কয়লাঝোরার গপ্পো

————- ১ ————–

বাড়ির বড়ো বৌ ব্যাপারটা প্রথম থেকেই ভালো চোখে নেয়নি। বিয়ের পরের দিন থেকেই সে যেন একটা গভীর অশান্তিতে ভুগছিলো। তার আচার-আচরণ, গতি-প্রকৃতি যেন স্বাভাবিক ছিলোনা কিন্তু সবার মনে একটিই প্রশ্ন জেগেছিলো কি হয়েছে বড়ো বৌয়ের?- বিয়ের পরের দিন যখন প্রতিবেসিনীরা এলো নতুন বৌ দেখতে, তাদের মধ্যে হঠাৎ একজন বলে উঠলো “আচ্ছা বৌ বিয়ে কইরতে এলে বটে কিন্তু সতিন লিয়ে ঘর কইরতে পারবেক বটে লাকি পারবেক লাই?” অজানা এই কথাটা শুনে বড়ো বৌ চমকে গেলো! আরো দুএকজন তার কথায় সায় দিয়ে মজার ছলে বলতে লাগলো সতিন গো, সতিন। আমাদের বড়ো ছিলার সঙ্গে উয়ার আট বছরের মিলা মিশা, রঞ্জন অফিস গ্যালেক কিনা, তার জামাকাপড় ঠিক আছে কিনা, কাগজপত্তর এমন কি কোনদিন কোন জামাটো পইরবে তা সব ঠিক করে দিতেক বটে। সব নিখুঁতভাবে করা চাই উয়ার। চোখদুটি নামিয়ে থাকা নতুন বৌ উত্তর দিলো –“তা সতিন যখন আছে তখন আমাকে অগত্যা বরণ করে আনলেন কেন? —- আমি তো এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা।” শ্বাশুড়ি এতক্ষন চুপ ছিলো, সে শুধুই প্রতিবেশিনীদের মজা দেখছিলো কিন্তু নতুন বৌয়ের ছোট মুখখানা না দেখতে পেরে বললেন “না বৌমা! ওরা মজা করছে। আমার রঞ্জনের প্রিয় বন্ধুর কথা বলছে, কিন্ত দুজনে এতোই ভাব-বন্ধুত্ব যে পাড়াপ্রতিবেশীরা ওদের নিয়ে অনেক ঠাট্টা তামাশা করে।”

– “কিন্তু তাকে যে দেখলাম না, আমাদের বিয়েতে আসেনি বুঝি?”

– “আসবে কি করে, ওর যে এম এ পরীক্ষা চলছে। লেখা-পড়া, গান-বাজনা, হাতের কাজে কতো জ্ঞানী গুণী মানুষকে হার মানায়। দেবী সরস্বতী যেন তার একমাত্র সহায়। যেমন শিক্ষা-দীক্ষা তেমনি আচার-আচরণ, তেমনি সুন্দর বাক্যালাপ। —-
তোমার সঙ্গে আলাপ হলে তুমিও অভিরূপ অভিরূপ করে অস্থির হয়ে উঠবে। ও এমনই ছেলে সক্কলের মন জয় করে নিতে পারে।”

বড়ো বৌয়ের অশান্তির মূল কারণ হোলো এই অভিরূপ। সে রীতিমতো রঞ্জনকে সন্দেহ করতে থাকে। কিন্তু এই সন্দেহ সেই দিনই বিশ্বাসে পরিণত হোলো যেদিন গভীর রাত্রে রঞ্জন অত্যাধিক মদ্যপ অবস্থায় বিছানায় অভিরূপ অভিরূপ বলে কাঁদছিলো আর বলছিলো – “আমি তোমায় দূর করতে চাইনি, আমি তোমায় অবহেলাও করতে চাইনি, আমি তোমায় নিঃস্বার্থেই ভালবেসেছিলাম, কাছে পেতে চেয়েছিলাম। আমার করে রাখতে চেয়েছিলাম —- কিন্তু সমাজ যে বড়ো কঠিন জিনিস অভি! মনকে বেঁধে রাখতে হয়। মন যা চায় তাকে গলা টিপে মেরে আজ আমি সমাজের আদেশে গাধার মতো অবিবেচক হয়ে এ চরম বোঝা বহন করছি।”
অবশ্য পরদিন সকালবেলায় এ কথা বড়ো বৌ জিজ্ঞেসা করেছিলো, কথাগুলো বলেওছিলো রঞ্জনকে, কিন্তু রঞ্জন কেন বলেনি বলে অস্বীকার করলো তা বড়ো বৌয়ের জানা ছিলোনা।

————- ২ ————–

বৌভাতের দিন সারারাত অভিরূপ দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি। পরের দিন তার এইঠথ পেপার পরীক্ষা। বইগুলো সে নাড়ে আর চাড়ে। আর চোখের জলে বইয়ের লেখাগুলো যেন বই ছেড়ে ভেসে উপরের দিকে উঠে আসে। খুব ভোরে গিয়ে রঞ্জনের বাড়িতে কড়া নাড়তেই রঞ্জনের মা বেরিয়ে আসে – অভিরূপের দৃষ্টি কিন্তু রঞ্জনের বেডরুমের দিকে। ভোরের অস্পষ্ট আলোয় সবকিছু যেন পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলো। অভিরূপ এমনকি নিশ্ছিদ্র দরজা-আঁটা বেডরুমের ভেতরটাও পরিষ্কারভাবে দেখতে পেলো।

– “কি রে এতো সকালে অভি, কিছু বলবি?”
– “কিছুনা মাসিমা। ঐ পরিক্ষা দিতে যাচ্ছি তাই আশীর্বাদ নিতে এলাম। এই বলে টক করে একটা প্রণাম করে।”
– “কি আর বলি তোমাকে আশীর্বাদ করলাম। এই পরিক্ষাতেও যেন তোমার ভালো রেসাল্ট হয়।”
– “আসি মাসিমা।”

ট্রেনে জানলার পাশে বসে দূরদিগন্তে চোখ মেলেছে অভিরূপ – আর মনে পড়ছে ফেলে আসা আট-আটটি বছরের সুন্দর স্মৃতি। রঞ্জনকে স্পর্শ করার প্রথম আনন্দ, রঞ্জনের সেই গন্ধ, সে যে আজ বারবার অনুভব করছে। ঠোঁটে ঠোঁট রেখে রঞ্জন যেন অভিকে নিংড়ে নিয়েছে বারংবার। তার স্পর্শের কথা বারবার মনে পরাতে শিহরিত হচ্ছিলো, এতো গভীর দুঃখের মধেও পুলক লাগছিলো তার মনে। তার অজানা ছিলোনা ফুলশয্যার রাতে নতুন বৌয়ের সাথে রঞ্জন কি ঘটনাই ঘটাবে।
কিন্তু অভি যেন কলের পুতুল। মনের ইচ্ছার কথা আজ সে বলতেও পারেনা গিলতেও পারেনা। অভিনয় করে চলতে হয় তাকে সর্বক্ষন। সে একটি সুন্দরী শিক্ষিতা লাবণ্যময়ী নারী হওয়া সত্ত্বেও একটি বদমেজাজি দুষ্টু ছেলের অভিনয় করছে সারাদিন সারাক্ষন সারাসময়। এভাবে নিজেকে তো ফাঁকি দিলোই পরিবার পরিজন আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবদের কাছে সে ভয়ে ভয়ে থাকে। এবং সচেতন থাকে তার এই অভিনয় যেন অন্যের চোখে ধরা না পরে।
রঞ্জন ও অভি বহু সুখের মুহুর্ত একসঙ্গে কাটিয়েছে, বহু জায়গায় একসাথে ঘুরেছে, দুজন দুজনকে জেনেছে চিনেছে। তবুও অভির ইদানীং মনে হচ্ছে রঞ্জন যেন দিনদিন বদলে যাচ্ছে। কথা-বার্তা চাল-চলন আদব-কায়দায় বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
সেদিন সকাল থেকে বাইরের আকাশটা যেন মুখগোমড়া করে ছিলো। এখন অভি আর রঞ্জন প্রায় দুজন দুজনের থেকে দূরে চলে গেছে। অভি ফোন করলে তার ফোন কেটে দেওয়া হয়। ফোন অফ ও করে দেয়, রঞ্জন একটি কথা তার আবেভাবে পরিষ্কার করে বোঝাতে চায় যে সে অভিকে পছন্দ করেনা। সে তার পরিবারকে নিয়ে সুখে থাকতে চায়।
তার এই ছলনার কথাটুকু শুধুমাত্র তিনিই বুঝলেন যিনি আমাদের সবার উপরে অন্তরিক্ষে বসে মজা দেখছেন।
অভি খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। এখন শুধু ঘনঘন মূর্ছা যায়। দিনদিন যেন সে পাগল হয়ে যেতে থাকে। দেহ শীর্ন , চুল ঝাঁকা, তার চোখদুটো উগ্রভাবে ঘোরে দিনরাত। মূর্ছাব্যামো অভিকে ধরলো। অভি আর নিজেই নিজের মধ্যে থাকেনা। সে পিছিয়ে পরে অতীতের সুন্দর দিনগুলিতে।
বাড়ির লোকের অশান্তি, ডাক্তার-বদ্যি এমনকি পাগলাখানাও যেতে বাকি রাখেনি।
রঞ্জন আর ফিরে আসবে কিনা সে বারবার জানতে চায়। রঞ্জন এসেছিলো কিনা এও সে জানতে চায়, রঞ্জন কেন চলে গেলো এ প্রশ্নের জবাব কেউ দিতে না পাড়লে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে। পাড়ার লোকে বললো উন্মাদ হলেক বটে!…..

————- ৩ ————–

“হ্যা লা বড়ো বৌ, তুই যে জোড় খুলে এলিক বটে তার পরটতে তুই এতো চুপ্টো মেরে গেলিক ক্যানে? মুদের রঞ্জন তুকে কি কিছু বলিছে?”
— “নাহ!”
(কিছুক্ষন থেমে) “না জেঠিমা, তেমন নয়, আর সব কথা যে বলবে তবেই বুঝবো এমন নয়, কিছু সময় চুপ করেও সব কথা বলা যায়। আবার যায়ও না।” (দীর্ঘনিঃশ্বাস)
এই বলে বড়ো বৌ রান্নাঘর থেকে চায়ের কাপখানি নিয়ে গিয়ে রঞ্জনের ঘরে টেবিলে জোরে নামিয়ে দিলো। রঞ্জনও চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বাইরের অবিশ্রান্ত বৃষ্টির দিকে চোখ রাখলো। কিন্তু তার ঘরের ভিতরে যে একখানা কালো মেঘ জমেছে তা সে খেয়াল করলোনা।
তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের কি দুখের সেটা আর তাদের ঘরের বাইরের লোক বুঝলোনা। তবে এক সন্ধ্যাবেলায় আলোচনায় শোনা যায় — “উ কি আর বিহাটো কইরতো? উ টাকার লিগে এই সাতদিনের মাথাতে বিহাটো করিছেক বটে। যেদিন উয়ার বাপ্টোর ক্যানসার ধরা পরেছিলেক সেই দিন থেকেই বুঝেছিলাম বটে। — দেখলে নাই? উ আর অভিরূপ দুজনে মিলে একমাসের মতো মুম্বাইতে ছিলেক বটে।”
“হুম! বড়ো বৌঊয়ের শ্বাশুড়ি খুব চাপা স্বভাবের বটে। উরা কিছু জানতে পারেক লাই। আজ রঞ্জনের সাথে বড়ো বৌয়ের ঝগড়ায় ইটো বুঝতে পাইরলম।”
“তাহইলেক কি বড়ো বৌঊয়ের সংসারে সুখ লাগ্লেক নাই?”
“না না, উ মোদের রঞ্জনকে ঠিক বাগে আনতেটো পাইরবেক বটে।”
“অ্যাকে শহুরে মিয়া, তার উপরে বিদ্যেটও আছে শুনি।”
“জানিস! মু একদিন রঞ্জনের বুন্টোকে বইলতে শুনেছিলাম উয়াদের ঘরটোতে যেন অভিরূপের মতো স্বভাবের একটি মিয়া আসে, তা হইলেক ওর দাদাটোকেও খুব ভালোবাসবেক আর উয়াদের সংসারটোকেও।”
“ই মা! বলিস কি! ইটো কি কইরে হবেক? উটো ব্যাটা ছিলা বটেক।”
“না রে, উয়ার মতো স্বভাবটো বলিছিলেক, উয়া কে তো বলে নাই।”
সেদিনকার বর্ষা যেন শেষ হতে চাইছিলোনা। এদিকে বড়ো বৌয়ের দুই চোখ যেন ভরা শ্রাবণ, সেই দিনই বড়ো বোঊ কি যে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো তা শুধু সেই জানলো।

————- ৪ ————–

আজ ২২শে শ্রাবণ। কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস, দূর থেকে কোন এক ক্লাব থেকে কবির গানের সুর ভেসে আসছে। অভিরূপ কবিগুরুর সামনে ধূপকাঠি জ্বেলে প্রণাম জানিয়ে জানলার দিকে চেয়ে রইলো। অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে বাইরে ঠিক যেমন পাঁচ বছর আগে পড়েছিলো। – দেখতে দেখতে পাঁচ বছর কেটে গেলো রঞ্জনের বিয়ের। রঞ্জনের ব্যক্তিগত ব্যাপার এখন অভিরূপ জানেনা। তবে শোনা যায় ওর এখনো সন্তান হয়নি। প্রতিবেশিনীরা বলে “কি করে আর উয়ার ছিলাটো হবেক? অভিরূপ যে পৈতাটোতে গিট্টাটো মেরে দিছে।” – তবে শিক্ষিত সমাজ জানে এটা এক ধরনের কুসংস্কার, এরম কিছু হয়না।
পাঁচ বছরের আগের অভিরূপ আর এখনকার অভিরূপের অনেক তফাত। আবেগপ্রবণ চট করে ভেঙ্গে পড়া অভিরূপ এখন বিচক্ষন সাবলীল।
বাড়ির লোক বিয়ের জন্য জোর করলেও সে না বলে এমন নয়। কিন্তু বলে “মা! বৌ এলে যে তোমার ভালোবাসায় ভাগ পড়বে। আর সে ভাগ আমি তোমার উপর বসাতে পারবো না।” – মা খালি দুষ্টু ছেলে বলে চুপ করে যায়।
পাঁচ বছর আগে ২২শে শ্রাবণের দিন রঞ্জন অভিরূপকে ফোন করে প্রথম বিয়ের কথা বলেছিলো। খুব দুঃখ লেগেছিলো ও খুব কেঁদেছিলো। সে ভেবেছিলো সে একা। সে নিঃস্ব। সে অসহায়। কিন্তু আজ সে জানে সে একা নয় – তাই সে রঞ্জনকে লিখেছে

“সৃষ্টিকর্তা তৈরি করার সময় পুরো পুরো সময় দেন নি
রেখেছেন আধাআধি করে
মিল হয়নি অন্তরে বাহিরে
মিল হয়নি সেকালের আর আজকের
আমাকে তুলে দেননি এই যুগের পাড়ানির নৌকোয়”

আবার সে কখনো লেখে

“মোর লাগি করিওনা শোক
আমার রয়েছে কর্ম, আমার রয়েছে বিশ্বলোক
মোর পাত্র রিক্ত হয় নাই।”

যাই হোক, কিন্তু কোনদিন সে আর এই চিঠিগুলো রঞ্জনকে পোস্ট করেনি। কারণ সে আর কেঁচেগণ্ডূষ করতে চায়না।
হঠাৎ রঞ্জনের বিবাহবার্ষিকীর দিন কোন এক চৌমাথায় দুজনের দেখা। বৃষ্টি, অভিরূপ শৌখিন তাই সুবেশ, ছাতা হাতে। অন্যদিকে রঞ্জনকে দেখে চেনা জায়না, দেখে মনে হয় সে যেন সংসারের চাপে খুবই ক্লান্ত। একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কারোর কোল সে চাইছে। হয়তো অভিরূপেরই, কিন্তু সে সাহস নেই। যা হারিয়ে গেছে তা ফিরে পাওয়ার চেষ্টাই হয়তো নেই।
দুজন মুখোমুখি – আগে কথা ফুরোতোনা, কথা কুলোতোনা, সময় ফুরিয়ে যেত, আজ যেন দুজনকে কথা খুঁজে আনতে হয়। তাই দুজনে একসাথেই বলে বাড়ীর লোকজন কেমন? কাকু-কাকিমা সবাই ভালো তো? যেন তারা আরোপিত কোন নাটকের সংলাপ বলছে। কিছুক্ষন পর রঞ্জন চোখ নামিয়ে বিনীত ভাবে বলে “অভিরূপ আমার সেই আগের মোবাইল নম্বরটাই আছে। – আমিও নম্বর বদলাইনি।”
এমন সময় ফুচকাওলার জোর ডাকে তাদের চোখে চোখ শান্ত কোমল মিলনে যেন ছন্দপতন ঘটে।
“ও রঞ্জন বাবু। তুদেরকে অনেকদিন পরে একসাথে দেখলাম বটে। বহুত আগে তুরা তো রোজ মুর দোকানটোতেই ফুচকা খেতিস। মুর দোকানে ফুচকাটো না খেলে দিন্টোই কাটতোনা। আর আগে, অভিরূপের আমার বানানো চাট ফুচকাটো দেখে জিভে জল্টো আসতো। উ এখন বলে ফুচকা খাইনা। ডাক্তারে নাকি মানা করিছে। আজ যখন তুরা একসাথে আছিস লে কেনে, ফুচকাটো খেয়ে যা।” রঞ্জন বললো সে খাবেনা। অভিরূপ খেলো। রঞ্জনের কাছে আর ঋণ না বাড়তে দিয়ে অভিরূপ পয়সা মিটিয়ে দিলো।
বাড়ি এসে অভিরূপ রঞ্জনের একটা কথা খুব চিন্তা করে বুঝলো। আজ রঞ্জনের বাড়ি রান্না হয়নি। হয়তো সে চাইছিলো অভিরূপের বাড়িতে আজ খাবার খাবে। এই কথায় গুরুত্ব দেয়নি অভিরূপ। কিংবা পুনরায় আর নতুন কিছু শুরু করতে চায়না। রঞ্জন চোখ মুখে যে ভাব প্রকাশ করতে চাইছিলো সে কথা বোঝার মতো আজ অভিরূপের সময় নেই। কিংবা হয়তো রঞ্জনের কাছে নিজেকে স্বাবলম্বী দেখানোর চেষ্টা করেছে।
রঞ্জনরা আর এখন অভিরূপের গ্রামে থাকেনা। বড়ো বৌ তিন বছর আগে রঞ্জনের সঙ্গে শহরের একটি ছোট ভাড়া বাড়িতে থাকে। এও শোনা যায় বড়ো বৌ নাকি তার শ্বাশুড়িকে ভাত দেয়না। তার শ্বাশুড়ি ছোট ছেলের বৌমা আর নাতি নিয়ে অন্য এক জায়গায় বাসা বেঁধেছে।
কিন্ত বড়ো বৌয়ের মনে সেই যে সন্দেহের বীজ বিয়ের প্রথম রাতে প্রতিবেশিনীরা বপন করেছিলো তা ধীরে ধীরে যেন বিষবৃক্ষে পরিনত হয়েছে। তার ফল যে বিষময় হবে তা সবার জানা।
সেদিন শোনা গেলো “রঞ্জনের নাকি পাশের বাড়ির লাপিতদের ছোট বিটিটার সাথে ফষ্টিনষ্টি চলছেক বটে। আবার আপিসে কোন স্টাফের সঙ্গে মেলামেশা কইরলে বড়ো বৌ নাকি উয়াকে সন্দেহটো করে।”
কেউ উপযাচক হয়ে অভিরূপকে এ কথা বললে সে পাত্তা দেয়না। হয়তো বা কষ্ট পাবে বলে শোনেনা।

————- ৫ ————–

অভিরূপ নিজের একটা জগৎ গড়ে তুলেছে। সেটা অবশ্য তার পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবের সাহায্যেই সে পেরেছে।
রঞ্জনের সাথে দেখা হওয়ার সময় অভিরূপ বানিয়ে মিথ্যে করে বলেছিলো কলকাতায় তার নাকি কোন দেবাঞ্জন নামের ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছে। এবং সে তার সাথে পুরো জীবনটা কাটিয়ে দেবে – অনলাইন থেকে ডাউনলোড করা কিছু ছবিও দেখিয়েছিলো রঞ্জনকে। সে বুঝতে চেয়েছিলো এতে রঞ্জন খুশি? না মনের মধ্যে কালো গভীর ছাপ দেখা যাবে। সে তাকে পরিক্ষা করে নিতে চেয়েছিলো।
কথাটা কেন উঠলো তা বলি, আজ সন্ধ্যেয় হঠাৎ করে অচেনা এক নম্বর থেকে অভিরূপের এক ফোন আসে।

– “হ্যালো!”
– “হ্যাঁ! আমি অভিরূপ।”
– “আমি দেবাঞ্জন, কলকাতা থেকে বলছি।”

ছবিঃ ভুটান


<< কালিজা ২০২১ (৪র্থ বর্ষ) – সূচিপত্র


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *