কাঁচালঙ্কা

বিষ

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে…

রক্তদান জীবনদান।গানের ফাঁকে ফাঁকে ঘোষণা হচ্ছিল। মাইকে। সকাল থেকে। ঘরে শুয়ে শুনতে শুনতে অমিতেরও ইচ্ছে হল। রক্তদানের।
ভাবনামাত্রই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেল মৈত্রীসংঘের দিকে। সেখানেই আয়োজন হয়েছে রক্তদান শিবিরের।
ক্লাব প্রাঙ্গণে ওকে দেখেই দু তিনজন মুখ টিপে হাসলো। ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে কথা চালাচালি করল।

অমিত জানে ওদের হাসির কারণ। এবং কি কথা বলতে পারে তাও ওর অজানা নয়। ছেলেগুলোর সঙ্গে একস্কুলেই এক ক্লাসে পড়েছে। সেসময় ক্লাসে ওকে নিয়েই সারাদিন হাসি-ঠাট্টা হতো। এখন এসব গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। সময় ওকে শিখিয়েছে দাঁতে দাঁত চেপে, মুখ বন্ধ রেখে লড়াই করতে।
রক্তদানের ইচ্ছে জানিয়ে নিজের নাম লেখানোর জন্য টেবিলের সামনে দাঁড়াতেই, ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ক্লাবের ক্যাশিয়ার রতনদাও হেসে ফেলে। হাসতেই হাসতেই বলে, যা ভাগ। তোর রক্ত কেউ নেবে না।

পিছন দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যেন যাচ্ছিল ক্লাব সেক্রেটারি অজয় দত্ত।কথাটা তার কানে যেতেই থমকে দাঁড়িয়ে পরে। অমিতকে দেখে, কী যেন ভাবে। তারপর রতনকে ডেকে বলে, এর রক্তটাও নে। এদের নিয়ে কাজ করলে মিডিয়া এখন ভালো নিউজ করে।
রতন হাসিমুখে অমিতের নামটা লিখে নেয়। হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বলে, যা ওখানে লাইনে দাঁড়া। ওরা তোর ওজন নেবে। আরও দু একটা টেস্ট করবে। তারপর তুই রক্ত দিবি।

অমিতের মুখ আলো হয়ে ওঠে। মনে মনে ভাবতে থাকে, বাড়ি ফিরেই ফেসবুকে পোস্ট দেবে।জীবনের প্রথম রক্তদানের অভিজ্ঞতা।
এতকিছুর পরেও শেষ পর্যন্ত ওর রক্ত দেওয়া হল না।

রক্তগ্রহণ করতে আসা ডাক্তারসাহেব বেঁকে বসলেন। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তৃতীয়লিঙ্গের মানুষের রক্ত ওরা নিতে পারবে না।

ছবিঃ ভুটান


<< কালিজা ২০২১ (৪র্থ বর্ষ) – সূচিপত্র


Exit mobile version