অহংকার — প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী (ইচ্ছে)

+-o অহংকার o-+

— প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী (ইচ্ছে)


শুরুর আগেঃ আমাদের সবার প্রিয় ইচ্ছে ডানা, ৩৭৭ সরে যাওয়ার পর আনন্দ-বিহ্বল। নিজের মনের কথা লিখে ফেললো কবিতার রঙে, কিছুটা কল্পনা, কিছুটা বাস্তব, কিছুটা আনন্দ, কিছুটা অভিমান। ৩৭৭ ঘিরে হাজার লেখার ভিড়ে এই লেখাটাও থাকুক নাহয় আমাদের অনুভূতিতে উঁকি দিয়ে যাওয়ার জন্যে। 🙂

— কাঁচালঙ্কা


“টিকলি টায়রা চন্দনের টিপ মল বধূবেশে সাজানো বসুধা,
বসুধার পরিচয় সে রক্ষণশীল যৌথ পরিবারের আত্নজা,
বসুধার আরেকটা পরিচয় বসুধা সমকামী;
সেও ভালোবাসে পাশের বাড়ির কাজের ছেলেগোছের মেয়েটাকে;
ভালোবাসে!! না ভালোবাসতো!! নাকি ভালোবাসা ছিল অথবা বাধ সাধলো দৃষ্টিভঙ্গি ঐ যোনির সাথে যোনির মিলন!!!
মনের অনুভূতিগুলো যোনিচ্ছেদ করে যদি দেখাতে পারতো,,,,,,,,
বসুধা জানেনা—–
শুধু শুনতে পাচ্ছে ঘড়ির টিকটিক শব্দে এগিয়ে আসছে প্রজাপতির লগ্ন;
৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹
সেই প্রথম দেখা তার সাথে সকালে যখন বসুধা কলেজ যেতো;
কালো মুখ মাথার চুলগুলো ছোটো করে ছাঁটা বাইকে করে জল দিতে আসতো;
প্রথমদিন—বসুধা ভাবতে পারছেনা—–
এগিয়ে আসছে বিয়ের লগ্ন;
রোমকূপ খাঁড়া হলো মগজের রিলের সাথে অনেকটা পিছনে যাওয়া ॥॥॥॥॥
বসুধা খুঁজে বের করেছিলো মেয়েটার নাম সম্মোহনা;
মেয়েটা থাকে পাশের বস্তিতে,
বসুধা ভালোবাসার প্রয়োগ ঘটালো লজ্জার সূত্র প্রয়োগ করে,
সেদিন সম্মোহনা সম্মতি দেইনি,
আর বসুধা তাকিয়েছিল সম্মোহনার চোখে শাসনের নজরদারিতে;
সম্মোহনার নভোনীল জামাতে মাথা রেখে বলেছিল সব হয়ে—-
ওদের দুজনের ভালোবাসা এগিয়েছিলো পবমান রজনীজলের মাঝে ভাসমান শম্বুকে ভর করে,,,,,,
৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹
তবে কী বসুধা আর পাঁচটা মেয়ের মতোই বিয়ে করে নেবে!!
আর পাত্র তো বাবা ভালোই বেছে দিয়েছে–
এই দিনকালে বিছেহার দিয়ে আশীর্বাদ করেছে পাকাদেখার দিন,
আর সম্মোহনার তো ঐ পার্ক আর প্রিন্সেপ ঘাট—–
গাধাটা চুমু খেতেও জানেনা মুখের মধ্যে ঠোঁটটা নিয়ে উফ্ অসহ্য একটা!!
হ্যাঁ মাঝেমধ্যে বকশিস পেলে চকোবার খাওয়াতো,
আর বসুধার পুরুষ জীবনসঙ্গীটি ব্যাঙ্কে কর্মরত,
মাস গেলে মোটা মাইনা উপরি পাওনা রুচিশীল পরিবার,
দোষের মধ্যে একটাই ড্রিঙ্ক করে ভীষণ,
আগে থেকেই বলেছে ওটা ছাড়তে পারবেনা,
বন্ধুরা বলেছে “আরে সোনার আঙটি আর মদ খেলে খাক না বিছানায় যে সুখ থাকে মদের নেশায় তুইও পেগ মারবি কিছুদিন পর” ,
কিন্তু বসুধার আপত্তির পর সম্মোহনা সব নেশা ছেড়েছিলো,
এমনকী গুটখা খাওয়াটাও;
৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹
বাইরে রব উঠলো বর এসেছে বর এসেছে,
নাহ বসুধা পারবেনা সম্মোহনাকে ফোন করতে হবে,
বিহারি কাকা বলেছিলো মানুষটা আবার ঐ ছাইপাশ খাচ্ছে,
কিন্তু ফোনটা বড়দা কেড়ে নিয়েছে,
আর এডুকেশন সার্টিফিকেট গুলো সেগুলো তো বাবার কাছে;
লহমায় বসুধা গেলো বাবার ঘরে এদিকটা এখন কেউ নেই;
দেরাজ থেকে নিজের সব কিছু নিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো বসুধা;
দৌড়াতে পারছেনা নিঃশ্বাস নিঃসঙ্গ হয়ে যাচ্ছে
দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে—-
নাহ হারবেনা বসুধা আর হারতে দেবেনা ভালোবাসাকে
৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹
তিনবছর পর:-
আজ বসুধা আর সম্মোহনার চোখ নিবদ্ধ বোকাবাক্সে,
বোকাবাক্স আজ বোধিবৃক্ষের ন্যায়ে সমাচার শোনাচ্ছে নাকি তাদের বোকা বানাচ্ছে;
সেই ই রাতের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে দুজনেরই;
আলুথালু বেশে এসেছিল বসুধা বিয়ের সাজে;
সম্মোহনা মাতাল ছিল কষ্ট আর অভিমানে;
তবু বুঝতে পেরেছিল পরবর্তী ঘটনাক্রমগুলো,
তাই বসুধাকে নিয়ে জিনিসপত্র গুছিয়ে কলকাতা থেকে সোজা বোম্বে;
তারপর দীর্ঘদিন কষ্টে গুজরান তারপর বসুধার চাকরি সম্মোহনার একটা ছোট্ট জলের ফার্ম,
কত লড়াই—–
বসুধাকে ত্যাজ্যকন্যা করেছিল তার পরিবার;
তবে এই ক’বছরে সম্মোহনা বসুধাকে সকালে উঠে হামি খেতে খেতে চুমু খাওয়াটা শিখে গেছে,,,,
কত লড়াই——
আর আজকে টিভির ভিতর ছেলেমেয়েগুলো কী আনন্দ করছে;
একে অপরকে যেই হামি খাচ্ছে সম্মোহনা বসুধা কে বলছে আমিও পারি হামি খেতে কী বলো?!!!
বসুধা বলে উঠলো “যাচ্ছেতাই একটা! অসভ্যের চূড়ান্ত!!!!”
সম্মোহনা বসুধা দুজনেই টিভির দিকে তাকালো;
আবির উড়ছে হাওয়ায় যেনো বসন্তের অকালবোধন;
সুপ্রিমকোর্ট হটিয়ে দিয়েছে তিনশো সাতাত্তর;
বসুধা আর সম্মোহনার এককামরার ছোট্ট নীড়টায় আজ ভীষণ আনন্দ;
বসুধার ইচ্ছে হচ্ছিল বাড়ীতে ফোন করার কিন্তু সে যে ত্যাজ্যকন্যা——-
বসুধা সম্মোহনার কানে কানে বলে উঠলো
“এই যে মশাই আজ রাতে নাইট ডিউটি আহেম আহেম”
সম্মোহনা বললো “লজ্জা লাগছে,,হুমমম তাড়াতাড়ি চলে আসবো”
বসুধা বলে উঠলো “সিংহ বলে উপোস করবে”,,,,,,,
সম্মোহনা আর বসুধা আজ বাঁধভাঙা সঙ্গম করবে,
আদরের পর বসুধা আজ অনেকটা কাঁদবে
তবে কান্নাটা হবে জিতে যাওয়ার
কান্নাটা হবে বসুধার আর সম্মোহনার অহংকারের।।।।।
৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹
লিখিত অভিযোগ:-
“জানে ও ক্যায়েসে লোগ থে জিনকো!
প্যায়ার সে প্যায়ার মিলা,
হামনে তো যাব কালিয়া মাঙ্গি কাঁটো কা হার মিলা,,,,
জানে ও ক্যায়েসে লোগ থ জিনকো প্যায়ার সে প্যায়ার মিলা”।।।।।।।।”

ছবিঃ কবির নিজের আঁকা 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *