— অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
“জেন্ডার-দেহ হল কার্যনির্বাহক। সে নানা প্রকারের যে বিবিধ কর্মক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে তার নিজের বাস্তবতাকে বৈধ ক্ষমতা অর্পণ করে এবং তাকে অধিষ্ঠা দেয়, সেই ক্রিয়াসমূহকে সরিয়ে দিলে তার সত্ত্বাগত কোনও অস্তিত্ব আর থাকে না।…”
…………. জুডিথ বাটলার
“দ্য সোল ইজ নট মোনোলিথিক। মোর দ্যান দিস, দ্য জেন্ডার অব দ্য সোল ইজ নট সো ক্লিয়ার… আই ডোন্ট রিয়েলি আন্ডারস্ট্যান্ড মাই ওন্ সেক্সুয়ালিটি। ইট ইজ অ্যান অনগোয়িং বিজনেস।”
……………. শারন হাস (ইস্রায়েলের কবি)
[আমি একটি ম্যাচ রিপোর্ট লিখছি। এই কাহিনির সবক’টি পাতাই খেলার পাতা। আমি এই খেলার নিজস্ব সংবাদদাতা। নিজে নিযুক্ত নিজের প্রতিবেদক। আমার ভূমিকা এবং উপসংহার পৃথিবীর যেকোনও পক্ষপাতদুষ্ট ধারাভাষ্যকার এবং প্রতিবেদন-লিখিয়ের অধিক নয়।]
‘যাতে ওদের কোনও অধিকার নেই’
‘ব্যাপারটা কিন্তু খুবই রাজনৈতিক’, পারফোরেটেড প্যাডের কাগজ এক-হ্যাঁচকায় টানলে যে একগুঁয়ে শব্দটা হয়, ঠিক সেইভাবে একটিও স্কেলচ্যুতিহীন স্বরে ছন্দা এই চারটে শব্দ আড্ডার মাঝখানে রাখল। ‘ম্যাসকুলিনিটির সাধারণ একটা বৈশিষ্ট্য হল সে ‘ফেমিনাইন’ বা/ও ‘আদার’কে আলাদা কোনও ‘সাবজেক্ট’ হিসেবে গণ্য করে না। সে বলে, দাবি করে, দেয়ার ইজ ওনলি ওয়ান সেক্স, দ্য ম্যাসকুলাইন। দ্যাট ইলাবরেটস্ ইটসেলফ ইন অ্যান্ড থ্রু দ্য প্রোডাকশন অব ‘আদার’ অ্যান্ড/অর ‘ফেমিনাইন’, অ্যান্ড দোজ পজিশনস। যেকোনও ‘আদার’কেই সে মনে করে অলওয়েজ-অলরেডি আ সাবজেক্ট ইন দ্য এরিনা অব ম্যাসকুলাইন।’
তরতর ক’রে বলে যাচ্ছিল ছন্দা। মাঝখানে কখন ওর রাঁধুনে কমলা এ-ঘরে এসেছে দেশলাই নিতে; যাবার আগে নির্বিকারভাবে বলল, ‘ঠিকোই কইসো দিদি, মাসকলাইয়ের মতুন ডাইল আর হয় না’।
রান্নাবান্নার আঁটঘাঁট নিয়ে যারা খুব একটা খোঁজখবর রাখে না, তারা ফোড়নান্ধ হয়ে থাকে। ফোড়ন চেনে না। আমরাও চিনি না। নইলে কমলার না-বুঝে দেওয়া এইসব ঐতিহাসিক ফোড়নের নামকরণ এমনকি পেটেন্টও হত। হওয়া উচিত ছিল।
তেপায়া টেবিলের ওপর অ্যাস্ট্রেটাকে আহ্নিক গতির মতো ঘোরাতে ঘোরাতে কল্লোল বলে, ‘রামচন্দ্র গুহর একটা বইতে পড়েছিলাম, সংবিধানে যখন সংখ্যালঘু আর দলিত সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণের আইন তৈরির প্রস্তাবনা আনা হচ্ছে, তখন মেয়েদের জন্যেও সংরক্ষণ রাখা হবে কিনা, তা নিয়েও জোর তর্ক হয়েছিল। তখন একজন সাংসদ নাকি বলেছিলেন, তাঁর মতে মেয়েদের জন্য আলাদা নির্বাচকমণ্ডলীর ব্যবস্থা করাটা বিচক্ষণতার কাজ হবে। কারণ একজন নারী মুখ ফুটে কিছু চাইলে সেটা তাকে এনে দেওয়াটা সহজ। কিন্তু যখন সে নির্দিষ্ট কোনও কিছু চায় না, তখন সে যে আসলে কী চায় তা খুঁজে বার করাই খুব কঠিন ব্যাপার। তাই তাদের যদি একটা বিশেষ নির্বাচনী এলাকা দিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে তারা সেখানেই নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি, মারামারি নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, সাধারণ নির্বাচনী এলাকায় আর আসবে না। তা না হলে, আমরা হয়তো মাঝে মাঝে দুর্বল হয়ে পড়ে তাদের অনুকূলে ঢলে পড়ে এমন সব আসন তাদের দিয়ে দেব যাতে ওদের কোনও অধিকার নেই।’
‘তাহলে ম্যাসকুলিনিটির ভার্সনে’, আমি বলি, ‘ফেমিনাইন বা আদার সার্বভৌম কোনও সাবজেক্ট নয়, বরং রিলেটিভ সাবজেক্ট?’
‘তুমি লক্ষ্য ক’রে দ্যাখো অনি, কুইয়্যার নামটা কার দেওয়া? একে বলে অপ্রেসড্-এর আইডেন্টিটিকে অপ্রেসরের ভার্সন দিয়ে আইডেন্টিফাই করা। যেকোনও হোমোসেক্স্যুয়াল আইডেন্টিটির জন্য এটা কি অমর্যাদাকর নয়? নতুন ক’রে কোথাও সৈন্য পাঠানোর মতো কাজ এগুলো। কম্পালসারি হেটেরোসেক্স্যুয়ালিটি তার স্ট্রেট মাইন্ড দিয়ে রিডেপ্লয় করছে ক্যাটেগরিগুলোকে। ডিস্টেবিলাইজ করছে। মুভমেন্টের ভিতটাকেই নড়বড়ে ক’রে দিচ্ছে।’
ছন্দাকে আমার বড় ভালো লাগে। ও যতবার কথা বলে, কথা শেষ হলে পারফোরেশনের গুঁড়োর মতো কথার রেশগুলো প’ড়ে থাকে। ডট ডট দেয়া লাইনের মতো না-ফুরোনো ধ্বনি।
‘দ্যাখো ছন্দা, তুমি ভালো বলতে পারবে, কিন্তু আমার মনে হয়, লেসবিয়ান কনটেক্সটে ম্যাসকুলিনিটির যে প্রতিপাদন বা একীভবন হয়, তা বোধয় ঠিক লেসবিয়ানিজম আর হেটেরোসেক্স্যুয়ালিটির মধ্যে কোনও সরল সাদৃশ্য নয়। সেখানে একটা বুচ্ আইডেন্টিটি উপস্থিত হয়। যখন সে বলে সে তার পুরুষ সঙ্গীদের মেয়ে হিসেবে পেতে চায়, তখন বিয়িং আ গার্ল সে কিন্তু তার নিজের বুচ্ আইডেন্টিটিতে ম্যাসকুলিনিটিকে প্রাসঙ্গিক এবং রিসিগনিফাই করে।’
উত্তরটা কল্লোল দিল, ‘তোমরা এভাবে কেন দেখছ, একজন লেসবিয়ানের ডিজায়ার, বা তার অবজেক্ট অব ডিজায়ার যেমন তার ফিমেল বডিকে অপ্রাসঙ্গিক করে না তেমনিই তার সুপার-ইম্পোজড ম্যাসকুলিনিটিকে স্বতন্ত্রও তো করে না। কিন্তু যখন তারা পরস্পর ইরোটিক ইন্টারপ্লেতে কাছাকাছি আসে তখন দুটো টার্মস্কেই ডিস্টেবিলাইজ করে। ডিজায়ারগুলো জাক্সট্যাপোজ হয়ে তাদের ইনটারনাল স্টেবিলিটি, তাদের পরস্পরের স্পষ্টতাকে লুজ ক’রে দেয়।’
সোফায় পিঠটা ছেড়ে দিয়ে ছন্দা খুব পরিষ্কার গলায় বলল, ‘দ্যাখো, মনে হয় এটা ঠিকই। মৌলিক অসম্বদ্ধতা এদের মধ্যে হয়ত নেই। হেটেরোসেক্স্যুয়াল রিলেশনের মধ্যে হোমোসেক্স্যুয়ালিটির একটা সাইকিক স্ট্রাকচার যেমন আছে, একইভাবে লেসবিয়ান এবং গে রিলেশনশিপের মধ্যেও স্ট্রাকচার্স অব সাইকিক হেটেরোসেক্স্যুয়ালিটিও রয়েছে। এগুলো সবই মনে হয় সত্যি। কিন্তু ব্যাপারটা হল ফ্যালোসেন্ট্রিক পাওয়ার স্ট্রাকচারের। এবং এটা পলিটিক্যাল ব্যাপার। কোনও ক্ষমতা কখনও প্রত্যাহার করা যায় না, প্রত্যাখানও করা যায় না। তাকে শুধু পুনঃস্থাপন করা যায়।… চা খাবে তো?’
তেপায়া টেবিলের ওপর রাখা ফ্লাস্কের ঢাকনাটা খুলতেই ছোট্ট ঘরটায় মৃদু গন্ধ ছড়িয়ে যায়। ফ্লাস্ক থেকে কাপে চা ঢালার শব্দের ওপর দিয়ে ছন্দা বলে, ‘প্রশ্নটা সেটা নয়। প্রশ্নটা হল, মানুষ কী দিয়ে তার শরীরের অন্তর্দেশ আর বহির্দেশকে আলাদা করে? ঠিক কোন্ ভাষায় সে তার অন্তর্দেশকে অবয়ব দেয়? এবং কোন্ অবয়ব দিয়ে সে তার শরীরকেই বা চিহ্নিত করে? আর শরীর কীভাবে তার গভীরে লুকোনো অদৃশ্যকে নিজের উপরিভাগে এঁকে ফেলে?’
ওগো, সত্যি বলছি তোমায় আমি ফুটকি লাইনে জানি
একটা পত্রিকা আমায় জেন্ডার-ইন্ডিপেন্ডেন্স নিয়ে গল্প লিখতে বলেছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে। মুশকিল হল, লেখা আমার পোষ্য নয়। চিলেকোঠায় বসে থাকা সে এক বাদামি বেড়াল। শূন্যে মায়াজাল বুনছে। আমি তার হাতে-পায়ে ধ’রে বলি নেমে আয় বাছা। দুটো দুধ-ভাত খেয়ে যা। উদ্ধার কর আমায়। সে যে কখন নামবে, আর কখন চলে যাবে, কে জানে। মোট কথা, গল্পটা দাঁড়াচ্ছে না। সবচেয়ে বড় মুশকিলের জায়গা হল, স্বাধীনতা আন্দোলন। সিনেমার শ্যুটিংয়ের সময় আলোর তীব্রতা কমানোর জন্য পাতলা একটা কালো কাঠের চ্যাপ্টা টুকরো ধরা হয় আলোর সামনে। যাকে cutter বলে। অনেক উঁচু বিল্ডিং বা প্লেন থেকে নিচে তাকালে যেমন পথচারীদের হাঁটার ধরন, ভূমির উঁচু-নিচুর ফারাক আর আলাদা করা যায় না, সবই মনে হয় সমতল, সবাইকেই মনে হয় একইরকম; কোনও ঘটনা বা সময়পর্ব সময়ের নিয়মে যখন ইতিহাস হয়, তখন দূরের সেই ইতিহাস আর আজকের মধ্যেও একইরকম একটা cutter পড়ে যায়। সেদিনের আলোর সেই তীব্র চ্ছটা মৃত নক্ষত্রের আলোর মতো টিমটিমে চোখের-অভ্যেস হয়ে দাঁড়ায়। আমার আশঙ্কা, স্বাধীনতা আন্দোলনকালীন এই কাহিনিও কি তার কনভেক্সিটি-লুপ্ত খাঁচা মাত্র হবে না? আরও বড় ঝামেলা হল, এদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন থেকে আমার আত্মিক বিচ্ছিন্নতা। আমি কিছুতেই ক্রিটিকের জামা খুলে ওই জায়গাটায় খালি গায়ে নিজেকে নিয়ে বসাতে পারি না। ফলে, যা হয়, তাকেই বোধহয় ‘জাঙ্গিয়ার বুকপকেট’ বলে। ওই সময়ের অনেক কিছু আমার কাছে ইতিহাস বইয়ের বাধ্যতামূলক বা আবশ্যিক পাঠের প্রাণহীন সন-তারিখ বা অক্ষর মাত্র। কিন্তু যখন আমি এই বিচ্ছিন্নতাকে প্রশ্ন করি, বিচ্ছিন্নতা তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? উত্তরটা পাই রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্রাবলীর একটা চিঠিতে। বোলপুর থেকে ১৮৯৪ সালে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, ‘পৃথিবীতে আমরা যাদের জানি সবাইকে ফুটকি লাইনে জানি। অর্থাৎ মাঝে মাঝে অনেকখানি ফাঁক। সেই ফাঁকগুলো নিজের মনে যেমন তেমন করে ভরিয়ে নিতে হয়। আমরা নিজেকেও অংশ অংশ করে জানি।’ এভাবেই নিজেদেরকে কিছু জানি, কিছু জানি না। ফাঁকা তবু থেকেই যায়। আমার নিজের মনে হয়, এই দেশটাকেও আমরা এভাবেই অজস্র ফুটকি লাইনে জানি। কয়েক হাজার ফুটকি জুড়ে জুড়ে একটা দেশ গড়া হয়েছে। এক-এক রঙ, এক-এক শব্দের এক-একটা ফুটকি। মধ্যে মধ্যে ফাঁকা। আন্দোলনের সময় দেশের প্রাতঃস্মরণীয় নেতারা সবক’টা ফুটকি নিয়ে ভাবেনও নি হয়ত। তাই নেশন বলতে ‘এক জাতি, এক প্রাণ’-এর যে ইউরোপীয় ধারণায় দেশ গড়া হয়, সে ধারণার সাথে তো ‘ভারত’ নামের ধারণাটা মেশে না। রবীন্দ্রনাথের ভাষাতেই বলা যায়, ইট ইজ জাস্ট দ্য অপোজিট অব হোয়াট ইউরোপ ট্রুলি ইজ, নেমলি ওয়ান কান্ট্রি মেড ইনটু মেনি। বহু দেশের সমষ্টি। ফলে এর ফুটকিগুলোর আগে ফাঁকা। পরেও ফাঁকা। যেজন্য কখনও ‘বন্দেমাতরম’, কখনও ‘জয় হিন্দ’, কখনও ইন্ডিয়া-পাকিস্তান খেলা, এইসব দিয়ে সেই ফুটকিগুলোর আগে-পরের ফাঁকাগুলোকে আমরা ভরাট করতে চাই। কিছু ভরাট হয়। কিছু ফাঁকা রয়ে যায়। কোনও বানরসেনা আসে না, যে পাথর ফেলে-ফেলে ওই ফাঁকাগুলোয় ব্রিজ বানাবে। ফলে, হাতে রইল দর্জির জোড়া-তালি দেয়া বিরাট কাপড়ের মতো এই দেশ। আমার নিজের মনে হয়, এ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে শুধু ইংরেজের বিরুদ্ধে আন্দোলন ব’লে দেখাটা ঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ইংরেজের সাথে আরও অনেক কিছুর সঙ্গেই এ দেশকে লড়তে হয়েছিল। হচ্ছে। হাজারো রকমের সামাজিক বাধা, কুসংস্কার, নীতি-নৈতিকতা, অস্পৃশ্যতা, দুনিয়ার যত রকমের জং ধরা শেকলবাকল থাকতে পারে, প্রায় সবকিছুর সাথেই লড়তে হয়েছিল। সেইসব জং ধরা শেকলে পা যেমন কেটেছিল, পা কাটার ভয়ে পা গুটিয়ে রাখার নিদানও কম পড়েনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আর চল্লিশের দশকের দুর্ভিক্ষ এইসব সামাজিক বাধা আর জাতধর্মের ছোঁয়াছুঁয়ির দরজার খিলকব্জাগুলোকে আলগা করতে পেরেছিল অনেকটা। আবার নতুন ক’রে শেকলও গজিয়েছিল। এই বিচ্ছিন্নতার ফুটো দিয়েই আমাকে ওপারে তাকাতে হবে। সেইজন্য এই গল্পটাও হবে টুকরো টুকরো কতগুলি অংশের জোড়া। যেখানে, তাদের ফাঁকগুলো দিয়ে যাতায়াতের এমনকি নতুন বিচ্ছিন্নতা উঠে আসারও রাস্তা রইল। সেই রাস্তাটার ওপর দাঁড়িয়েই আমি চেষ্টা করছি, বিভিন্ন ইতিহাস আর কথকতা থেকে দেহাংশ এনে-এনে এটাকে অবয়ব দিতে।
হে তোমার অষ্টম গর্ভ
১৯৩০ সাল। ২৪শে ডিসেম্বর। মনমোহন থিয়েটারে মঞ্চস্থ হবে ‘কারাগার’। মন্মথ রায়ের লেখা। ভাগবতে কংস-বসুদেব-দেবকীর কাহিনি নিয়েই এ নাটক। কারাবন্দী বসুদেব আর দেবকীকে নিয়ে শুরু হচ্ছে নাটকের কাহিনি। জেলখানায় বসুদেব ও দেবকীর এক-একটা সন্তান জন্মাচ্ছে, আর কংসের হাতে তাদের মৃত্যু হচ্ছে। বসুদেবের ভূমিকায় গিরীশপুত্র দানীবাবু। কংস—নির্মলেন্দু লাহিড়ী। দেবকী—সুশীলাসুন্দরী। কঙ্কন—ভূমেন রায়। চন্দনা—নীহারবালা। নরক—মণি ঘোষ। ধরিত্রী—রাজলক্ষ্মী। কঙ্কা—সরযূবালা। ঠিক সেই সময়ে আইন অমান্য চলছিল। সে বছরই ২৬শে জানুয়ারি কংগ্রেস ঘোষণা করেছে পূর্ণ স্বাধীনতা। এদিকে মনমোহন থিয়েটারে সেদিন কংসের কারাগার পরাধীন দেশেরই প্রতীক। বসুদেব, দেবকী, কঙ্কন, কঙ্কা—ভারতের বন্দী বিপ্লবী। কংস—ব্রিটিশ শক্তি। বসুদেব—সংগ্রামী নেতা। কঙ্কন, কঙ্কা—যুবশক্তি। বিদূরথ—প্রভুভক্ত রাজকর্মচারী। যদুবংশ—পরাধীন দেশের অধিবাসী।
সে এক অপূর্ব দৃশ্য
‘অসহযোগ আন্দোলনের সময় প্রকাশ্য কর্মক্ষেত্রে নামিয়া আমাদের সাহস বাড়িয়াছিল। …আমাদের দল পূর্ব হইতেই একপ্রকার গঠিত ছিল। তবে এবার উহাকে আরও বড় করিতে হইল। আমরা প্রস্তাব করিলাম, নিজেদের মধ্যে চাঁদা না তুলিয়া দল বাঁধিয়া গান গাহিয়া রাস্তায় ভিক্ষা করিতে হইবে। তদনুসারে হাড়কাটা গলি, রামবাগান, সোনাগাছি, ফুলবাগান, চাঁপাতলা, আহিরীটোলা, জোড়াসাঁকো, সিমলা, কেরানিবাগান—প্রভৃতি অঞ্চলে পতিতাগণ পৃথক পৃথক দল গঠন করিয়া রাস্তায় ভিক্ষা করিতে বাহির হইল। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। কলিকাতার অধিবাসীগণ স্তম্ভিত হইয়া গেল। এক-এক দলে প্রায় ৫০/৬০ জন পতিতা নারী—তাহাদের পরিধানে গেরুয়া রঙের লালপাড় শাড়ি—এলো চুল পিঠের উপর ছড়ানো, কপালে সিঁদুরের ফোঁটা, কন্ঠে মধুর সংগীত, …সঙ্গে কয়েকজন পুরুষ ক্লেরিয়নেট্ ও হারমোনিয়াম বাজাইতেছে। অগ্রে অগ্রে দুইটি নারী একখানি শালুর নিশান ধরিয়া যায়, তাহাতে কোন পাড়ার পতিতা নারী সমিতি, তাহা লিখিত আছে। তাহার পশ্চাতে অপর দুই নারী একখানি কাপড় ধরিয়াছে, তাহাতে দাতাগণ টাকা-পয়সা-নোট প্রভৃতি ফেলিয়া দিতেছে। আর দুইজন স্ত্রীলোক পুরাতন বস্ত্র সংগ্রহ করিতেছে। …আমরা যখন ভিক্ষা করিতে বাহির হইতাম তখন শত শত লোক আমাদের সঙ্গে সঙ্গে চলিত। …মেলায় অথবা তীর্থস্থলে জনতার মধ্যে পতিতা নারীগণ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে, তাহারা সাধারণের চক্ষে অমন জাজ্বল্যমান হয় না। কিন্তু আমরা ভিক্ষা বা পিকেটিং করিবার জন্য যেমন দলবদ্ধ হইয়া বাহির হইতাম, তাহাতে সর্বসাধারণের মুগ্ধদৃষ্টি আমাদের প্রতি আকৃষ্ট না হইয়া যাইত না।’
(‘শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত’, মানদা দেবী, প্রথম প্রকাশ ১৯২৯)
- How did participation affect the women’s families and the women as individuals? Did it affect their position in the family? If not, why?
- What were the changes that were brought into their lives as a result? Did social values change? How did society react then and later?
- What were the facilitating factors—were they common to all women participants, in all regions? Why do most accounts mention male encouragement, and so few the attitudes of other women, or children in the family?
- What were the social strata of the women in each region to which the participants belonged? Who took care of their familial responsibilities (including earning) when women went to jail?
- What was the relationship between nationalist ideology and women’s issues in the minds of men and women? Did women participate only for the country’s swaraj or also for women’s freedom? Did political participation aid women’s liberation?
- What were the regional patterns in women’s participation? For instance, in Bengal, many women expressed their nationalist feelings by joining terrorist organisations or supporting them in many ways, in addition to all the overt ways in which they were encouraged to participate?
- What were the patterns of women’s participation in other movements in different regions which fought against exploitation, and ultimately against imperialism? Why have they been ignored so long?
- What was the role of the media-newspapers, films, local journals etc. in all this during this period?
- What were the perceptions of the leadership about women’s participation? Why and how did gender equality get incorporated in the Fundamental Rights Resolution of 1931? What connections, if any, did it have with contemporary events within and outside India (Geneva Conference on Women’s Equality, 1931, Resolution of Chinese Communist Party on the ‘same line’. 1931: Lahore Conference of Asian Women for Equality, 1931 preceding Geneva), or with internal political imperatives?
- Why did the Indian National Congress fail to take any follow-up action on the Resolution for nearly a decade?
‘মাগো, তুমি আমায় ডাকছিলে?’
ইতিহাস-টিতিহাস থাক। ও বড় গ্যাঁড়াকলের জায়গা। তবে স্বাধীনতা আন্দোলনের গোটা পর্বেই যে পুরুষাধিক্য, সেখানে দু’চারজন অত্যন্ত ব্যতিক্রম বাদে বাকিরা অনেকেই হয়ত কুলবতীকুল অবরোধিতা মেয়েদের অধিকার-টধিকার দিতে গিয়ে ধর্মনীতিঘাতক হতে চাননি। এসবের বাইরে কোথাও যদি সবথেকে বেশি মেয়েদের অবাধ আত্মপ্রকাশ ও আত্মপ্রতিষ্ঠার সোনালি রেখা দেখি, সেটা বাঙলা পেশাদার রঙ্গমঞ্চে। নাট্যমঞ্চে অভিনেত্রী সংশ্লেষ নিয়ে বিদ্যাসাগরের মতো ব্যক্তিত্বের বিরোধিতাও যেখানে টেকেনি। পেশাদার থিয়েটারে মেয়েদের অভিনয় নিয়ে ১৮৭৩ সালের (হায়, এর ৭৪ বছর পরেই দেশ স্বাধীন হবে!) কথাগুলো যদি দেখা যায়,
‘আজি কালি কলিকাতায় বড় নাটকের প্রাদুর্ভাব দেখা যাইতেছে। একদল সতুবাবুর বাড়ির সম্মুখে একটি নাট্যশালা নির্মাণ করিয়াছেন। গত শনিবার তথায় মৃত মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রণীত ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটকের অভিনয় হইয়াছিল। অভিনেতাদিগের মধ্যে দুইজন বেশ্যাও ছিল। এ পর্যন্ত আমরা যাত্রা, নাচ, কীর্তন, ঝুমুরেই বেশ্যাদিগকে দেখিতে পাইতাম, কিন্তু বিশিষ্ট বংশীয় ভদ্রলোকদিগের সহিত প্রকাশ্যভাবে বেশ্যাদিগের অভিনয় এই প্রথম দেখিলাম। ভদ্রসন্তানেরা আপনাদিগের মর্যাদা আপনারা রক্ষা করেন ইহাই বাঞ্ছনীয়।’
(‘ভারত সংস্কারক’, ২২ অগাস্ট, ১৮৭৩; দ্র. ‘রঙ্গালয়ে বঙ্গনটী’, অমিত মৈত্র, পৃ. ৭-৮)
এর ঊনষাট বছর পরে কুমিল্লার ফয়জুন্নেসা স্কুলের ক্লাস এইটের দুটো মেয়ে শান্তি ঘোষ আর সুনীতি চৌধুরী ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে তাঁর বাংলোয় ঢুকে গুলি ক’রে মারলে অনেকটা এরকমই ধিক্কার জানিয়েছিল কংগ্রেসের কিছু নেতা। মেয়েরাও বিপ্লবী রাজনীতিতে নামায় দেশের যে কি দুর্দশা হয়েছে, সে-কথা জানিয়েছিল ‘প্রবাসী’, জানুয়ারি, ১৯৩২ সংখ্যায়। ১৯৩২, মানে স্বাধীনতা থেকে মাত্র দেড় দশকের দূরত্ব।
১৯৩১ সালে মৃত্যুর আগের দিন প্রীতিলতা মাকে লিখেছিল, ‘মাগো, তুমি আমায় ডাকছিলে?’
বিনোদিনী যখন চৈতন্য সেজেছিল
আমরা মনমোহন থিয়েটারের লেডিজ গ্রিনরুমে উঁকি দিই। তারিখটা আগেই বলা আছে। ২৪-১২-১৯৩০। স্টেজে কারাগার শুরু হবে আরেকটু পরেই। আয়নার সামনে সরযূবালা মেকাপ নিচ্ছে। কপালে টিপ, পায়ে আলতা, চোখে কাজল। বেটেখাটো চেহারার রোগা মেয়ে সরযূ। সরযূর ভাই শশী, পাশে ব’সে মেকাপ দেখছে দিদির। শশীর বয়েস এখন, ষোল।
—শশী, নাটক শুরু হলে তুই কিন্তু সামনে গিয়ে বসবি কি রে, চুপ ক’রে আছিস কেন?
—আমি স্টেজের পাশ থেকেই দেখব দিদি
—কেন? বাবুরা সব খেপায় বুঝি?
শশী মুখ নিচু ক’রে থাকে। সরযূ খুব যত্নে সই করার মতো চোখের কাছে আঙুল এনে কাজল পরছে। আয়নার সামনে তার মুখ। গয়নার ছোট্ট বাক্সের মতো চোখের ডালা খোলা। ভেতরে ঝকঝক করছে কালো পাথর। চোখের প্রান্ত বরাবর কাজলের সীমারেখা টেনে বলে, তা তুই এমন মেয়েদের মতো সাজলে খেপাবে না?
—বিনোদিনী যখন চৈতন্য সেজেছিল তখন তো ওকে কেউ খেপায় নি
—ছেলে সাজা আর মেয়ে সাজা কি এক রে? আর ওটা তো নাটক। তুই তো সত্যি-সত্যি মেয়ে সেজে ঘুরিস
—আমি সাজি না দিদি। আমি সত্যিই মেয়ে
—ওমা, তাই বুঝি?
সরযূ শশীর বুকের উঁচু নকল স্তনে টোকা দিয়ে বলে, এই দুটো থাকলেই মেয়ে হয় বুঝি? জানিস তো, বিনোদিনী যখন হেমলতায় পার্ট করছিলেন, তখন ওনার কিন্তু বয়স বেশি না। কিন্তু হেমলতার পার্টটা ছিল বড় মেয়ের। তোর মতো এরকম বুকে ইলু বেঁধে বিনোদদিকে তখন সাজতে হত ধেড়ে যুবতী।
—আমাকে তোমার থিয়েটারে ওরা নেবে না, না?
—আগে হলে নিত। এখন তো মেয়েরাই মেয়েদের পার্ট করে। তুই তো আর ছেলেদের পার্ট করবি না
—আমি তো মেয়েই, মেয়েদের পার্ট করতে পারব না?
—আমি জানি পারবি। আমার চেয়েও ভালো পারবি। কিন্তু সত্যিকারের মেয়ে না হলে ওরা তোকে পার্ট দেবে কেন? মেয়েদের জন্যই তো কত বাবু আসে দেখিস না? কত টাকা ওড়ে। কত গয়না। কত কুঠিবাড়ি, বাগানবাড়ি… তোর বুকের এই জলবেলুন দেখে কি ওরা আসবে?
—আমি যখন বাড়িতে একা থাকি, তখন আয়নায় দেখেছি, জলবেলুন দুটো সত্যিকারের মেয়েদের বুকের মতো হয়ে যায়
সরযূ কঙ্কার সাজ ভুলে খিলখিল ক’রে হাসে। দ্যাখ শশী, ছেলেদের ওসব হয় না, আর ছেলেতে-ছেলেতেও কিছু হয় না
—জানি তো ছেলেতে-ছেলেতে হয় না, আমি মেয়ে বলেই না ছেলেদের আমার ভালো লাগে?
—আমার একটুও ভালো লাগছে না শশী এখন এটা নিয়ে কতা বলতে। আমাকে স্টেজে যেতে হবে। তুই তবে এখানেই থাকিস। কেমন? একসাথে ফিরব
চুলের গোছ আঁটো ক’রে দুহাতে চেপে গ্রিনরুম থেকে বেরিয়ে কঙ্কাবেশী সরযূ মঞ্চের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর গ্রিনরুমের দিকে তাকিয়ে শশীকে ডাকে। মঞ্চের পর্দা সরতে তখনও কিছু বাকি। পর্দা অল্প ফাঁক ক’রে যেন ঝোপের আড়াল থেকে দ্যাখে, দর্শকের ভিড়ে হাউস উপচে পড়ছে। শশী কাছে এলে সরযূ বলে, যখন স্টেজে পার্ট করি, তখন মনে হয় না নাটক করছি। মনে হয়, যুদ্ধে নেমেছি। তারপর, একটু চুপ থেকে বলে, তুই যে স্বদেশী করবি বলছিলি শশী, ওরা তোকে নেবে বলেছে?
সো, হোয়াট জেন্ডার আর ইউ?
যে-বিশেষ যৌন লক্ষণটি বা সমূহকে ধারণ করেছে শরীর, তার (পরিবর্তনশীল) সাংস্কৃতিক বা কৃষ্টিগত অর্থকে প্রতিপালন ও প্রকাশ করে জেন্ডার। যা সেক্সড বডির বিপুল এবং মুক্ত সম্ভাবনাযুক্ত সাংস্কৃতিক অর্থ। ফলে জেন্ডার শারীরিক যৌন লক্ষণের কারণবাচক ফল যেমন নয়, তেমনি শারীরিক যৌন লক্ষণ বা চিহ্নের মতো স্থিরও নয়। এই জায়গাতেই ‘সেক্সড বডি’ আর ‘কালচারালি কনস্ট্রাক্টেড জেন্ডার’-এর মধ্যে মৌলিক ছেদ। যেহেতু জেন্ডার শারীরিক যৌনচিহ্ন-নির্ভর নয় তাই তার উড়ান এবং বিচরণেরও কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। নো ওয়ান ইজ বর্ন উইথ আ জেন্ডার, জেন্ডার ইজ অলওয়েজ অ্যাকোয়ার্ড। শারীরিক যৌনচিহ্নের (‘সেক্সড বডি’) দুটোই (পুং, স্ত্রী) মাত্র সম্প্রদায়। ব্যাপারটা এরকম, দুটো খাঁচা। একটা পুং, একটা স্ত্রী। দুটো খাঁচার দুরকম আলাদা চিহ্নও। জেন্ডার হল সেই অচিনপাখি, বন্ধ খাঁচায় সে কখনও ঢোকে, কখনও বেরিয়ে যায়। কখনও আর ফেরে না। কখনও সে পাখি গান ধরলে কাঁচা বাঁশের খাঁচা খসে পড়ে, সদরকোঠা থেকে আয়নামহল ছাপিয়ে যায় তার গান। অদ্ভুত হলেও মজার যে, ব্যোভেয়ার কিন্তু ‘সেক্স’কে ‘ইমিউটেবলি ফ্যাক্টিক’ বলেই ধরেছেন। যা অপরিবর্তনীয়, নিত্য, ধ্রুব, অবিকার্য। বাটলার বললেন, জেন্ডারের অন্তর্গত সত্য যদি এক ‘নির্মাণ’ হয় এবং প্রকৃত জেন্ডার যদি হয় এক মনশ্ছবি তাহলে জেন্ডার সত্যও হতে পারে না, মিথ্যাও হতে পারে না, বরং সে মৌলিক এবং সুস্থিত আইডেন্টিটির এক ভাষ্যের সত্য পরিণাম।
শশীর ডায়রি থেকে
১৩ মে, ১৯৩৯
পরস্ত্রী, পরপুরুষ আর পরকীয়ার মতো বুঝি আমার এই পরচুল, পরস্তন আর পরশাড়ী? পরাধীন দেশের সবচেয়ে বড় অভিশাপ এই যে, মুক্তি-সংগ্রামে বিদেশীয়দের অপেক্ষা বিদূরথের মতো দেশের লোকদের সঙ্গেই মানুষকে লড়াই করিতে হয় বেশী। দেশ তাহার স্বাধীনতা সংগ্রাম লড়িতেছে। আমিও কি আমার নিজের স্বাধীনতা যুদ্ধ লড়িতেছি না? আমার যুদ্ধে অপর মানুষের অপেক্ষা আমার স্ব-শরীরের সঙ্গেই অধিক লড়িতে হয়। ভিতরের আগুন আর বাহিরের কর্মভার, দুই লইয়াই চলিতে হয়। দিদির থিয়েটার দলের হেমেনবাবু যদিও বলিতেন, ‘গঙ্গাজলে মুরগি সিদ্ধ করে খাওয়া যেমন হিন্দুয়ানি, তোমাদের এই স্বদেশিও তেমনি’। আমাদের অনুশীলন সমিতিতে ছেলেরা লাঠি, তরোয়াল, ছোরা খেলা শেখে। নিয়মিত ব্যায়াম চর্চাও করে। সুভাষচন্দ্র হইতে আরম্ভ করিয়া দেশের তাবড় নেতৃবৃন্দ বলিতেছেন, স্ত্রীলোকের মধ্যে মাতৃরূপ দেখিবার ও মাতৃভাব আরোপ করিবার কথা। ব্যবহারিক জীবনে সকল স্ত্রীলোককে ‘মা’ বলিয়া ভাবিবার কথা বলিতেছেন তাঁহারা। দেশসুদ্দু লোক কি ছাগল-ভেড়া হইয়া গেল, যে, দিনরাত ম্যা ম্যা করিবে। শরৎবাবু পথের দাবীতে ভারী মজার একটা কথা বলিয়াছেন। মাঞ্চু রাজাদের মতো এদেশেও ইংরেজ যদি আইন করিয়া দেয় যে, দেশের সব লোককে আড়াই হাত লম্বা টিকি রাখিতে হইবে, তাহলে এদেশের নেতারা এই বলিয়া আন্দোলন করিতেন যে, আড়াই হাত টিকির আইনের দ্বারা দেশের প্রতি অত্যন্ত অবিচার করা হইয়াছে। ইহাতে দেশের সর্বনাশ হইয়া যাইবে। অতএব এক্ষুনি ইহা সওয়া দুই হাত করা হোক। পথের দাবীর কথা মনে করিবার কারণ, আজ পথের দাবী দেখিলাম। সব্যসাচীর পার্ট করিলেন অহীন্দ্রবাবু। পথের দাবী পড়িয়া আমার মোটে ভালো লাগে নাই। কথায় কথায় খালি ‘গলা ভারী হইয়া অশ্রুভারে দুই চক্ষু টলটল’ করার কথা, আর মাঝেমাঝেই ‘সর্বাঙ্গ কাঁটা দিয়া কাঁপিয়া গেল’। বিপ্লবীরা যখন-তখন এইরকম তরল হইয়া থাকেন নাকি?
প্রায় আট বছর হইয়া গেল সরযূদিদির সাথে সাক্ষাৎ নাই। গত আট বছরে আমার ঠিকানা অনেক বদল হইয়াছে। ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ নানা স্থানে কাটিয়াছে। নানা জায়গা হইতে মেয়েরা আসিতেছে যুগান্তরে। পরে কলিকাতায় আসিয়া দলের নির্দেশে হাড়কাটা গলির খোলে গুরুমার নিকট কাটাইলাম মাঝে বেশ কিছু বছর। নূতন ধুরানি পাইয়া আদরেই রাখিয়াছিল। ভালো একটি পারিকও পাইয়াছিলাম। কিন্তু ছিন্নি হইবার আগেই আবার দলে চলিয়া আসিয়াছি। এখন কখনও খোলে থাকি, কখনও অন্যত্র। এই দেশ যেদিন স্বাধীন হইবে, আমিও ছিন্নি করিয়া সম্পূর্ণ মেয়ে হইব। আমারও ঋতু হইবে? আমাদের গুরুমার সহিতও দলের অনেকে সংযোগ রাখেন। গুরুমা আমাদের হাত দিয়া টাকা, গহনা পাঠাইয়া দেন যখন যেমন পারেন।
এইবারে একটা আশ্চর্যের কথা বলি। এইখানে দলে আমার মতোন আরও তিনজন আছে। ইহারাও মেয়ে হইতে চায়। ইহাদের একজন এখনও কোতি। ধুরানি হয় নাই। দলের গোপন সব কাগজপত্র আমাদের কাছেই থাকে। কিন্তু জরুরি মিটিংয়ে আমাদের ডাকা হয় না। জানিতেও পারি না কোথা দিয়া কেমন করিয়া কী হইতেছে। থিয়েটার করিতে চাহিয়াছিলাম। করা হয় নাই। মেয়ে হইতে চাইলাম, তাহাও সম্পূর্ণ হইল না। দেশের কাজে আসিতে চাহিলাম, তাহাতেও কত বাধা। সন্ধ্যার আগে বাহিরে যাই না। খোলে থাকিলে অবিশ্যি দল বাঁধিয়া ঢোল বাজাইয়া ঘুরিয়া বেড়ান যায়। যেইদিন দলের অ্যাকশন থাকে, আমরা নির্ধারিত স্থানে পিস্তল, বোমা পৌঁছাইয়া দিই। শাড়ি পরিয়া থাকি, তাই মেয়ে বলিয়া পুলিশ মনে হয় এখনও আমাদের সন্দেহ করে নাই। তবে যেকোনও দিন ধরিতে পারে, তখন কী হইবে বলিতে পারি না। দল হয়ত স্বীকারও করিবে না যে আমরা তাহাদের হইয়া কার্য করিতেছি। আমাদের বাঁচাইবার জন্যেও কিছু করিবে না। সম্মানীয় মানুষেরা জড়াইয়া আছেন দলে। তাহাদের নামের সহিত আমাদের নাম আসিলে, তাহাদের দাগ লাগিবে। দুই-তিন মাস আগে একবার খুব ধরপাকড় হইতেছিল। তখন আমরা সব্জিওয়ালী সাজিয়া ভোর-ভোর বাহির হইতাম। মোটা কাপড় পরিতাম। আর মাথায় থাকিত সব্জির ঝুড়ি। তাহাতে ঢেঁকি, হেলেঞ্চা, নটে শাক লইতাম। শাকের নীচে বন্দুক থাকিত। পঞ্জাব, মারাঠা হইতে দলে যখন নূতন কেহ আসে, আমাদের দেখিয়া চমকাইয়া যায়। বুকের ভিতর হইতে যখন তাহাদের হাতে পিস্তল তুলিয়া দিই, তাহাদের কাহারও চোখ যে তখন আমাদের বুকের দিকে নির্নিমেষ চাহিয়া থাকে, তাহা দেখিয়া তৃপ্তি পাই বড়।
তবে ইহার চাইতেও আশ্চর্যের কথা, আমার কাছে এখন ১২টি পিস্তল আছে। বছর পঁচিশ আগে রডা কোম্পানীর দুইশোটির মতো অস্ত্রপূর্ণ বাক্স সাতটি গোরুর গাড়ী করিয়া জাহাজঘাট হইতে কোম্পানির গুদামে রওনা দেয়। কিন্তু গুদামে নাকি ছয়খানা গাড়ী পৌঁছায়। একটি গাড়ীর গাড়োয়ান গাড়ীটিকে লইয়া উধাও হইয়া যান। ওই গাড়ীতে ৯টি বাক্সে ছিল কার্ট্রিজ আর একটিতে ৫০টি পিস্তল। সবগুলি বিপ্লবীদের কেন্দ্রে পাঠানো হয়। ইহা ’১৪ সালের ঘটনা। সেই বছরেই আমারও জন্ম। ইহার তিন বৎসর পর পুলিস খবর পাইয়া বীরভূমের নলহাটির কোন্ একটা গ্রামে দুকড়িবালা মাসীর বাড়ী ঘিরিয়া ফেলে। তল্লাসী করিয়া সাতটি পিস্তল খুঁজিয়া পায়। বাকি পিস্তল বহু হাত ঘুরিয়াছে গত পঁচিশ বছরে। যাহার মধ্যে ১২টি এখন আমার কাছে রাখা হইয়াছে। ইহা আশ্চর্যের নয় যে পিস্তলগুলি আমার কাছে আছে। আশ্চর্য হইল, আমাদের বয়স সমান।
১০ এপ্রিল, ১৯৪৪
জাতির তথা জাতীয় পরিচয়কে আকার দিতে নারীর শরীরকেই ব্যবহার করা হইয়া থাকে। আজ বলিয়া নয়, যখন সতীর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ টুকরা টুকরা হইয়া সারা দেশে ছড়াইয়া পড়িবার কাহিনী রচিত হইয়াছিল সেদিনও ইহার ব্যত্যয় হয় নাই। ইদানীং বন্দেমাতরম লইয়া খুব বিতর্ক চলিতেছে। আমি বলি, আমার নারী সত্ত্বাকে তো আমি রাজনৈতিক আর সাংস্কৃতিক সম্পর্ক হইতে বিচ্ছিন্ন করিতে পারি না। আমি মা হইতে পারিব না বলিয়া আমার নারী হইবার যোগ্যতাকে রদ করিবার অধিকার কাহার হাতে? বন্দেপিতরম না বলিয়া পুরুষকে কি পিতৃত্বের দায়বদ্ধতা হইতে মুক্ত করা হইল? মুক্ত করা হইল তাহাকে কর্ষণ করিবার, ভোগ করিবার এবং উন্মুক্ত করিবার ঝঞ্ঝাট হইতে? তথাকথিত দুর্বল পক্ষ যখন রাজনীতিতে তাহার প্রতিনিধিত্ব তথা আত্মনিয়ন্ত্রণকে মূল লক্ষ্য করিয়া গড়িয়া তোলে, তখন তাহাকে অবদমন ও বহিষ্করণের মধ্যে সুসম্পর্ক চিরকাল দ্রষ্টব্য। ইংরেজ ভারতকে দমন করিতেছে। ভারতীয় পুরুষ ভারতীয় নারীকে পিছে ঠেলিতেছে। আমাদের কথা তো ছাড়িয়াই দিলাম। কোনও কালের হিসাবের মধ্যেই আমরা নাই। জাতি তাহার আশঙ্কা, তাহার ইচ্ছাকে নারীর শরীরের মধ্যে প্রকল্পায়িত করিয়াই সন্তুষ্ট। নারীর শরীরের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ভূমিকার রাজনৈতিক কারণ কি এই যে, প্রজা বৃদ্ধি, শ্রমশক্তির উৎপাদন আর জাতির জন্য সন্তান উৎপাদন? অতি সামান্যই পড়াশোনা করিয়াছি। এইসব কথা আপন মনের খেয়াল বই কিছু নয়। পাঁচজনের সামনে দাঁড়াইয়া এইসব বলা যায় না। বলিবার ধর্মও আমাদের নাই। তথাপি মনে প্রশ্ন আসে, যাঁহারা এত মা মা করেন, মায়ের স্পর্শে তাঁহাদের চরিত্র হারাইবার এত ভীতি কেন। ইঁহারা পিতা-পিতাই বা করেন না কেন।
There has been no research to trace the connections between the Fundamental Rights Resolution of the Congress in 1931, which accepted gender equality as a basic principle—the Lahore Congress of Asian Women for Equality, the Geneva International Conference on Women’s Equality, and the Congress of the Chinese Communist Party which also adopted a resolution on gender equality. Since all these meetings took place in the same year (1931), the absence of any enquiry into possible connections appears exceedingly strange.
ছিন্ন থেকে ছিন্নি?
‘বলিতে পারি না আর কি যাতনা সহি
বুকে এসে চেপে ধরে প্রাণ সে কেমন করে
জানাতে পারি না প্রাণে কি অনল দহি
ভঙ্গুর হৃদয়ে মোর কত ভার বহি’
… বিনোদিনী দাসী
সাতচল্লিশের স্বাধীনতার দিনটাকে সবচেয়ে ভালোভাবে বোধহয় ব্যাখ্যা করেছিলেন ফৈজ় আহমেদ ফৈজ়। ‘কালো রাত্রির নখরে ছিন্ন এই ভোর, এই কুষ্ঠক্লিন্ন সকাল’। দেশভাগের স্তম্ভিত ক’রে দেয়া ঘোষণা, পরাধীনতা আর স্বাধীনতার মাঝখানে ধারালো সেভেন-ও’ ক্লক ব্লেডের মতো হাইফেন উঁচিয়ে থাকা অবিশ্বাস্য পনেরোই অগাস্ট আর দাঙ্গার রক্তে বাদামি হয়ে যাওয়া সবুজ ধানক্ষেত নিয়ে তবু তো হুল্লোড় কম হল না দেশে। কম পতাকা উড়ল না। বাজিও ফাটল। মিষ্টি বিতরণ হল। গান্ধী তখনও বেলেঘাটায় অনশনে। বিবিসি তাঁর সাক্ষাৎকার চাইলে তিনি সহকারীকে বললেন,
‘ওদের বলো আমি যে ইংরেজি জানি সেটা ভুলে যেতে’।
আমাদের গল্পের শশী কিন্তু ওইদিন আনন্দেই মেতেছিল। ভোর-ভোর উঠে গায়ে জল ঢেলে ভেজা কাপড়ে বহুচেরার পায়ে ফুল দিয়ে পুজো করেছে। তারপর সকাল থেকে খুব সেজেছে। লাল পাড় ঘিয়ে রঙের গরদের শাড়ি। কপালে লাল টিপ। পায়ে আলতা। আঁটো আচল জড়িয়ে বুক দুটো সদ্য ফোটা ভোরের ফুলের মতোই তাকিয়ে আছে ভাঙাচোরা দেশটার দিকে। গুরুমা বলেছেন আজই তার ছিন্নি হবে। শরীর থেকে ছিন্ন হবে তেত্রিশ বছরের পুরুষ চিহ্নটা। ছিন্ন থেকেই তো ছিন্নি? এতদিন ছিল বাহিরে পুরুষ-চিহ্ন অন্তরে জেনানা, এবার পুরুষ-চিহ্ন উৎসর্গ হবে। সকাল থেকে খোলে তাই ঢোল বাজছে। শুভদিনে শুভ কাজ। মানচিত্র ছিন্ন হল। লাখ লাখ ভিটেমাটি ছিন্ন হল। দাঙ্গায় আরও ছিন্ন। শশীরও আজ পুরুষ-চিহ্ন ছিন্ন হবে। ছিন্ন নয়, ছিন্ন নয়, উৎসর্গ। তার আগে শশী পূর্ণ-যুবতী হয়ে স্বাধীনতার সকালে পাড়ার মোড়টায় এসে দাঁড়িয়েছে। কেউ মেঘদূত বলছে না কেন?
শ্রোণীভারাদলসগমনা স্তোকনম্রা স্তনাভ্যাং, যা তত্র স্যাস্যুবতী বিষয়ে দৃষ্টিরাদেব্য ধাতুঃ।
কেউ কুমারসম্ভব বলুক।
অন্যোন্য মুৎপীড়য় দুপেলাক্ষ্যঃ, স্তনদ্বয়ং পাণ্ডু তথা প্রবৃদ্ধম, মধ্যে যথা শ্যামমুখ্য তস্য, মঙ্গলসূত্রাস্তরমপল্যভ্যম।
মধুসূদন আওড়াল না কেউ।
দেবশিল্পী গড়িলেন শৃঙ্গাকারে কুচযোগ।
হাড়কাটা গলির সামনে সেদিন সিনেমার মতো ওসব অর্কেস্ট্রা কোথায়। পাড়ার ছোকরারা তখন ট্রাক বের করছে। পতাকা হাতে গোটা কলকাতা আজকে হৈ-হল্লা হবে ট্রাকে চড়ে। ভিড় বাড়ছে মোড়টায় ধীরে ধীরে। ট্রাকের আশেপাশে ঘিরে থাকা উৎসবকে দ্যাখে শশী। এত সকালে চোখে কম্প্রকাজলরেখা টানা শশীকে দেখে ছোকরাগুলোও মজা পেয়েছে। ট্রাকের আশপাশ থেকে ভিড় অন্য সুখাদ্য সন্ধানে পিঁপড়ের ঝাঁকের মতো শশীগামী হয়। ভিড়ের ভেতর থেকে কে একজন শশীর বুকের জলবেলুনে ছুঁচলো কি একটা ফুটিয়ে দিয়েছে। হলই বা জলে ভরা রাবারের বল। শশী কিন্তু সত্যিই টের পেল ওর বুকের ডানদিকের মাংসে ফুটে যাওয়া সূঁচটাকে। সত্যিই ব্যথায় আহ্ ক’রে উঠেছিল শশী। ছোকরারা সেটা দেখে আরও মজা পেল। আরেকটা বেলুন ফোটাতে তখন তাদের স্বাধীনতার যুদ্ধজয়ের ব্যস্ততম জরুরি উল্লাস। বাধা দিল না শশী। ছুটেও পালাল না। চিৎকারও করল না। নে, সূঁচ ফোটা তোরা। ডানদিকের বেলুনটা ফুটো হয়ে বুকের আঁচল ভিজিয়ে তখন জল বেরিয়ে পড়ছে। চুপসে যাচ্ছে ডানদিকের বুকটা। দেবরাজ জিউসের নাকি এক মানবী গর্ভজাত শিশুপুত্র ছিল। একদিন সেই শিশু যখন ঘুমন্ত হেরার স্তন্য পান করছে, হঠাৎ ঘুম ভেঙে হেরা তাকে ঝটিকায় সরিয়ে দেয়। শিশুর মুখ আর হেরার স্তনবৃন্ত থেকে তরল দুধ ছড়িয়ে পড়ে মহাকাশে। শূন্য থেকে শূন্যে। তা থেকেই তৈরি হল মিল্কি ওয়ে। শশীর বুক থেকে দুধও নয়, মধুও নয়; বর্ণহীন শাদা রক্ত। জল। ইয়ে দাগ দাগ উজালা, ইয়ে শব-গজীদা শহরে, দাঙ্গা আর খুনের রক্তগুলো ধোয়ার জন্য এই জলেরই দরকার ছিল। ছোকরারা তখন চিল্লিয়ে মাৎ করছে সকাল। আরে এ তো ভারতমাতা নয় রে, এ তো ভারতপিতা।
উল্লেখ থাকে যে, রেনেসাঁ যুগে ফ্রান্স ও ইতালিতে কম ক’রে হলেও দেড় লক্ষ মেয়েকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল ডাইনি হিসেবে। ডাইনি চিহ্নিত করার পদ্ধতিটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্তনে পিন ফুটিয়ে দেখা। বাধা দিলে, কষ্ট পেলে সে ডাইনি। পিন ফুটিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হত শৃঙ্গাকার কুচযোগ।
যেখানে স্তোকনম্রা স্তনাভ্যাং পাণ্ডু তথা প্রবৃদ্ধম।
—- ** —- *** —- ** —-
ঋণ, যাঁদের কাছে
- ‘ইন্ডিয়া আফটার গান্ধী : দ্য হিস্ট্রি অব দ্য ওয়ার্ল্ডস্ লার্জেস্ট ডেমোক্র্যাসি’ … রামচন্দ্র গুহ
- ‘ইন্ডিয়ান কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি ডিবেট’ এবং ‘উওমেন অ্যান্ড ইন্ডিয়ান ন্যাশনালিজম’ … লীলা কস্তুরী, বীণা মজুমদার
- ‘উওমেন ইন দ্য বেঙ্গল রেভলিউশনারি মুভমেন্ট’ … সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
- ‘ছিন্নপত্রাবলী’ … রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- ‘জেন্ডার ট্রাবল—ফেমিনিজম অ্যান্ড দ্য সাবভার্সিভ আইডেন্টিটি’ … জুডিথ বাটলার
- ‘দ্য সেকেণ্ড সেক্স’ … সীমোন দ্য ব্যোভেয়ার
- ‘দ্য হিস্ট্রি অব সেক্স্যুয়ালিটি’ … মিশেল ফুকো
- ‘ন্যাশনালিজম ইন ইন্ডিয়া’ … রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- ‘নাট্য ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে বিনোদিনীদের কথা : নাট্যদেউলের বিনোদিনী’ … শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
- ‘পত্রাবলী’ … সুভাষচন্দ্র বসু
- ‘পথের দাবী’ … শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- ‘বাসনা’ … বিনোদিনী দাসী;
- ‘ভায়োলেন্স অ্যান্ড দ্য বডি : রেস, জেন্ডার অ্যান্ড দ্য স্টেট’ … আর্তুরো জে আলদামা (সম্পাদিত)
- ‘মেঘদূতম’ এবং ‘কুমারসম্ভব’ … কালিদাস
- ‘রঙ্গালয়ে বঙ্গনটী’ … অমিত মৈত্র
- ‘রমেশদার আত্মকথা’ … রমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
- ‘শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত’ … মানদা দেবী
- ‘সুবে আজ়াদি’ … ফৈজ় আহমেদ ফৈজ়
- ‘হাঙ্গেরিয়ান পোয়েটিক ন্যাশনালিজম অর ন্যাশনাল পর্ণোগ্রাফি?—ইস্টার্ন ইউরোপ অ্যান্ড ফেমিনিজম—উইথ এ ডিফারেন্স’ … আনিকো ইমরে
- ‘স্বাধীনতা-সংগ্রামে বাংলার নারী’ … কমলা দাশগুপ্ত
- ‘হলদে গোলাপ’ … স্বপ্নময় চক্রবর্তী
- সাক্ষাৎকার … শারন হাস
ছবিঃ ভুটান
** ইন্ডিয়ারি পত্রিকায় (অগাস্ট’ ২০১৬) পূর্বে প্রকাশিত
** কাঁচালঙ্কার তরফে ইন্ডিয়ারি পত্রিকার প্রকাশক ইন্দ্রনীল ঘোষ ও লেখক অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়কে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা যাদের সহযোগিতা আর অনুমতি ছাড়া এই লেখা প্রকাশ করা সম্ভব ছিলোনা