কোলকাতা, ২০শে অগাস্ট, ২০২০ (বৃহস্পতিবার) : নিজেই জানালেন এ পদক্ষেপ না কি বৈপ্লবিক। গত সোমবার, ১৭ই অগাস্ট মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, রাজ্যের সমস্ত রূপান্তরকামী (ট্রান্সজেন্ডার) মানুষদের ২০২১-এর জুন মাস অবধি বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কথা। করোনা আবহে ট্রেনে অথবা সিগন্যালে হাত পেতে টাকা চাওয়া যাচ্ছেনা, এদিকে যৌণকর্ম বা সেক্স ওয়ার্ক করাও বেশ কঠিন, সংক্রমণের ভয়ও আছে, সাথে গোটা দেশে বিয়েশাদি পরায় বন্ধ থাকায়, আন্তঃরাজ্য যাতায়াতে অসুবিধের কারণে বিভারে লন্ডাও নাচা পরায় বন্ধ পরায় সমস্ত রূপান্তরকামী নারীদের। এহেন পরিস্থিতিতে তার এই বক্তব্য আশার আলো জাগিয়েছে সমগ্র বাংলার এলজিবিটি+ বা লিঙ্গ-যৌন-প্রান্তিক মানুষদের মধ্যে। তিনি জানান…
“পরের বছর জুন অবধি যাতে ট্রান্সজেন্ডাররা বিনা পয়সায় রেশন পায়, তার জন্য আমরা আপাতত একটা টেম্পোরারি স্লিপ দিচ্ছি। পরে রেশন কার্ড করে দেবো। ”
।।কেমন আছেন রূপান্তরকামীরা এই লকডাউনে? পড়ুনঃ লকডাউনে রূপান্তকামীদের পরিবার-যন্ত্রনা।।
তৃনমূল কংগ্রেসের তরফে তাদের ফেসবুক পেজ “বাংলার গর্ব মমতা”-তেও এ বিষয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনটি লেখার সময় প্রায় ২৪ হাজার মানুষ এই পোস্টটি পছন্দ করেছেন। প্রায় অধিকাংশ মানুষই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কমেন্টের মাধ্যমে।
তবে শুধুমাত্র রূপান্তরকামীরাই নন, যৌনবিনোদনকর্মী বা সেক্স-ওয়ার্কারদের জন্যেও রেশনিং-এর এই বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে বলে এই সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে পুলিশের চাকরিতে পুরুষদের সাথে সাথে যাতে নারীরাও সমান পদোন্নতির সুযোগসুবিধে পায়, সেজন্য একটি কমন গ্রেডেশন সিস্টেম চালু করার কথাও জানান শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কাঁচালঙ্কার তরফে যদিও এখনো অবধি এ বিষয়ে কোন বিজ্ঞপ্তি সরকারি ওয়েবসাইটগুলিতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কিছু এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে একটি অ্যানেক্সচারের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। আমাদের তরফে যদিও এই সমস্ত পোস্টগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
কাঁচালঙ্কার তরফে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে এবং রাজ্যসরকারকে অশেষ ধন্যবাদ এই মানবদরদী সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। কিন্তু কিছু প্রশ্ন যেগুলি থেকে গেলো সেগুলি…
- কি ভাবে এই বিনামূল্যে রেশন পাওয়া যাবে? এবং রেশন কার্ডের জন্য কি পথে আবেদন জানাতে হবে?
- কোন নথিভুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে আবেদন করা কি বাধ্যতামূলক?
- সরকারীভাবে ভাবে স্ব-লিঙ্গ-নির্ধারন স্বীকৃত নয় এখনো। তাহলে কিভাবে জানা যাবে যে কারা কারা নিজেদেরকে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিনামূল্যে রেশন পেতে পারেন? এবং কারা পারেননা?
- রাজ্যসরকারের কাছে এখনো অবধি রূপান্তরকামীদের নিয়ে কোন সঠিক আদমশুমারি পরিসংখ্যান আছে কি? সম্ভত না। তাহলে, কিসের ভিত্তিতে এই রেশন দ্রব্যের পরিমাণ নির্ধারিত হবে?
- এই ব্যবস্থায় রেশন সংগ্রহের জন্য যে টেম্পোরারি স্লিপ দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে, তা সংগ্রহ করতে গেলে কি কি নথি প্রয়োজন?
- ক’দিন বাদে বাদে এই রেশন দেওয়া হবে? আর তাতে কি কি জিনিশ, কতোটা পরিমাণে দেওয়া হবে?
পরিশেষে জানাই, শুধুমাত্র উদ্যোগ নেওয়া নয়, তাকে সফল করে তোলা যেমন একদিকে খুব বড়ো ব্যাপার, অন্যদিকে এই ভাবনাটার জন্যেই কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সরকারকে অনেক অনেক সাধুবাদ জানানোর প্রয়োজন আছে। এভাবে সর্বসমক্ষে এসে লিঙ্গ-যৌন-প্রান্তিক মানুষদের না পাওয়াকে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা করা, এটুকুই বা কটা রাজ্যের কজন মুখ্যমন্ত্রী করেছেন? তবে এই উদ্যোগের সমস্ত খুঁটিনাটি সবার সামনে আনার জন্য রাজ্যসরকারকে কাঁচালঙ্কার তরফে আবেদন জানানো হলো। সবার কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছক আর এই উদ্যোগে যাতে কোন বৈষম্য না হয় তার দিকেও সযত্ন দৃষ্টি রাখারও অনুরোধ জানানো হলো আমাদের তরফে।
— ** — *** — *** —
ছবিঃ ভুটান