লিঙ্গ পরিবর্তনের পরেও বাংলা সংবাদমাধ্যমে মৃত “যুবক” যুবতী হতে পারলোনা?
— অনিরুদ্ধ (অনির) সেন
নাহ! হেরে গেলো শরৎ। আট মাস আগে লিঙ্গ পরিবর্তন করেছিলো, ইচ্ছে ছিলো বিয়ে করবে আদিত্যকে। কিন্তু নতুম বছরের সূর্য দেখার আগেই, ঝরে পড়লো শিউলির মতো। এ সব খবরই পাওয়া গেলো আনন্দবাজার পত্রিকায় ২রা জানুয়ারি প্রকাশিত নিবন্ধের হাত ধরে। খুন না আত্মহত্যা সে’সব নিয়ে ধন্দ না হয় পুলিশের থাকতেই পারে, সে’সবই অনুসন্ধানসাপেক্ষ। কিন্তু শরৎ কোন ব্যকরণ মেনে “যুবক” হয়ে উঠলো আনন্দবাজারের সাংবাদিকের চোখে?
যে নিবন্ধ নিজেই জানায় যে শরৎ লিঙ্গ পরিবর্তন করেছে, সেই নিবন্ধে তাকে “যুবতী” না বলে “যুবক” বলার যৌক্তিকতা কি? যেকোন মানুষের মৃত্যুই দুঃখজনক। আর তার সাথে মৃত্যুর পর তার লাশের লিঙ্গ পালটে দেওয়া। আচ্ছা জানতে খুব ইচ্ছে করছে, তার কি শেষকৃত্য হয়েছিলো? কিভাবে হয়েছিলো? পুরুষ হিসেবে? না কি নারী হিসেবে? যে ক’দিন বেঁচেছিলো, অন্য কোন নাম নিয়েছিলো কি?
যৌন-লিঙ্গ-প্রান্তিক মানুষ মৃত্যুর পরেও সুবিচার পায়না। লাশেরা জেগে ওঠেনা, মড়া রক্তশূন্য হাত নিজের শক্তিতে সিঁদুর কৌটো আঁকড়ে ধরতে পারেনা। পারেনা খবরের কাগজে নিজের নামের পাশে লেখা “যুবক” বিশেষণটিকে মুছে দিতে।
শরৎ নিজেকে কি ভাবতে ভালোবাসতো, ছেলে, মেয়ে, না কি অন্য কিছু, আমিও জানিনা। আনন্দবাজার লিখেছে, বিয়ে করবে বলেই নাকি সে লিঙ্গ পরিবর্তন করিয়েছে। শুধু এই ইচ্ছের উপরেই ভিত্তি করে নিশ্চয়ই কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তাকে জেন্ডার ডিসফোরিয়া সার্টিফিকেট দেয়নি।
সব গুলিয়ে গিয়ে জানিনা তবু কেন আমার আজকে ঐ লাশটার জায়গায় চেঁচাতে ইচ্ছে করছে। ভাবছি, আমার পরিচয়টাও কি কেউ কেড়ে নেবে আমার মৃত্যুর পর? এভাবেই অপমান করবে আমাকে? তখন তো আমি আর চেঁচাতে পারবোনা। তাই হয়তো এখন চেঁচিয়ে নিচ্ছি। আচ্ছা, যদি আমি মড়ে যাই, আমার পরিচয়কে যদি বিকৃত করে আবার এই সংবাদমাধ্যম, তাহলে আমার হয়ে কে চেঁচাবে? শরতের কিছু শিউলিফুলের কাছে এই অমিমাংশিত প্রশ্ন রেখে যাওয়া ছাড়া আর হয়তো এই মূহুর্তে কিছুই করার নেই। তবু চেঁচানিটুকু থাকুক।
আনন্দবাজারের খবরের লিঙ্কঃ
https://www.anandabazar.com/calcutta/mystery-as-young-persons-boy-found-at-baguiati-flat-1.925110
ছবিঃ ভুটান