কাঁচালঙ্কা

চাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন

চাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন

— সামীউল হাসান সামী

 

এক ইট ভঙ্গুর ক্ষণস্থায়ী
অসংখ্য ইটে দালান দীর্ঘস্থায়ী
একহাত এক লোক খুবই দুর্বল
অসংখ্য হাত অসংখ্য লোক, শক্তিতে মহাবল।
এক লাঠি মচকানো সহজেই হয়,
এক সাথে দশ লাটি ভাঙ্গা সহজতো নয়।
তাই একতাই শক্তি একতাই বল,
অনৈক্যে দুর্বল, নয় কর্মে সফল।

ছোটবেলায় আমরা সকলেই পড়েছি একতাই বল। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যাবস্থা, পরিবার ও সমাজে এমন কোন প্রকার কার্যক্রম থাকেনা যার দ্বারা একজন শিশু, ছোটবেলা থেকেই হারে হারে বুঝতে পারবে যে আসলেই একতাই বল। বরং বর্তমান সমাজে আমরা শিশুদের এমন প্রতিযোগীতার মাধ্যমে বড় করাই যে, ওরা মনে করে প্রতিযোগীতাই বল। আর তাই, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম নিজ বন্ধুদের সাথেও করে প্রতিযোগীতা, সহজে করেনা সহোযোগীতা।

পিপড়া, মৌমাছি এমনিভাবে প্রানী জগতে একতার নমুনা আমরা দেখতে পাই। একক প্রচেষ্টায় যা অর্জনে বহু কন্টকময় পথ অতিক্রান্ত করতে হয়, একতায় তা অনেকাংশেই সহজ হয়। সবচেয়ে বড়কথা হলো, ঐক্যবদ্ধ চেষ্টার ফলগুলোই সফলতায় রূপ নেয়।

বাংলাদেশের বা আশেপাশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র গুলোতে সংখ্যালঘু জনগণ নির্যাতিন নিপিড়নের শিকার। যুগে যুগে এটিই হয়ে এসেছে। সাম্রাজ্যবাদের রোগে আক্রান্ত এই সমাজ ব্যাবস্থাপনাপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোতে সংখ্যাগরিষ্ঠদের তাবেদার হয়ে বেচেঁ থাকতে হয়েছে সংখ্যালঘুদের যুগে যুগে। এই নির্জাতনের শিকলভাঙার গান গাইতে হবে সমস্বরে, বজ্রকন্ঠে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান রাষ্ট্রের যৌন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার শূন্যের কোঠায়। এরা আত্মপরিচয়ে এখনো মানবাধিকার নিয়ে বাচতে পারেনা আপন আপন সমাজে, রাষ্ট্রে ও ধর্মে। যারাই নিজের মতো বাঁচতে চায় সসম্মানে, তাদেরকেই বিতাড়িত হতে হয় পরিবার, পরিজন, সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র ও সর্বশেষ পৃথিবী থেকে। উগ্রপন্হীদের গুপ্তহত্যা যেন সহজ হয়ে দাড়িয়েছে এই সম্প্রদায়ের জন্য। এ বিষয়ে রাষ্ট্র নির্বিকার।

এমনিই একটি সময়ে এই সম্প্রদায়ের কতটা ঐক্য দরকার, কতটা ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে তা এরা এখনো অনুধাবন করতে পারছেনা। অনৈক্যের কারনে পৃথিবীর অনেক বড় বড় জাতীকে বিলিন হয়ে যেতে হয়েছে। তাই এই সম্প্রদায়কে এখনো ভাবতে হবে, এরা কতটা ঐক্যবদ্ধ হবে।

ঐক্যের চর্চা না থাকায় এবং প্রতিযোগিতার চর্চা চালু থাকায় এই সম্প্রদায়ের মাধ্যে একধরনের নোংরা প্রতিযোগিতা প্রচলিত আছে যা এরা পরস্পরের প্রতি হিংসাত্মকভাবে হয়ে প্রয়োগ করে থাকে। যা এদেরকেই ক্রমেই দুর্বল করছে।

মাঝেমধ্যেই আমি খেয়াল করে থাকি যে, এরা অপরের প্রতি এতোটাই সমালোচনায় লিপ্ত হয় যে যা ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য। এরা কখনোই বুঝতে চায়না যে এগুলো মূলত নিজের হিংস্র রুপের বহিঃপ্রকাশ।

“কাউকে নেটে নিচে নামানোর মধ্যে গর্বিত হবার কিছু নেই, বরং তা লজ্বার নিজের এমন হিংসাত্মক আচরণের জন্য।

এই কঠিন বাস্তবতার সময়ে এই সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নিজেদের অধিকার, নিজেদের মানবাধিকার, মানুষের মতো মানুষ হয়ে মাথা তুলে দাড়াবার অধিকার আদায়ে। হাতে হাত রেখে, কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে স্বাধীনতার গান গাইবার সময় এখন।

আমাদের ততদিন পর্যন্ত লড়ে যেতে হবে, যতদিন পর্যন্ত সমতার নতুন সূর্য উদয় না হবে। আমাদের ততদিন পর্যন্ত লড়তে হবে যতদিন পর্যন্ত, মানুষে মানুষে বৈশম্যে থাকবে।
আমরা একটা পৃথিবী চাই যেখানে সবাই নিরাপদ, সবাই মানুষ।

[ছবিঃভুটান]

Exit mobile version