[শুরুর আগেঃ
বন্ধু ড্যানিয়েল কাঁচালঙ্কার পাতায় সাড়া দিয়ে এই লেখা পাঠিয়েছিলেন আমাদেরকে। তার উদ্দেশ্যে এটুকুই বলার, সূর্য একদিন উঠবেই বন্ধু, শান্তির। শুধু অপেক্ষায় থাকো। আর যোগাযোগ রেখো। বিঃ দ্রঃ লেখকের নাম, ছদ্মনামে। বাস্তব কিছু চরিত্রের ছোঁয়াচ থাকলেও এই গল্পের ঘটনাপ্রবাহ সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কোন হিংসা অথবা বিদ্বেষমূলক বেআইনি কর্মকান্ডকে প্রশ্রয় দেওয়া নয়, সমাজ-অস্বীকৃত সমান্তরাল লিঙ্গ-যৌন-পরিচয়ের মানুষদের প্রতি রাষ্ট্র এবং প্রশাসনের অবহেলা আর নিঃস্পৃহতার বিরুদ্ধে এই গল্প, এক সোচ্চার প্রতিবাদ।]
প্রতিজ্ঞা
জনি ড্যানিয়েল
।। ১ ।।
অনেকদিন থেকে আমি উদভ্রান্তের মত রয়েছি।
কলাবাগানের আসিয়া ভবনের সামনে ঘুরঘুর করে ঘুরে বেড়াচ্ছি কয়েক মাস ধরে।
পইপই করে খুজেছি পুরোটা ঘর, তল্লাশি চালিয়েছি প্রতিটা ঘরের কোণে।
নাহ, খুনের কোন আলামত পেলামনা।
যেই জানালার কাছে খুন হয়েছিল,
সেই জানালার কাচে রক্তের দাগটা শুকিয়ে কালো দাগ হয়ে আছে।
জানালা দিয়ে তাকালে আসিয়া ভবনের সামনে একটা টং দোকান দেখা যায়।
দোকানটা বন্ধ।
যেদিন থেকে খুন হয়েছিল সেদিন থেকেই,
ব্যাপারটা সন্দেহজনক।
যাই হোক, দুটো লোককে খুন করার জন্য অন্তত কমপক্ষে দুজন লোক দরকার। দুজন এসেছিল তাহলে ঘরটায়।
লোক দুটো খুজছি কিন্তু খুঁজে পাচ্ছি না ।
খুজে পাবো কী করে?
কাজ করার পরই উধাও হয়ে গেছে।
সেদিন আসিয়া ভবনের দারোয়ানটাকে জিজ্ঞাস করলাম, হত্যাকারীদের কাউকে চিনে কীনা?
সে বললো, চিনেনা।
তবে আমাকে দেয়ালের একপাশে টেনে নিয়ে গিয়ে বললো,
টং দোকানের লোকটা চিনতে পারে, খুন হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকে ওর দোকানে দুটি লোক প্রায়ই আসতো।
***
রাস্তার পাশে একটা টং দোকানটা।
অনেকদিন অপেক্ষা পর আজকে খুলেছে। দোকানদার দোকানে বসে আছে।
অনেকক্ষণ লক্ষ্য করে তার দোকানের দিকে এগিয়ে গেলাম।
এক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে দোকানীর পাশে বসলাম,
আমি ম্যানিব্যাগ থেকে সাংবাদিকতার নকল আইডি কার্ডটা বের করে দোকানদারের চোখের সামনে ধরে নিচু গলায় বললাম, ‘আমি সাংবাদিকের লোক, আপনার সাথে জরুরী কথা আছে, আমাকে কয়েকটা তথ্য দিতে হবে।’
পড়ালেখা খুব একটা না করার কারণে আমার ভুয়া কার্ড ধরতে পারেনি, বরঞ্চ ভীত কন্ঠে বলল, ‘কি কথা স্যার? কী তথ্য চান?’
অশিক্ষিত লোকগুলো এমনি, সাংবাদিকদেরও ভয় পায়।
আমি বলি ‘চলেন আমার সাথে । এখানে বলা যাবেনা। আর আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই – আমি আপনার সমন্ধ্যে কিছু লিখবনা, কিংবা আমি আপনাকে কিছু করবনা।
দোকানের পিচ্ছি ছেলেটাকে ক্যাশে বসিয়ে আমার সাথে দোকান থেকে বের হয়ে আসে দোকানী। আমি লোকটাকে নিয়ে নিরিবিলি দেখে রেষ্টুরেন্টে বসি।
দুকাপ কফির অর্ডার দেই। দোকানটা নিরিবিলি হওয়ায় আমার কথা বলতে বেশ সুবিধাই হবে এখানে ।
‘আচ্ছা, মাসকয়েক আগে আপনার দোকানের সামনে ওইযে ভবন টা দেখছেন সেই ভবনে দুজন মানুষকে মারা হয়েছিল । মনে আছে আপনার?’ আসিয়া ভবনের দিকে নির্দেশ করলাম।
আমার কথা শুনে লোকটা বেশ ঘাবড়ে গেল,
কাচুমাচু ভঙ্গিতে হ্যা করে।
লেদারের ভাজে রাখা নকল রিভলভারটা কৌশলে ওকে দেখাই
‘এটা কোন সাধারন মারামারি ছিল না । এটা হত্যা। খুনের আগে দুতিন দিন আপনার দোকানে লোকদুটোকে প্রায়সময় চা খেতে দেখা গিয়েছিলো। খুনের পর থেকে লোকদুটোকে আর দেখা যায়না, আপনাকে আর পাওয়া যায়নি।
আমি দারোয়ানের মুখে শোনা কথাগুলো খুব জোর দিয়ে দোকানদারকে বললাম । আমার কথা শোনার পর দোকানদার লোকটার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে, সে ভয়ে কিছুটা চুপসে গেছে। ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি আবার প্রশ্ন করলাম, ‘মনে পড়েছে? বলতে পারবেন ঐ লোকগুলো কে? কোথায় থাকে? আপনার পরিচিত নাকি?’
সে আমার দিকে তাকিয়ে কাদো কাদো গলায় বলে, স্যার আমারে মাইরেননা,
আমার ঘরে বউ বাচ্চা আছে।
আমি ছাড়া ওদের আর কেউ নাই।
আমি যদি ওদের কথা বলি তাইলে আমারে মাইরা ফালাইবো।
আমি ওকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলি,
তোমার কিছু হবেনা। আমি ওদের বলবনা তোমার কথা।
আমার ভরসার ককথা শুনে লোকটা বলতে শুরু করে,
তারা আমার পরিচিত না । এই এলাকায় দেখি নাই এর আগে । খুনের চার পাচদিন আগ থেকে আমার দোকানে প্রায়ই চা খেতে আসতো, একজন আরেকজনকে সাল্লু আর জগলু বলে ডাকতো । কই থাকে, সেইটা কইতে পারি না । তয় একজনের ফোন নাম্বার আছে আমার কাছে ।
খুনের আগে আমাকে নাম্বার দিয়া বলছিলো, যে লোকদুটো খুন হইছে তাদের চলাফেরা লক্ষ্য করতে।
আমি কী আর জানতাম স্যার, ওরা দুইজন খুন হইবো, আমিতো ভাবছিলাম এমনি এমনি হয়তো।
বুঝলাম, লোকটার সরলতার সুুযোগ নিয়েছে খুনী দুটো।
সাল্লু আরর জগলু নাম দুটো ওদের ছদ্মনাম, কারণ, প্রফ্রেশনাল কিলার রা আসল নাম ব্যবহার করবেনা লোকসমক্ষে, তাও মিলিয়ে মিলিয়ে। তাই নাম্বার টাই নিতে প্রয়োজনবোধ করলাম ‘আচ্ছা ঠিক আছে । নাম্বারটাই দিন ।’ লোকটা তাঁর পকেট থেকে একটা ছোট্ট ডায়েরি বের করলো । এটাতে শত শত মানুষের ফোন নাম্বার লেখা । এতো মানুষের ফোন নাম্বার দিয়ে সে কি করে – আল্লাহ মালুম ! সেখান থেকে খুঁজে একটা নাম্বার আমাকে দেখিয়ে বলল, ‘এইটাই ওদের একজনের নাম্বার ।’ আমি নাম্বারটা আমার ফোনে তুলে নিলাম । এরই মধ্যে কফি এসে গেছে টেবিলে । আমি লোকটার দিকে কফির কাপ এগিয়ে দিয়ে বললাম, ‘নিন কফি খান । আর আমি যে আপনার সাথে এসব ব্যাপারে কথা বলেছি এটা যেন গোপন থাকে । নইলে আপনার সমস্যা হতে পারে ।’ ‘আইচ্ছা স্যার… কেউ জানবো না ।’ লোকটা ভয়ার্ত চোখ ঢোঁক গিলে আমার দিকে তাকায় ।
।। ২ ।।
দোকানদারের কাছ থেকে আনা নাম্বারে তিন বার কল করার পর ওইপাশ থেকে ফোনটা রিসিভ করা হয় । কর্কশ গলায় একজন বলে, ‘হ্যালো… কে বলছেন?
‘আমি কে সেটা জানার বিষয় নয়। বলছি, এটা কি জগলু ভাই’র নাম্বার?’ আমি ভদ্র ভাবে জিজ্ঞেস করি ।
‘না, আমি জগলু না।
বলেই কল কেটে দিলো, মেজাজ হল তিরিক্ষ। আবার ফোন দিলাম। কয়েকবার রিং হওয়ার পর ধরলো,
ভাই, তাইলে আপনি সাল্লু ভাইজান?
হ্যা, বলুন কি দরকার?’ সাল্লু নামক লোকটা আমার প্রতি কোন ধরনের আগ্রহ না দেখিয়ে কথা বলছে।
যাক, মনে মনে বেশ লাগলো।
বললাম,
একটা কাজ আছে । করতে পারবেন?’
‘কি কাজ?’ কিছুটা সিরিয়াস ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে সাল্লু।
‘ফোনে বলা যাবে না । সামনা সামনি বলত হবে । আপনি আমার সাথে দেখা করতে পারবেন ?’
দেখা করার দরকার কী? আপনার কাজ বলুন, করে দিব। কারো সাথে দেখা করার প্রয়োজনবোধ করিনা।
আমি বলি, দেখা করলে ভালো হয়। দশ লাখখানেক টাকা পেয়ে যেতে পারেন।
টাকার লোভ দেখালাম সাল্লুক।
শালা ধরা পড়েছে।
বলে ‘কোথায় আসতে হবে, বলুন?
আপনি মিরপুর দশ নাম্বারের ওভার ব্রিজের উপরে আসবেন আজ রাত নয়টায় ।
কোড: কালো বিড়াল
‘আচ্ছা ঠিক আছে ।’ কথাটা বলেই কানের উপর অভদ্রের মতো খট করে ফোনটা রেখে দেয় সে।
***
রাত আটটা থেকে ওভার ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে আছি আমি । মানুষের ব্যাস্ত পথ চলা দেখছি আর খুনীটার জন্যে অপেক্ষা করছি । প্রায় ঘণ্টা খানেক অপেক্ষার পর ছেলেটা আমাকে কল দিল । সে এসেছে । আমি ছেলেটাকে খুঁজে বের করলাম ।
কালো বডিফিট টিশার্ট আর জিন্সের প্যান্টে প্রায় সুদর্শন যুবকেই বলা যায়।
গলায় আবার একটা তলোয়ারের লগো দেয়া লকেট ঝুলানো।
দেখে আহামরি মনে না হলেও, আসলে সে সাধারন নয় । ব্যাস্ত রাস্তায় গুলি করে মানুষ হত্যা করার যোগ্যতা রাখে যে ছেলে, সে অবশ্যই সাধারন নয় ! একাই এসেছে, সাথে অন্য কেউ আসেনি।
কাছে এসে কোড বলে,
কালো বিড়াল।
প্রতুত্তরে আমিও কোড বললাম।
বলুন । কি কাজের জন্য আমাকে দরকার?’ ‘একটা খুন করতে হবে । পারবেন?’
আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে বেশ নিচু কন্ঠে কথাটা বললাম । সে আমার প্রশ্নের জবাবে বেশ দৃঢ় ভাবে জানালো,
‘পারবো না কেন?
এইটা করাই আমার কাজ । রেইট কত দিবেন, সেইটা বলেন ।’
‘আপনার যা রেট, তার চেয়ে কিছু বাড়িয়েই দেবো। আর ফোনেই তো বলেছি, দশ লাখ খানেক পেয়ে যাবেন। কারন কাজটা করতে বেশ দু:সাধ্য।
‘ব্যাপার না । টাকা পাইলে এই সাল্লু কঠিন কাজও করতে পারে। এখন শুধু কারে শেষ করতে হইবো, তাঁর নাম ঠিকানাটা দেন ।’ ‘নাম ঠিকানা দেয়া লাগবে না । আপনি আমার সাথে চলুন । আমি নিজেই ঐ লোকটাকে চিনিয়ে দেবো । আপনি শুধু কাজটা করবেন । তারপর আবার আমার সাথেই চলে আসবেন ।’
‘আজকেই কাজ করতে হবে? কিন্তু আজকে তো সম্ভব না । আজকেতো সাথে করে কিছুই আনিনি।
শুনে পুলকিত হলাম মনে মনে। তারপরও অবাক হওয়ার ভান ধরে বললাম,
সেকি! আপনাদের মত মানুষ সাথে সেফটি না রাখলে চলে,
আপনাকে যদি এখন আমি মেরে ফেলি।
লোকটি রসিকতা হিসেবেই নেয় কথাটা।
‘কোন সমস্যা নেই । আমার গাড়িতে সব আছে । আপনি শুধু কাজটা করবেন ।’
আর হ্যা, তোমার সাথেরজন কোথায়,?
সে অসুস্ত, আসতে পারবেনা। আমি একাই কাজ সামলে নিতে পারবো। কোন চিন্তা করবেননা?
না, তোমার ওপর আমার সেই ভরসা আছে।
সাল্লু আমার কথাটা শুনে কেমন করে যেন আমার দিকে তাকায় । মনে হয় বিশ্বাস করতে পারছে না আমাকে । তবে বিশ্বাস করুক, আর না করুক; সে আমার সাথে যেতে রাজি হয় । টাকার নেশা বলে যে নেশা আছে, সে নেশায় সাল্লু নামক খুনিটা বেশ ভালোই আসক্ত সেটা আলাপেই বুঝতে পেরেছি। খুশিতে আর উত্তেজনায়
হাওয়ার বেগে গাড়ি ছুটিয়ে দেই গন্তব্যের দিকে।
।। ৩ ।।
গাড়িটা এখন আমি কলাবাগানের দিকে নিয়ে যাচ্ছি । সাল্লু ছেলেটা আমার পাশের সিটে বসে পিস্তল দেখছে মনযোগ দিয়ে।
হঠাটজ তাঁকে প্রশ্ন করলাম, ‘আচ্ছা, আপনি কি নিয়মিত মানুষ খুন করেন?’
‘আমার কাজই তো এইটা ।’
‘লাস্ট কবে খুন করেছিলেন?’ ‘লাস্ট খুন করেছিলাম প্রায় মাস আগে । দুটো নেতা টাইপ হিজড়াকে। হালাগুলান় বেশি ত্যাড়িবেরি করে । হিজড়া রে নিয়া লেখালেখি করে, তাদের অধিকার নিয়া কথা বলে, তাদের দলের নাকী আবার সভাপতি না কী যেনো, অনেকবার মানা করছিলাম, কিন্ত মানেনাই, তাই দিছিলাম শেষ কইরা ।’
এসব নিয়া লেখিলেখি করলে তোমার ক্ষতি কী?
আমার না উপরমহলের ক্ষতি, এক নেতাসাব ফোন কইরা কইছিলেন, তারা নাকী ইসলাম দ্রোহী কাজ করে।
তাদের হত্যা করতে আল্লাহ পাক কুরানে বলছেন।
নেতা সাব আবার ধার্মিক মানুষ, নামাজ কালাম পড়ে, মুফতি।
ওনার কথাতো আর মিছা না, তাছাড়া এসবতো ধর্মবিরোধী কাজকাম।
আমি সাল্লুর দিকে তাকিয়ে অবাক দৃষ্টিতে প্রশ্ন করলাম, ‘ঐ খুন করার পর আপনার বিরুদ্ধে পুলিশ কোন অ্যাকশন নেয় নি?’
‘আমার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিবো কোন দুঃখে? আমি কী প্রমাণ রাখছি নাকী? আর ঐ হিজড়াদের পক্ষেতো কেউ নাই । মামলা করবো কে? মামলা করলেই না অ্যাকশন প্রশ্ন ।’
‘ওহ আচ্ছা । তা আপনি মানুষকে খুন করেন কেন? ভালোকাজ করেইতো জীবন চালানো যায়,।’
‘ভালোকাম হইতাছে আমার পার্টটাইম কাম । আর মানুষ খালাস করা হইতাছে আমার আসল কাম । এই কাম না জানা থাকলে কোন হালার পুতেই আমারে ভাড়া করবোনা ।’ আমি আর কথা বাড়াই না সাল্লুর সাথে । গাড়িটা একমনে ড্রাইভ করতে থাকি । রাত প্রায় বারোটা বাজে, রাস্তা সুনসান, আশে পাশে মানুষের সাড়া নেই। আসিয়া ভবনের কাছাকাছি চলে এসেছি । আমি গাড়িটা রাস্তার পাশে সাইড করে আকাশকে বললাম, ‘চলে এসেছি আমরা । আপনি নেমে একটু সামনের দিকে এগুতে থাকুন । আমি গাড়িটা সেইফ যায়গায় পার্ক করে আসছি ।’ গাড়ি থেকে নেমে যায় । এখনো হাতে ফোন – কিন্ত আশপাশ দেখে বেশ অবাক হয় সে,
বলল, এইখানে আনছেন কেন?
আমি বললাম, আমার একশত্রু রয়ে গেছে ওই বিল্ডিংটায়, তাকেই খুন করা লাগবো। তুমি যাও , আমি আসতেছি। ছেলেটার হাতে এখনো ফোন, চোখে তার অবিশ্বাসের দৃষ্টি।
একটু দ্বিধা নিয়েই সামনে এগুতে লাগলো। টান টান উত্তেজনা ফিল করলাম। গাড়ির সিটের নীচে লুকিয়ে রাখা গজালটা বের করলাম, নীরবে হত্যা করার জন্য গজাল একটি সুন্দর উপকরণ। নিশঃব্দে পা ফেলে এগুতে লাগলাম, আকাশের দিকে। কাছাকাছি গিয়ে দাড়াতেই সে পিছন ফিরে তাকালো, আমি সেই সুযোগটা দিলামনা। পিছন থেকে রুমাল হাতে মুখটা চেপে ধরলাম, রুমালে ক্লরোফরম মেশানো, পিছন দিক থেকেই, কোমড় বাকিয়ে আমার ওপর ঢলে পড়ল, সুযোগটাকে কাজে লাগালাম, এক হাতের মুঠোয় রাখা গজাল টা বসিয়ে দিলাম বাম বুকে, একেবারে হৃদপিন্ড বরাবর, কুত্তার বাচ্চার আর রক্ষা নেই।
রক্তের ফোয়ার উপরে ছুটে গেল,
মুখের উপর রক্তের উষ্ণতা অনুভব করলাম।
টেনে মাঝ রাস্তা নিয়ে এলাম, শুইয়ে রাখলাম রাস্তায়, গজাল টা বুক থেকে বের করে আবার ঢুকিয়ে দিলাম, পর পর তিন/চার বার ঢুকালাম, ঘ্যাচ ঘ্যাচ করে শব্দ হলো কয়েকবার। শালার মৃত্তুটা আরো কনফার্ম করতে পকেটে রাখা জাপানিজ নাইফটা বের করলাম, গতকালই কিনেছি, পাশের ল্যাম্পপোস্টর আলো পড়ে এখনো চকচক করছে। গলাটাতে পরপর দুতিনবার চালান করলাম ছুরিটা, গর গর শব্দ বের হতে লাগলো গলা দিয়ে, পানির ফোয়ারার মত কিছুক্ষণের জন্য রক্তের ফোয়ারার সৃষ্টি হলো। সেই রক্তে ভিজে গেলো হাত পা আর পরনের স্যুটটা। সেই উষ্ণ রক্তের পরশে কেমন একটা শান্তি অনুভব করলাম। কিছুক্ষন পর নিথর হয়ে গেলো দেহটা। গজাল আর ছুরিটা শালার কাপড়ে মুছে নিলাম। শালার মোবাইল, আইডি কার্ড, মানিব্যাগ আর আমার উপকরণ গুলাও সাথে নিলাম। ওর মোবাইলেই হয়তো আমার সব লক্ষ্য লুকিয়ে আছে,। গাড়িটা একটু পিছালাম । তারপর হঠাৎ করে স্পীড বাড়িয়ে ধাক্কা দিলাম সাল্লুর গায়ে । সাথে সাথে পীচ ঢালা শক্ত রাস্তাটা পুরোপুরি ভিজিয়ে দিয়ে দিয়ে থেথলে গেল তার দেহ, বডিটা কিছুটা সরে গেলো। আমি দ্রুত গাড়িটা ঘুরালাম । তারপর আবার তুলে দিলাম গায়ের উপর । আমার গাড়ির ডান পাশের চাকা দুটো একেবারে ওর বুকের উপর দিয়ে গেছে । শরীরটা থেঁতলে গেছে একদম । মুখটার ওপর দিয়ে চাকাটা চালিয়ে দিলাম, যাতে দোকানদার এবং অনান্য লোকেরা দেখেও চিনতে না পারে। আমি আর ওখানে এক বিন্দুও অপেক্ষা করি না । দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকি বাসার পথে । সোজা বাসায় চলে এসেছি আমি । বাসায় ফিরে দেয়ালে ঝুলানো জুলহাজ, তনয় আর লিপু ভাইয়ের ছবিটার সামনে দাঁড়াই । মনে মনে বলি; ভাই, আজ তোমাদের খুনিকে আমি খুন করেছি । যাদের ভয়ে লিপু ভাই আত্মহত্যা করেছিলো তাদের একজনকে শেষ করে দিয়েছি আজ। সে ভেবেছিল তোমাদের পক্ষে কেও নেই; তাই তোমার পক্ষে লড়াই করার মতোও কেউ আছে । কিন্তু সে কি জানতো যে, তোমার একটা ছোট ভাই আছে, তোমার লেখায় সে ফিরে পেয়েছিলো তার জীবনকে। খুজে পেয়েছিলো নিজ পথ। সে কি জানতো, তুমি তোমার এই ভাইটাকে কত ভালোবাসতে? জানতো না । সে এটাও জানতো না যে তোমার সে ভাইটা তোমাকে কত ভালোবাসে । যদি জানতো তাহলে আমার তোমার গায়ে আঘাত করার সাহস সে দেখাতো না । তবে, যেহেতু সে সাহস দেখিয়েছে; তাই আজ তাঁকে তাঁর সাহসিকতার যোগ্য উপহার দিয়ে আসলাম !’ আরো রয়ে গেছে, এইসব খুনি সন্ত্রাসবাদী আর নেতার দল, তাদের কেও আমি যোগ্য শাস্তি দিবো এটা আমার প্রতিজ্ঞা।
[ছবিঃ ভুটান]