হিলের বারি

“কীরে আরাত্রিকা কাল তো ভ্যালেনটাইনস ডে! বেরোবিনা ,তোর উড বি হাসব্যান্ডের সাথে?” আরাত্রিকা শান্তভাবে ল্যাপটপে চোখ রেখে বললো “তুই জানিস ময়ূখ, আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিয়ার, আর আমার সেই উড বি পাইলট। আমার মা বাবা আমার জন্য সুখ কিনে এনেছে ছোটোবেলা থেকেই । আর আমার উড বি? হুমমম! তোকে তো বলেছিলাম যে, সে আমাকে প্রথম দিনই বলে দিয়েছে্‌ তার শুধু আমাকে দিয়ে পোষাবেনা ।আর সত্যি কথা বলতে আমার মনটা এখন আর ভালোবাসা চায়না । কারণ আমি জানি, ভালোবাসা বলে কোনো জিনিস হয়েনা”।

ময়ূখ বললো “তাহলে যে কলকাতায় ফিরেই, সেদিন সন্দীপ্তাদের বাড়ীর সামনে দিয়ে গাড়িটা ঘোরাতে বললি?”

আরাত্রিকা বলে উঠলো প্রতিরোধের ভাষায়, “দ্যাখ ময়ূখ, আমার মা বাবা আমার ভালো চায়্‌, আর আমি একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সাথে … ছিঃ! এখন আমার ভাবতেও ঘেন্না হয়! আর সন্দীপ্তা? কী আছে ওর? চালচুলোহীন বাউণ্ডলে একটা! ঐ তো একটা হোটেলে কাজ করে ! বাড়ী থেকে বার করে দিয়েছে ,এখন ঐ হোটেলেই থাকে “।

ময়ূখ বললো, “নারে আরু্‌ স্যান্ডি মানে আমাদের সন্দীপ্তা এখন হেড শেফ! আর রেষ্টুরেন্টে থাকেনা ! ও একটা ওয়ান বিএইচকে ফ্ল্যাট কিনেছে । সেদিন আমার নীতাকে নাকি বলেছে, তোর হিলের বারি মিস করবে! নীতাতো আসছেই, ওর থেকেই জেনে নিবি ! আমি আর নীতা তারপর বেরোবো ।।

আরাত্রিকা ল্যাপটকটাকে জোরে বন্ধ করে ময়ূখের দিকে তাকিয়ে বললো “ইতরটা আর কী কী ভাবে আমায় মিস করে তা বলেছে “?

ময়ূখ ভয়ার্তভাবে তাকিয়ে বললো “স্যান্ডি ঠিকই বলে তোর না হেব্বি রাগ” ।

আরাত্রিকা বললো “বাহ! আর কী বলেছেরে”?

নীতা ঘরে ঢুকে বললো “কীরে ,কেমন আছিস আরু “?

আরাত্রিকা বললো “আগে বল সন্দীপ্তার সাথে তোর এতো পিরিত কীসের “?

নীতা বললো “কী মুখের ভাষারে তোর? ও তোকে কত ভালোবাসে ! তোর বিয়ের খবর শুনেও, চোখের জল আটকে রেখ্‌ ধরা গলায় বললো ,তুই যেনো সুখে থাকিস! আর সিআইটি মোড়ের ফ্ল্যাটটা ,সিমরান না কেনালে…”

আরাত্রিকা বলে উঠলো “ওয়েট ওয়েট হু দ্য হেল ইস সিমরান ?”

ময়ূখ বললো “এমা জানিসনা? যার সাথে স্যান্ডি সেটল হবে! এইতো আর দেড়মাস মতো। আর স্যান্ডির মেয়েটাকে পছন্দ। তবে স্যান্ডি বলেছে ওর সাথে সেটল হওয়ার পরই আর তোকে নিয়ে আর কোনো কথা আমরা যেনো না বলি সিমরানের সামনে। বিকজ মে বি শি উইল ফিল হার্ট, আর ওরা এখন প্রায় … আর তোরও তো…”

আরাত্রিকা বললো “গাড়ীর চাবিটা নিয়ে আয়, আমি বেরোবো”।

ময়ূখ বললো “এই সময়”?

আরাত্রিকা বলল ঠান্ডা গলায় “হ্যাঁ”

বলেই, গাড়ির চাবিটা নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। ঘরের নিঃস্তব্ধতা ভেঙে নীতা আর ময়ূখ হাসতে হাসতে বললো “তীর একদম নিশানায় লেগছে।“

ময়ূখ বললো “ম্যাডাম, সবই আপনার জন্য”!

নীতা বললো “এখন নো দুষ্টুমি । ওয়েট ফর দ্য রেসাল্ট “।

ময়ূখ বললো “বাজি লাগিয়ে নাও। কাল ভালোবাসা দিবস। কাল কিছুতেই খারাপ খবর আসবেনা…”

… ওদিকে

সন্দীপ্তা হোটেল থেকে বেড়িয়ে দূরে দেখলো আরাত্রিকা গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে … নিজের গায়ে জোরসে চিমটি কাটলো সন্দীপ্তা, তারপর লুকিয়ে পড়ে ময়ূখকে ফোন করলো। নীতা আর ময়ূখ বললো “ঐ গাধাটার ফোন ।আরুকে দেখে লুকিয়ে পড়েছে”…

ফোন তুলেই বললো ময়ূখ “বল কী হয়েছে?”

নীতা বললো “কীরে বল?”

সন্দীপ্তা বললো “আরাত্রিকা আমাদের হোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে “…

ময়ূখ বললো “আরে পাগলা শোন ।ওকে তাতিয়ে আমরাই তোর কাছে পাঠিয়েছি ।তুই ওর হিলের বারি আজ খেয়েও বুক ঠুকে লড়াই করবি ভাই”।

নীতা বললো “ভাই আমরা আছি। তুই লড়ে যা…”

সন্দীপ্তা বললো “আরে! ও আমায় মেরে ফেলবে !ওর জুতোর হিলের দিকটা হেব্বি লাগে !ভাই, তোরা এসে ওকে নিয়ে যা …”

নীতা বললো “শোন, আমরা ফোনটা কাটছি । তুই না গেলে হেব্বি বাওয়াল দেবো ,এই বলে রাখলাম,”

বলে নীতা ফোন কেটে দিলো ।

সন্দীপ্তা বেরোতে গিয়ে দেখে আরাত্রিকা দাঁড়িয়ে। বললো “বেড়িয়ে আয়। নইলে খুব খারাপ হবে ।“

সন্দীপ্তা বললো “আরু, বিশ্বাস কর। ওরা আমাকে ফাঁসাচ্ছে!”

আরাত্রিকা বললো “আমি কী বলেছি শুনতে পেয়েছিস? বেড়িয়ে আয়!”

সন্দীপ্তা মাথা নীচু করে বেরোলো । আরাত্রিকা বললো “গাড়িতে ওঠ”

সন্দীপ্তা বললো “আরু তুই মদ খেয়েছিস ?”

আরাত্রিকা বললো “কেনো ? তোর সিমরান খায়না বুঝি “?

বলেই চিৎকার করে বললো “আমায় খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে গেছিলিস না তুই ?কীরে বল ?খুব তাড়া ছিলো না, তখন তোর? কী ভাবিস নিজেকে “?

সন্দীপ্তা বললো “তুই ড্রিঙ্ক করে আছিস, আর কত আঘাত করবি আমায় তু”?

আরাত্রিকা বললো “তুই কী বলেছিস নীতাকে? কীরে ?আমি তোকে জুতোর হিল দিয়ে মারি? ওয়েট “

বলেই আরাত্রিকা পায়ের থেকে জুতোটা খুলে, ছুঁড়ে মারলো সন্দীপতার দিকে। হিলের দিকটা লেগে সন্দীপ্তার হাত থেকে রক্ত পড়তে লাগলো।

সন্দীপ্তা বললো “তোর সাথে আমার কথা বলতেও রুচিতে বাধে। আমি চলে যাচ্ছি। তোর সাথে আজকেই সব শেষ আমার… আর , আমিতো তোর যোগ্য নই…”!!

আরাত্রিকা বললো “চুপ কর! নইলে কিন্তু, আমার হাতে আজ তুই খুন হয়ে যাবি “।

সন্দীপ্তা বললো “মেরেইতো ফেলেছিস !মরা মানুষকে আর কতবার মারবি?”

আরাত্রিকা এইবার সন্দীপতার কলারটা ধরে বললো “এই তুই উঠবি কী না গাড়িতে?”

সন্দীপতা বললো “না! উঠবোনা। কারণ আমার আত্মসম্মান আছে”।।

আরাত্রিকা বললো “কেনোরে আমাকে পেয়ে গেছিস বলে?”

সন্দীপ্তা বললো “মুখ সামলে কথা বলবি! একদম সিন ক্রিয়েট করবি না আমার অফিসের সামনে”।

আরাত্রিকা বললো “একশোবার করবো! দেখবি কী করবো এখনই আমার সাথে তুই গাড়িতে না উঠলে…” বলে্‌ই, বিয়ারের বোতলটা ভেঙে আরাত্রিকা নিজের হাতের শিরার কাছে ধরতেই, সন্দীপ্তা বললো “নাহ!আরু,,” বলে এগোতে যাবে, সেইসময় আরাত্রিকা বললো “এখনও সময় আছে ! গাড়িতে ওঠ…”

সন্দীপ্তা আরাত্রিকার মুখের দিকে তাকিয়ে জিঞ্জেস করলো “আর কত আঘাত করবি আমায়?”

আরাত্রিকা বললো “গাড়িতে ওঠ “!

সন্দীপ্তা চুপ করে গাড়িতে উঠলো ।আরাত্রিকা গাড়িটা সন্দীপতার ফ্ল্যাটের সামনে নিয়ে যেতেই সন্দীপ্তা বললো “দেখ আরু, তুই ঠিক করছিসনা। ওরা তোকে ভুল বুঝিয়েছে “।

আরাত্রিকা বললো “নাম গাড়ি থেকে আর নিজের ফ্ল্যাটের দিকে যা “

সন্দীপ্তা গাড়ি থেকে নেমে আস্তে আস্তে গিয়ে ফ্ল্যাটের চাবি খুলতেই, আরাত্রিকা বললো “লাইট জ্বালা”!

সন্দীপ্তা লাইট জ্বালাতেই আরাত্রিকা বললো “এখানেই তোর সিমরানকে নিয়ে ফুর্তি করিস, তাই নারে? আর আমাকে তো নিয়ে যেতিস অন্ধকারে, লেকের মধ্যে! কী, না চুমু খাবি! কী করেছিলিস আমার সাথে? আমাদের মধ্যে কী কী হয়েছিলো ,জানে তোর বর্তমান ?না কি …”

সন্দীপ্তার এইবার পুরোনো রাগটা মাথাচারা দিয়ে উঠলো। কোনোকিছুর পরোয়া না করে ,আরাত্রিকাকে টেনে নিয়ে বিছানায় ফেললো। আরাত্রিকাও বুঝে গেলো সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে। আরাত্রিকাকে সন্দীপ্তা বললো “কী কী করি সিমরানের সাথে দেখবি? মাতালগিরি করা ?কী বললি আমায়? আমি চরিত্রহীন ,লম্পট ? তোকে নষ্ট করেছিলাম? ঠিক আছে !তবে আবারও কী করতে হয়ে, আমিও জানি!! দ্যাখ কী করি তোর সাথে আজকে!!! আর সিমরান তো ঠিক আছে, ওর সাথে আমি ফুর্তি করবোনা। তোর নরম শরীরটাকেই চাই আমার, আরো পাঁচজনের মতো “।

আরাত্রিকা বললো “তুই জানোয়ার ছিলিস আর জানোয়ারই থাকবি। সত্যি কথাটা বেড়িয়ে গেলো”।

সন্দীপ্তা বললো “আমি জানোয়ার তো? দ্যাখ তবে!”

বলে আরাত্রিকার ঠোঁটের দিকে তাকাতেই সন্দীপ্তা বললো “আরু, তুই চলে যা! আমি পারবোনা ! তোকে ভালোবাসি!! তুই নিজে আসবিনা , আর আমি তোকে জোড় করতে চাইনা। যা! চলে যা!” বলে সন্দীপ্তা উঠতে যাবে, আরাত্রিকা সন্দীপ্তার কলারটা টেনে, ঠোঁটের মিলন ঘটালো আর নাইট ল্যাম্পটা নিভিয়ে দিলো

সকাল হতে আরাত্রিকা দেখলো সন্দীপ্তা আগের মতোই, ওর গায়ে পা তুলে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। যেনো পৃথিবীতে কোনো সমস্যা নেই। “স্যান্ডি! স্যান্ডি!” বলে ডাকতেই সন্দীপতা উঠে, বাচ্চাদের মতো আরো জড়িয়ে ধরলো্,বললো “সিমরানকে না ভীষণ ভালোবাসি আমি । তাও, তুই যখন ফিরে এসেছিস, তখন ওকে বেশি আদর করবোনা।”

আরাত্রিকা তাকাতেই সন্দীপতা বললো, “সিমরান নীচের ফ্ল্যাটেই ,ওর বাবা মায়ের সঙ্গে থাকে। ক্লাস টু তে পড়ে। বাট্ থ্যাংকস টু সিমরান!” বলে মিটমিট করে হাসতে লাগলো।

আরাত্রিকা বললো “শোন আজ থেকে আমরা একসাথে থাকবো। আমি বাড়ী গিয়ে জিনিসপত্র এনে, মা বাবাকে বলে দেবো। থানাতেও ডায়েরি করে রাখবো, যাতে আমাদের কেউ কোনো ক্ষতি না করতে পারে। আর টাকা পাঠানো কর্তব্য, যতটা পারা যায় করে দেবো,অনেক হয়েছে আর না”।

দুজনেই তাকিয়ে থাকলো সূর্যটার দিকে । একটা নতুন ভোর যেনো আহ্বান জানাচ্ছে ওদের শুভসূচনার।

ছবিঃ অর্ক ঘোষ

<< কালিজা ২০২২ (৫ম বর্ষ) – সূচীপত্র


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *