Stay with me in my arms.” ??!!

[ছবিঃ ভুটান]


 

1 comment on “গেলমানের গল্প

  1. Turaak

    জীবন অদ্ভুদ, বড্ড imperfect। তবুও জীবনকে চালিয়ে নিয়ে যেতে হয়। শত কষ্টের মাঝেও একটুখানি সুখ, আনন্দ খুজে নিতে হয়!

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *