|| কিশলয় ||

|| কিশলয় ||

— দেব বড়ুয়া

[শুরুর আগেঃ বন্ধু দেব যখন এই ছবিগুলি আমাদের পাঠালেন, তখন কমলাগার্লস স্কুলের প্রসংগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য মাথায় ঘুরছে। কিশোরদের নাকি নিজেদের যৌনতা সম্পর্কে ভাববার প্রয়োজন নেই। এই ছবিগুলিই তখন বেশী করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলো। হয়ে উঠলো সেই মন্তব্যের যোগ্য জবাব। ঠিক করলাম শুধু ছবি নয়, তার সাথে এই ছবির পিছনের ভাবনাগুলোকেও তুলে আনি সামনে। অতএব খুব ছোট্ট একটা সাক্ষাৎকার, আর সাথে এই ছবিতে গল্প। আর বেশী কথা না বাড়িয়ে, বন্ধু দেবকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে, শুরু করা যাক এই ছোট্ট ব্লগ।]

 

** সাক্ষাৎকার **

বিভিন্ন সময়ে ছবির মাধ্যমে আপনি লিঙ্গ-যৌন-প্রান্তিক মানুষদের কথা ফুটিয়ে তোলেন। ঠিক কোন চিন্তাভাবনা থেকে এর শুরু?

প্রথমেই বলি আমি একজন সমপ্রেমী পুরুষ, ছোটবেলায় অনেক দিক থেকেই আঘাত পেয়েছি নিজের সত্তার জন্য। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে সেই আঘাতগুলোর সামনে রুঁখে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছি। সেই প্রতিবাদের ভাষা থেকে আমার এই কাজ করার মানসিকতা শুরু হয়।

আপনার ছবিই আপনার ভাষা, এর কি কি প্রভাব বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন এবং অন্যান্য মানুষের মধ্যে আপনি লক্ষ্য করেছেন?

আমার মা প্রথম থেকেই আমাকে এই কাজে অনেক সাহায্য করেন অনুপ্রেরণা যোগায়। পরিবারের দিক থেকে আমার কাজ নিয়ে তারা খুশি এবং LGBTQ বিষয়টা বোঝেনও। কিন্তু রইল বাকি বন্ধুবান্ধব , আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে কিছু কিছু মানুষদের কাছে অনেক বেশি সাহায্য পাই। নেগেটিভ কথা সব কাজেই শিল্পীরা পায়, আমি তার ব্যতিক্রম নই। হ্যাঁ সমাজে দেখার চোখ অনেক পাল্টেছে। আমার কাজ দেখে অনেকেই LGBTQ বন্ধুদের কথা বুঝতে পারেন।

এই ছোটবেলার ছবি-গল্পের সাথে আপনার নিজের জীবনের বা কাছাকাছি কোন ঘটনার মিল খুঁজে পান?

ছোটবেলা থেকেই আমি তেমন ছেলে বন্ধু পাইনি, মেয়েদের সাথে বা দিদিদের সাথেই বেশী খেলাধূলায় আগ্রহী ছিলাম। কিশলয়টি ছিল আমার একটি কল্পনা, যেটা হলে হয়ত অনেক বেশি বাল্যকালকে উপভোগ করতাম। আমার মনে হয় কিশলয়টি আমার Community র অনেক বন্ধুদের বাল্যপ্রেমের গল্প বা ভাবনা।

সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী মন্তব্য করেছেন যে কিশোর কিশোরীদের নিজেদের যৌনতা নিয়ে ভাবা উচিৎ না। এ বিষয়ে আপনার কি বক্তব্য?

আমার এবিষয়ে মনে হয়, তিনি শিক্ষামন্ত্রী পদটা অর্জন করেছেন ঠিকই কিন্তু তিনি শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারেন নি।আমি সব সময় বিশ্বাস করি শিক্ষিত পুঁথিগত বিদ্যায় হয় না , শিক্ষিত হতে হয় মানসিকতায়। আর একটা বিষয় হল আমার মন, আমার শরীর , আমার বিছানা আপনি আমাকে ঠিক করে দিতে পারেন না যে আমাকে কার সাথে সহবাস করতে হবে, সেটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত।

কাঁচালঙ্কার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কি আপনি কাজ করতে চান কখনো? আমাদের এই ছোট্ট উদ্যোগ আপনার কেমন লাগে?

অব্যশই এটা আবার বলতে, যদি কখনও আপনাদের কাজে লাগতে পারি তবে সেটা আমার কাছে খুবই খুশির ব্যপার। আপনাদের কাজ ভীষন ভালো লাগে , communityর বন্ধুদের মনবলকে শক্ত করে যান ঠিক এই ভাবে। Support করুন এটাই চাই।
সব শেষে এটাই বলতে চাই আমার কিশলয় কাজটির জন্য আমার ফটোগ্রাফার বন্ধু প্রতীক কর্মকারকে অসংখ্য ধন্যবাদ কারন ও না থাকলে এত সুন্দর ভাবে আমার ভাবনাকে ছবিতে ফুটিয়ে তুলতে পারতাম না।
শেষ করার আগে আমার সকল বন্ধুদের বলি ” তুমি দেখো নারী-পুরুষ/ আমি দেখি শুধুই মানুষ।” ভালো থাকুন । ধন্যবাদ।

** ছবিতে গল্প ** 

।। কিশলয় ।।

অনেক পুরনো ডায়েরী ঘাঁটতে গিয়ে বেড়িয়ে এলো আমার শৈশবের ছিঁড়ে যাওয়া কিশলয়ের কথা। আমি পলাশগ্রামের সেই রতন। আসুন আজ পৃষ্ঠাগুলো উল্টে ফেলে আসা, বঙ্কুকে একটু মনে করি!
ছবিতেঃ আকাশ, রাহুল, সুদীপ্ত, দেব
ছবি তুলেছেনঃ প্রতিক কর্মকার
সাজসজ্জাঃ অংকন আবেশ দাস
ভাবনা এবং গল্পঃ দেব বড়ুয়া
সৌভিক ঘোষের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা সহকারে

|| কিশলয়- ১ ||
এ কার স্পর্শ আমার চোখে এসে ধরা দিলো? এতো সেই শৈশবের বঙ্কুর স্পর্শ। তবে কি এতো দিনের না দেখার সাধ আমার আজ ঘুচবে ?

ছবিতেঃ আকাশ, দেব
ছবি তুলেছেনঃ প্রতিক কর্মকার
সাজসজ্জাঃ অংকন আবেশ দাস
ভাবনা এবং গল্পঃ দেব বড়ুয়া
সৌভিক ঘোষের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা সহকারে

|| কিশলয়- ২ ||
বঙ্কু মনে পড়ে আমাদের সেই শৈশবে দুটো মন ভিজে যাওয়ার দিন। কত যত্নে আমার শরীরকে ভিজতে দিসনি তুই ।কিন্তু লাভ কি হল ? মনটাতো আজও ভেজা তোর জন্য।

ছবিতেঃ আকাশ, রাহুল
ছবি তুলেছেনঃ প্রতিক কর্মকার
সাজসজ্জাঃ অংকন আবেশ দাস
ভাবনা এবং গল্পঃ দেব বড়ুয়া
সৌভিক ঘোষের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা সহকারে

|| কিশলয়- ৩ ||
কোলকাতাতে পড়তে যাবার জন্য যখন তুই পলাশগ্রাম ছাড়লি, তখন তোর রতনকে তুই এই কিশলয় ডায়েরীটা দিয়েছিলি । আজ সেটা আমার হাতের অক্ষরে ভর্তি।

ছবিতেঃ আকাশ, রাহুল
ছবি তুলেছেনঃ প্রতিক কর্মকার
সাজসজ্জাঃ অংকন আবেশ দাস
ভাবনা এবং গল্পঃ দেব বড়ুয়া
সৌভিক ঘোষের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা সহকারে

|| কিশলয়- ৪ ||
ভেসে যেতে চেয়েছিলাম তোর সাথে কাগজের নৌকাতে, তোর কি মনে পড়ে পলাশগ্রামের সেই রাঙাপুকুর ? যেখানে আমি আর তুই বন্ধুত্বের নৌকা ভাসাতাম ।

ছবিতেঃ আকাশ, রাহুল
ছবি তুলেছেনঃ প্রতিক কর্মকার
সাজসজ্জাঃ অংকন আবেশ দাস
ভাবনা এবং গল্পঃ দেব বড়ুয়া
সৌভিক ঘোষের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা সহকারে

|| কিশলয়- ৫ ||
সেই ছোঁয়া আমার আজও মনে পড়ে । বঙ্কু এটা ছিল তোর আর আমার শৈশবের শেষ স্পর্শ।

ছবিতেঃ আকাশ, রাহুল
ছবি তুলেছেনঃ প্রতিক কর্মকার
সাজসজ্জাঃ অংকন আবেশ দাস
ভাবনা এবং গল্পঃ দেব বড়ুয়া
সৌভিক ঘোষের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা সহকারে

|| কিশলয়- ৬ ||
সেই শৈশবের শেষ দেখা, তোর রতনকে রাঙাপুকুরে বলতে এসেছিলি ” রতন আমি কোলকাতা চললুম পড়াশুনো করতে ।”
আমি অবাক চোখে বলেছিলুম ” ভালো থাকিস ।”

ছবিতেঃ আকাশ, রাহুল
ছবি তুলেছেনঃ প্রতিক কর্মকার
সাজসজ্জাঃ অংকন আবেশ দাস
ভাবনা এবং গল্পঃ দেব বড়ুয়া
সৌভিক ঘোষের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা সহকারে

|| কিশলয়- ৭ ||
কিশলয় ডায়েরীটা আজও আমার অক্ষর বহন করে চলছে এই কথার যে, পলাশগ্রামের সেই গোল্লামাঠে আমার ঘুঁড়ি ওড়ান আর তোর লাটাই ধরা।

ছবিতেঃ আকাশ, রাহুল
ছবি তুলেছেনঃ প্রতিক কর্মকার
সাজসজ্জাঃ অংকন আবেশ দাস
ভাবনা এবং গল্পঃ দেব বড়ুয়া
সৌভিক ঘোষের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা সহকারে

|| কিশলয়- ৮ ||
যেদিন তুই কোলকাতা থেকে ফিরে এসেছিলি, সেদিন তোর রতনের কাছে ধরা দেওয়ার জন্য পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিলি । আমার অভিমান মেশানো কথা ” আমাকে মনে পড়েছিল ?”
তোর অবুঝ মন বলেছিল ” হ্যাঁ “

ছবিতেঃ দেব, সুদীপ্ত
ছবি তুলেছেনঃ প্রতিক কর্মকার
সাজসজ্জাঃ অংকন আবেশ দাস
ভাবনা এবং গল্পঃ দেব বড়ুয়া
সৌভিক ঘোষের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা সহকারে

|| কিশলয়- ৯ ||
দেখ ভাগ্যের কি পরিহাস , আমি আর তুই পলাশগ্রামের এই কদমগাছের তলায় কত খেলা খেলেছি।

ছবিতেঃ আকাশ, রাহুল
ছবি তুলেছেনঃ প্রতিক কর্মকার
সাজসজ্জাঃ অংকন আবেশ দাস
ভাবনা এবং গল্পঃ দেব বড়ুয়া
সৌভিক ঘোষের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা সহকারে

|| কিশলয়- ১০ ||
সেই পলাশগ্রামের গোল্লামাঠের কদমগাছকে সাক্ষী রেখে তোর রতন আজ তোকে জানাতে চায় – ” বঙ্কু আমি তোকে ছোট বেলা থেকে আজও ভালোবাসি , ঘর বাঁধতে চাই ।”

ছবিতেঃ দেব, সুদীপ্ত
ছবি তুলেছেনঃ প্রতিক কর্মকার
সাজসজ্জাঃ অংকন আবেশ দাস
ভাবনা এবং গল্পঃ দেব বড়ুয়া
সৌভিক ঘোষের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা সহকারে

|| কিশলয়- ১১ ||
বঙ্কু এ তুই কি শোনালি আমায় – ” শহরে লেখাপড়া করিছি ঠিক কথা, আমিও তোকে ভালোবাসি কিন্তু তা ঘর বাঁধার জন্য না । তুই আমার বাল্য বন্ধু সারাজীবন থাকবি।”

ছবিতেঃ দেব, সুদীপ্ত
ছবি তুলেছেনঃ প্রতিক কর্মকার
সাজসজ্জাঃ অংকন আবেশ দাস
ভাবনা এবং গল্পঃ দেব বড়ুয়া
সৌভিক ঘোষের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা সহকারে

|| কিশলয়- ১২ ||
এই দেখ বঙ্কু তোর দেওয়া সেই কিশলয় ডায়েরী যা আমার হাতের অক্ষরে আজ পরিপূর্ণ । তাতে শুধু বঙ্কুর ভালোবাসা। তোর রতনের কি কোন ভুল আছে তাতে , সে’তো তোকেই দেখে। ঠিক যেমন তুই কৃষ্ন আমি তোর বিরহিনী রাধা ।

ছবিতেঃ দেব, সুদীপ্ত
ছবি তুলেছেনঃ প্রতিক কর্মকার
সাজসজ্জাঃ অংকন আবেশ দাস
ভাবনা এবং গল্পঃ দেব বড়ুয়া
সৌভিক ঘোষের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা সহকারে

|| কিশলয়- ১৩ ||
কল্পনাও বাস্তব হয় ? সকল না পাওয়া অনুভূতিগুলি , না চাইতে নিজে থেকে ধরা দিল। আমাদের সাক্ষী থাকল এই গভীর রাত্রি।

ছবিতেঃ দেব, সুদীপ্ত
ছবি তুলেছেনঃ প্রতিক কর্মকার
সাজসজ্জাঃ অংকন আবেশ দাস
ভাবনা এবং গল্পঃ দেব বড়ুয়া
সৌভিক ঘোষের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা সহকারে

 

|| কিশলয়- ১৪ ||

রাত্রি পেড়িয়ে নতুন দিনের আলোতে রঙিন হলাম ঠিকই কিন্তু বঙ্কু সেই ঘর বাঁধার সাহসটা পেল না ।

ছবিতেঃ দেব, সুদীপ্ত

ছবি তুলেছেনঃ প্রতিক কর্মকার

সাজসজ্জাঃ অংকন আবেশ দাস

ভাবনা এবং গল্পঃ দেব বড়ুয়া

সৌভিক ঘোষের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা সহকারে

 

~~~~~~ *** ~~~~~~~

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *