[শুরুর আগেঃ
“শুনুন না, একটা মেয়ে খুঁজে দিননা।” — কি মুশকিল, দেখা হলেই একই প্রস্তাব, আমি জলজ্যান্ত মেয়ে খোঁজার ঘটকালির দায়িত্ব নিতে যে কতোটা অপারগ, তা নিজের এই বান্ধবীকে কি করে বোঝাই? প্রিয়াঙ্কা, চাউমিন খেতে ভালোবাসে, আর কথায় কথায় খুব হাসে। কিন্তু এখানেই বোহহয় তার পরিচয়ের শেষ নয়। কালিজার এবারের একমাত্র কবি, যার লেখার মধ্যে ডুবে থাকে ধৃষ্টতা, ফল্গুধারায় বলে চলে উদ্দাম যৌনতা, কখনো শারীরিক উদ্দামতায়, কখনো মানসিক প্রেমে। বিভিন্ন সময়ে প্রচুর কবিতা পাঠিয়েছেন, কিন্তু আপাতত পাঁচটি বেঁছে নিয়ে এখানে প্রকাশ করছি। বাকিগুলো আর সময়ের অভাবে টাইপ করেই ওঠা হয়নি। তবে আসতে আসতে সেগুলোও ছাপা হবে, এই আশ্বাসটুকু দিতে পারি। ও হ্যাঁ, কিছু লেসবিয়ান বন্ধুর অনেকদিনের অভিযোগ কাঁচালঙ্কায় নাকি শুধু ট্রান্স আর গে-দের নিয়েই লেখা হয়। এবারের কবিতার বিশেষ আকর্ষণ কিন্তু লেসবিয়ানিস্ম, যদিও পাশাপাশি প্রিয়াঙ্কা আরো কিছু জিনিষও ছুঁয়ে গেছেন। তবে এরপরে আশা করি কাঁচালঙ্কার বদনাম কিছুটা ঘুচবে।]
পাঁচফোড়ন
।। ১ ।।
অলক্ষ্যে কষ্টেরা জংলী গাছের মতো বেড়ে ওঠে,
ধোঁয়ায় আরো মোহময়ী তোর শ্যামবর্ণ রূপ;
পদত্যাগী সংগীতে তোকে খুঁজে পাই বিরহে,
তোর নিষ্পলক চাউনি বলে দেয় অনেককিছু;
তোর উরন্ত শালে অতীতের ঘ্রাণ পাওয়া যায়,
অবুঝ তোকে অল্প অল্প বুঝি সহাস্যে নেই তোর পিছু;
শব্দ আসে তোর শরীরের মোহনায়,
ভারী শরীরে তোর মেদ বাড়ছে বিচ্ছেদ যন্ত্রণারা অসহিষ্ণু;
প্রহেলিকা স্তরে জমাট বাঁধা সংশয়,
মেধার তরঙ্গে মিশছে ভালোবাসা দংশনে দংশনে মর্মাহত উপচিকীর্ষু;
সমঝদার হাসিতে মূলধন সুদের হিসাব মেলায়,
দুরন্ত আঁখিপল্লবে তোর হালকা গাম্ভীর্য;
বাউন্ডুলের পাণ্ডুলিপিতে প্রতীক্ষা কবিয়ালের গানে নীলগ্রহ পাল্টে যায়,
তোর আবেগের রেশে মিলিত হয়ে বিদেহী আত্মার শত শত প্রশ্নচিহ্ন,,,,
।। ২ ।।
মুখপুড়ি তুই নাকি শুনলাম একটা মেয়েকে ভালোবাসিস!!
ছিঃ ছিঃ লজ্জা লাগলোনা রে তুইও তো একটা মেয়েই —
এইসব কীভাবে ভাবিস?!
একটা সুপুরুষ ছেলে খোঁজ সে আলাদা সুখ
গৌণ অগৌণের মিলন,
এরকম আরো কতো কথা —
সে বলেছিলোতো মা হতে চায়,
আমিতো অক্ষম,,,,,,
পেট বানানো হবেনা আমার দ্বারা সম্পর্ক রাখার কিংবা না রাখা সেসবে তবে কি আসে যায়????
সে বলেছিলো সেও মা হতে চায় —
“লেসবিয়ান” চরম শব্দ;
কি স্পর্ধা কি স্পর্ধা দেখো আমাদের বাড়ীর সামনে এসে দিনরাত কাটা ঘুড়ির মতো লাট খায়;
কবি হয়েছেন ভণ্ডামি যতো রাজ্যের লেখাতো নয় পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রবদ্ধ;
এখনো ছেলে পাইনি তো তাই ইম্যাচিওরভাবে আমাকেই জ্বালায়,
সেই জ্বালানোর দায়িত্ব কেনো নেবে যৌন চাহিদাই তো সবচেয়ে বড়ো সত্য —-
পিতৃপ্রতিম অন্ধ অভিভাবকত্বর ভাবোদয়,
“জোছনা করেছে আড়ি আসেনা আমার বাড়ী,
গলি দিয়ে চলে যায় লুটিয়ে রূপোলী শাড়ী”,
কাটা ঘুড়িটাই যখন লাট খেতো অন্য মাঞ্জায়;
অগ্রিমপাতে বাহিত তুলনামূলক নীড়পটে,
অন্য মালের দিকে তাকালে জামার বোতামগুলো খামচে ধরতিস যেভাবে—
তোর নখের সেই দৃঢ় আঁচরগুলো আজও ভীষণ উজ্জ্বলরে শ্বাসনালীর সমতটে,,,,,,
।। ৩ ।।
মুখরিত শব্দকোষ কথার বাগজালে,
তাকানোতে আলাদা মাধুর্য;
নিন্দুকে কী বুঝবে সৌন্দর্যের মানে,
আসন্ন গ্রীবায় মুহূর্তের ক্লান্তি,
বৃহঙ্গনা খোলা পেট সত্যিই অনেক আদর জানে,
পাখির নীড়ের মতো ছোট্ট চোখে অনর্গল দুঃখরাশি;
সলীল লুকিয়ে আছে স্নেহের কোটোরে;
নিতান্তই ন্যালাখ্যাপা ভোলে মিথ্যের অনুসরণ
দিব্যি হাতে হাত চলবি পাশাপাশি?
অদ্য শেষ রজনী হলুদ শাড়ীতে নিটোল গড়ণে প্রারম্ভিক বিবরণী;
ক্ষতস্থানে তোর অজান্তে অপরিমেয় প্রতিষেধক প্রয়োগ করছি;
পাণ্ডববর্জিত জনপদ মুখরিত জনবহুল কোলাহলে —
“কিশোরী তোর চোখের জলে কী সুখ আছে দয়াল জানেরে …”
তুইবিহীন রাতগুলোতে অ্যালকোহল আর কালপুরুষই সঙ্গী,
ক্রমশঃ হারাচ্ছি হারিয়ে যাচ্ছি;
অকল্পনীয় সংযোগে পর্যবেখিত হবে রোম্যান্সের বিকিরণ;
গ্রহণ করার চাতুর্যে বাল্যপ্রেমের অভিশাপ মুক্তি,
একটা সকাল দিবি আমায় জাহ্নবী?
যেখানে রোদ্দুর থাকবে রোদ্দুরে মাখা চাদরে থাকবে রাতের ভদ্র আদরের নকশাগুলি —
আর থাকবে খোলাচুলে এলোমেলো ঘরময় ভালোবাসা ছড়ানো ছিটানো
সুয্যির আলো আর তোর ঘুমজড়ানো শিশুসুলভ বায়না;
আর থাকবি তুই শুধু তুইই আর তোর পাশে মামুলি আমি,
উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে কোন উদ্দেশ্যেই নেই উদ্দেশ্য একটাই
প্রকারেণ উপায়ে ভিন্নভাবে তোকে ভালোবাসা,
অ্যাসিডে গলছে তপ্ত কালবৈশাখী,
ধর্ম নেই জাত নেই কেবলই সোহাগিনী রাগান্বয় ভরন্ত যৌবনে মন কাড়ে যৌবনা নাকছাবি।
।। ৪ ।।
ইঁটের দেওয়ালগুলি দাঁত বের করে হাসতে থাকে,
যখন ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরি;
স্বার্থবাজ দম্ভ স্বাগত জানায়,
নারীদেহে পুরুষালী চিহ্ন;
ঘৃণা অক্ষমতা ঘিরে ধরে,
পুণ্যবানে অস্থিরতা তোকে দেখতে চোখ ব্যস্ত,
আত্মঅহম নির্বিকার কটিদেশে সন্তর্পণে হাত রাখি;
পুরুষ না নারী কী তোর লিঙ্গ পরিচয়?
চরম আক্রোশ দলাপাকানো রাগ বেড়িয়ে আসে,
পরে ভাবি শুনতে হবে এমন অনেক কথা এমনভাবেই অনেকটা পথ যেতে হবে,
যাওয়ার আগে রেখে যাবো পরিচয় —
পুরুষ নারী না হিজড়ে কিংবা ব্যাটা মাগীও না,
দিয়ে যাবো রেখে যাবো কিছু কথা যা আমি পাইনি;
ঘর বাঁধা হবেনা স্বপ্ন দেখা হবেনা আন্দোলনের ঢেউতে নিজ মন বাঁধি,
এ জনম সার্থক তব তোমা চরণ হতে,
চিরসখা এগিয়ে যায় অতিক্রম করে কটুবাক্য এবং সমাজের মেকি গণ্ডি;
শেষবেলায় চিরনিদ্রায় ঘুমাবো তোমার কোলে,
সইছি অপবাদ হবো বলে চরণদাসী;
গায়ে আমার পাপ লেগেছে;
আগ্রাসনের আধিপত্যে আমি অধিকার চাই,
বেনামী লাশের ডাঁইয়ে না কোন মর্গের লকারে না দেহ আমার ভাসবে রামধনুর সাতরঙে;
দীর্ঘপথে অতিকায় কুটিল ষড়যন্ত্রী,
তোর মাটিতেই ছাই হবো পুড়ে;
নতমস্তকে তোমার বিগ্রহ
জননী মাতৃভূমি স্বর্গাদপী গরীয়সী।।।।।।
।। ৫ ।।
মেহফিল জীবন জুড়ে মুজরো চলছে,
অবিশ্বাস্য ভাবের ঘরে অতিক্রমী ভাষার আনাগোনা;
সমকামী না সমপ্রেমী কী জানি কী হয় —
দ্বিপক্ষীয় দ্বিধান্বিত সংশয়,
উপলব্ধি উড্ডীয়মান স্তনবৃন্তকে;
গৌরবসনা যৌবনের তপোনবে ধান্বিত —
জেহাদের ইকরারে নারী-নারীকে নর-নরকেই আপনমনে চায়।।।।
[ছবিঃ ভুটান]