কাঁচালঙ্কা

কমলাকান্তের মুখাগ্নি

কমল তার বাবা মায়ের আদরের ছেলে। কমল যখন ১৪ বছরের কিশোর, তখন দিনে দিনে কমলের মধ্যে মেয়েলী আচরণ বেড়েই চলেছে। তার এই আচরণের জন্য বোনের বিয়ে দুই দুই বার ভেঙ্গে গিয়েছে। পাত্রপক্ষ দেখতে আসলে যখন পারে মেয়ের ভাই একটু মেয়েলী, তখন তারা হিজরা বলে অকথ্য ভাষায় গালি দেয়। কোন হিজরার ঘরে ছেলেকে বিয়ে দেবে না বলে চলে যায়। এলাকার লোকজন অনেক ধরণের আজেবাজে কথা বলছে। রাস্তাঘাটে কমলের বাবাকে অপমান করছে। বলছে ছেলেকে ঘরে রাখলে মেয়ের বিয়ে কোন দিন হবে না। কমলের বাবা ভাবছেন তাহলে কি সত্যি ছেলের জন্য মেয়ের বিয়ে হবেনা! মেয়েকে বিয়ে দিতে না পারলে তো তার স্বর্গলাভ হবেনা। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার নাকি স্বর্গ লাভ হয়না। তবে কি তিনি নরকবাসি হবেন? এমন প্রশ্ন কমলের বাবাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। বাবা এক রাতে কমলের ঘরে আসেন। কমলের কাছে হাতজোড় করে বলেন বাসা থেকে চলে যেতে; তার বোনের ভবিষ্যতের জন্য। কমল সেই রাতে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। পাড়ি দেয় এক অজানা পথে। সেদিন রাতে মা অনেক কেঁদেছেন। কিন্তু সমাজের কাছে হার মেনেছে মা আর ছেলের ভালোবাসা। কমলের শেষ ঠাঁই হয় রানী নামে এক হিজরার ঘরে। আজ সে কমল থেকে হয়ে গেল কমলা।

সাত বছর পর কমলের মা হঠাত মারা যান। একমাত্র ছেলে হিসেবে মায়ের মুখাগ্নি করার কথা কমলের। কমল কাঁদতে কাঁদতে মায়ের লাশের কাছে পৌঁছল। এলাকার পুরোহিতগণ কমলকে শবদেহের কাছে যেতে দিলনা। তারা বলে হিজরার লাশ ছোঁয়ার অনুমতি নাই। সেদিন বাবাও সকলের সামনে কমলকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলেন। তিনি কোন হিজরাসন্তানের পরিচয় দিতে চাননা। কমলের জন্য তাকে নাকি নরকবাস করতে হবে। কমলের বোনের বিয়ে হয়েছে। তার মায়ের মুখাগ্নি করছে তার জামাই।

মায়ের দাহকাজ চলছে; কমল দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। কমলের চোখের পানিতে মাটি ভিজে গলে গেলেও, কমল পারলনা এই সমাজের মানুষদের মন গলাতে। কমল উপরে আকাশের দিকে তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে বলল —

“সৃষ্টি করেছ তুমি
দোষী হয়েছি আমি।
জন্ম দিয়েছে বাবা-মায়
এটাও যেন আমার দায়।
আমার ছোঁয়ায় নরকলাভ
সবই যেন আমার পাপ।
কেন পাপী হলাম আমি,
যখন জন্ম দিয়েছ তুমি?”

—- ** — *** — ** —-

ছবিসূত্রঃ https://www.maxpixel.net/Blaze-Fire-Heat-Brand-Burn-Hot-Flame-Log-Energy-4394128 (ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স)

Exit mobile version