লগ্ন

      No Comments on লগ্ন

-বাবু ওই বাবু, তাড়াতাড়ি কর; ওনারা চলে এসেছেন|

আসুন, আসুন, বসুন| তা আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?

-না না মিসেস্ পাল, কোনো সমস্যা হয়নি; ফাঁকা রাস্তা, একদম মাখনের মতো| হেঃ হেঃ, তা মিহিরবাবু কোথায় দেখছিনা যে|

-আর বলবেন না, বরযাত্রীর একটা গাড়ি বিগড়ে গেছে , তার বিকল্প ব্যবস্থার জন্যই উনি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন|

-যাক বিয়েতে তাহলে ছেলের বাবারাও ব্যস্ত হয়, শুধু মেয়ের বাবার একার ঝক্কি নয়| হাহাহা তা ছেলে কতদূর, রেডি হয়নি নাকি!

-না না এই তো হয়ে এসেছে মনে হয়| তা বেয়াই মশাই কেমন আছেন, একা হাতে পুরো জিনিসটা সামলানো|

– আরে আমরা-ওনার ভাইয়েরা তো রয়েছি, একা আর কোথায়!

-তা আপনিও তো যাবেন ছেলের বিয়ে দেখতে|

-হম্, যেতে তো হবেই, নাহলে যে ছেলে বলেছে বিয়েই করবে না| কি জ্বালা বলুন তো? কত বোঝালাম যে ছেলের বিয়ে মা কে দেখতে নেই, তবু সেই এক জেদ|

-আরে নানা মিসেস পাল, আজকালকার দিনে এসব আর কেউ মানে-টানে না|

-তাও, এতদিনের সংস্কার কি করে ফেলে দিই বলুন; মনটাতো খচ্ খচ্ করেই একটু|

মেয়ের কাককে আপ্যায়নে ব্যস্ত পাল গিন্নি মনে মনে উশখুশ করছেন ছেলে তৈরী হয়েছে কিনে দেখে আসার জন্য| এমন সময় দেখতে পেলেন ছেলের বন্ধু তমোঘ্নকে|

-এই তমোঘ্ন শোন একবার|

-বল কাকিমা কি বলছ?

-তমোঘ্ন ইনি হলেন সূর্যকান্ত দত্ত, বাবুর কাকাশ্বশুর| আর সূর্যবাবু এ হল তমোঘ্ন, বাবুর স্কুলের বন্ধু| শোন না তমো তোকে যা জন্য ডাকলাম- একটু দেখ তো উপরে গিয়ে কতদূর হল; ওনারা নিতে চলে এসেছেন, এতটা পথ যেতেও তো হবে|

-ঠিক আছে কাকিমা আমি গিয়ে দেখছি, তুমি ভেবো না; আর কাকিমা আমাদের গাড়ির কিছু হল|

-হম, তোর কাকু গেছেন ব্যবস্থা করতে| আর সব কোথায় রাজু, অনিমেষ, সমিত, ওরা যাবে না নাকি?

-ওরা তো সব অফিসে| সেখান থেকে যাবে| বৌভাতের দিন সবাইকে পাবে তুমি সকাল থেকে; ঐদিন সব ছুটি নেবে|

-কি রে ময়ূখ তুই এখনো রেডি হোসনি! ওনারা তো চলে এসেছেন তোকে নিতে|

-কারা?

-কারা আবার তোর শ্বশুরবাড়ির লোকজন|

-আমি যাব না, করব না বিয়ে, পালাব|

-ছেলেমানুষি করিস না ময়ূখ| এখন পালালে তোর আর তোর পরিবারের মান সম্মান কোথায় থাকবে বুঝতে পারছিস? কাকিমার কথা ভেবে দেখেছিস?

-আমিই শুধু সবার কথা ভাববো, আমার কথা কে ভাববে?

-তুই কিন্তু নিজেই বিয়েতে রাজী হয়েছিস|

-হম হয়েছিলাম তমোঘ্ন; কারণ সে সিদ্ধান্ত ছিল অভিমান করে , রাগ করে নেওয়া|

-জীবনের কিছু সিদ্ধান্তে আবেগ চলে না ময়ূখ| তাছাড়া তুই তো বলেছিলি যে কাজল নাকি তোকে পাত্তাই দেয়না, তোর মন বোঝে না, তাই তুইও এবার বিয়ে করে ওকে দেখিয়ে দিবি যে ও কি হারালো| তাহলে এখন নাটক মারাচ্ছিস কেনো ওর সাথে কাটানো বিছানার সময়গুলো আর পাবি না বলে!

-ফাজলামো করিস না তমোঘ্ন ভালোলাগছে না| মা-বাবার একমাত্র সন্তান হওয়ার মাসুল দিচ্ছি আমি|

-সেটা তো তুই জেনেশুনেই দিচ্ছিস| এতবছর পরেও তোর আর কাজলের সম্পর্কটাকে তুই তোর মা-বাবার কাছে তুলে ধরতে পারলি না, তাঁদের কাছে তোর চাহিদাটা তুলে ধরতে পারলি না, সেটা কি অন্য কেউ এে করে দিয়ে যাবে? কিছু দায়িত্ব নিজেকেও নিতে হয় ময়ূখ|

-আমি কি চেষ্টা করিনি?

-সেটা তো বলিনি| হয়তো করেছিস, তবে যতোটা দরকার ছিল ততটা করিসনি| উল্টে তুই কাজলকে নিজের সাফাই দিতে গেলি, ওকে বোঝাতে গেলি যে তুই নিতান্ত অসহায় হয়ে এই বিয়েতে রাজী হয়েছিস কর্তব্যের খাতিরে|

-হ্যাঁ , ভুল তো কিছু বলিনি, সত্যিটাই বলেছি| আমার জায়গায় তুই থাকলে তুইও তাই করতিস|

-তাহলে এখন আবার ন্যাকামি মেরে পালাবার কথা বলছিস কেনো? কর্তব্য করবি যখন ঠিক করেছিস সেটাই কর| খামোখা নিজের সুখ খুঁজছিস কেনো! আর নিজের সুখই যদি তোর কাছে বড় তবে এই কর্তব্য পালনের প্রহসন শুরু করার কোনো মানে ছিল না| শোন ময়ূখ কর্তব্য আর আত্মসুখ যখন একই মেরুতে থাকে না মানুষকে তখন বেছে নিতে হয় সে কোনদিকে যাবে|

-থাম তো| তোর জ্ঞানের কথা থামা এবার| আমাকে রেডি হতে হেল্প কর|

হ্যাঁরে তমো কাজল এখন কোথায়, আসবে নাকি?

-কোথায় আসবে?

-কেন বৌভাতে আসবে না তোদের সাথে! ওকে তো বলেছিলাম আসার জন্য|

-সবাই তো তোর মতো আর হাসিমুখে ভালোবাসাকে কর্তব্যের কাছে হেরে যেতে দেখতে পারে না|

-মানে?

-মানে! সবকিছুর মানে বোঝানো যায় না, আর ও কোথায় গেছে আমি অন্তত জানিনা| কেনো তোকে কিছু বলে নি?

-আমার সাথে কিছুদিন কথা হয়নি , কেমন ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে তুই তো জানিস|

-ওহ্, ঠিক আছে| রেডি হয়ে গেছিস, নীচে চল , অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছেন ওঁরা| সব নিয়েছিস তো?

-হম, চ|

“প্রিয় ময়ূখ, তোমার আগামী জীবন সুখের হোক| নতুন জীবন ভালো করে এনজয় করো| আমি চললাম নতুন ঠিকানায়| তোমার থেকে দূরে যাতে তোমার কর্তব্যের মাঝে আমি বাধা না হই| এই গোলাকার পৃথিবীতে হয়তো কোনোদিন দেখা হয়ে যাবে| ভালোবাসা নিও আর মেসেজটা পড়া হয়ে গেলে ডিলিট করে দিও|”

smsটা পাঠিয়ে কাজল সুইচ অফ করে দিল ফোনটা| একটু পড়েই প্লেনটা টেক-অফ করবে; নতুন শহরে, নতুন জীবন শুরু হবে কাজলের আজকের এই লগ্নে|

-এক্সকিউজ মি স্যার, উইন্ডোশিল্ডটা খুলে রাখুন প্লিজ|

-ওহ শিওর| কাজল শিল্ডটা তুলে দেয়| উড়ে যায় অতীত ফেলে ভবিষ্যতের লগ্নে|

ছবিঃ ভুটান


<< কালিজা ২০২১ (৪র্থ বর্ষ) – সূচিপত্র


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *