যৌনতায় যখন পরিচয়/সমাপ্তি পর্ব

যৌনতায় যখন পরিচয়/সমাপ্তি পর্ব

— অবকাশে সঞ্জয়

– মহাশয়ের পরিচয়?

– কোন্‌ পরিচয় জানতে চান?

– এ আবার কেমন প্রশ্ন? আপনার পরিচয় জানতে চায়।

– একজন মানুষের তো অনেক রকম পরিচয় হয়। আপনি কোন্‌ টা জানতে চান?

– তাই নাকি!

– হ্যাঁ। আপনার এ নিয়ে কোন সন্দেহ আছে নাকি?

– না, ঠিক সন্দেহ নয়। কিন্তু কেমন একটা ধন্দ লাগছে।

– আমি সেই ধন্দ কাটিয়ে দিচ্ছি। আপনি বলুন তো ঋতুপর্ণ ঘোষ কে ছিলেন?

– কে আবার! একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক। আচ্ছা উনি কি সত্যিই ছেলে হয়ে আরেকটা ছেলের সঙ্গে…

– সত্যজিৎ রায় কে ছিলেন?

– ওরে বাবা, উনিও বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক। একমাত্র বাঙালী যিনি অস্কার পেয়েছেন। – ঋতুপর্ণ ঘোষও প্রচুর আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। আপনি কিন্তু সেই আলোচনায় গেলেন না।

– না মানে…

– মানে আবার কি? আপনি ঋতুপর্ণ ঘোষের অন্য আরেকটা পরিচয় জানতে চাইছিলেন। আর সেটা হল, ওনার যৌন পরিচয়। তাই তো?

– না, হ্যাঁ। আসলে…

– আসলে একজন মানুষের কর্ম পরিচয় বা অন্য কোন পরিচয় তা সে যতই খ্যাতি দিক না তাকে, তিনি যদি যৌনতায় সংখ্যালঘু হন, তাহলে সংখ্যাগুরুরা তার সব পরিচয় বাদ দিয়ে কেবল যৌন পরিচয় নিয়েই কথা বলেন।

– হুম। আসলে…

– আসলে মানুষ যৌনজীবী। যৌনতা নিয়ে কথা বলার সুযোগ পেলে আর অন্য কিছু নিয়ে কথাই বলতে চাই না।

– কিন্তু…

– কোন কিন্তু নেই এর মধ্যে। যে যৌনতা একজন মানুষের ব্যক্তিগত, গোপনীয় অধিকার। যা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করা নিষিদ্ধ করা দরকার, তা কিনা মানুষের পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

– সত্যি। ঠিক বলেছেন তো। যৌনতা কখনও মানুষের পরিচয় হতে পারে না।

– কিন্তু এমন দুর্ভাগ্য, যৌনতায় পরিচয় হয়ে দেখা দেয়। দেখা দিলে ক্ষতি ছিল না। ক্ষতি তখন হয়, যখন মানুষের কর্মক্ষমতা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা এই যৌনতার দাঁড়িপাল্লায় তুলে মাপা হয়।

– ঠিক। আচ্ছা এসব কি কোনদিনও বন্ধ হবে না?

– জানি না। তবু আশায় তো থাকি। একদিন নিশ্চয় মানুষ বুঝবে যৌনতা নয়, কর্মই আমাদের একমাত্র পরিচয়।

[ছবিঃ অরূপ দাস]

(সমাপ্ত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *