সাক্ত লওন্ডা

— ধরো তোমার ওই ছয়..
— ছয় ইঞ্চি??
— আজ্ঞে না। ওই ছয় সেন্টিমিটার মতো ধরে রাখো। তার কমও হতে পারে..
ছক্কার বদলে পুট পড়লে ঠিক এমনটাই লাগে। ছয় সেন্টিমিটার মানে ২ ইঞ্চির একটু বেশী। ওর কম হলে তো আর চোখেই দেখা যাবে না। পাব্লিক প্লেসে ওটাকে আড়াল করে নিয়ে মুততে হবে। কেউ দেখে ফেললে মানইজ্জত থাকবে না।
সোমকের ফোলা ফোলা মুখটা হতাশায় মিলিমিটারের মতো ছোট হয়ে গেলো। ডক্টর শৈবাল সরকার পেশায় প্লাস্টিক সার্জেন। কিন্তু আপাতত সেসব ভুলে সোমককে কাউন্সেলিং করতে বসেছেন । নইলে বেচারা ডিপ্রেশনে চলে যায়। কয়েকটা টেস্ট করাতে দিয়েছিলেন এমনিতে — সঙ্গে দুটো ssri ও লিখে দিলেন।
সার্জারির ডেট ফিক্স হলো আড়াই মাস পরে।

এই সার্জারিটা দুটো স্টেজে সম্পন্ন হবে। প্রথমটা আজকে হয়ে গেলো। পরেরটা হবার আগে ছ মাসের বিরতি। genital reconstructive surgery। ২ লাখ বেরিয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই দু লাখের উপর খরচাপাতি করে ছেলেটা বাড়ি ফিরবে একটা ২ টাকার ললিপপ সাথে নিয়ে— তাও যদি অতবড় হয়। ডঃ সরকার বলেই দিয়েছিলেন “দেখো, যতটুকু পাবে সেটাকেই সম্বল করে চলতে হবে। আমি তোমাকে মিথ্যে আশা দেবো না। কিন্তু আমি আমার মতো যথাসাধ্য চেষ্টা তো করবোই।” উনি বোঝেন সোমকের মতো মানুষগুলোর চাহিদা, অভিমান, হতাশা — থাকাটাই খুব স্বাভাবিক। কিন্তু জীবনভর অন্যের ডিসেকশন করতে করতে কখন যেন নিজের মনের ওপেনিং টায় কঠিন বাস্তবতার একটা স্টিচ পড়ে যায় এবং তা সময়ের সাথে সাথে মিলিয়েও যায়…

মেজর তিনটে প্রসিডিওর আজকেই ছিল। সোমক কে তাই জেনারেল এনেস্থেসিয়ার আন্ডারে দিতে হয়েছিল। সার্জারি শেষ হবার পরেও ঘন্টাখানেকের মতো অচেতন হয়ে পড়ে থাকতে হয়েছে। চেতনা সামান্য ফিরতেই বুঝেছিল যন্ত্রণা কাকে বলে। মা গো! জায়গাটা এমনিতেই সেন্সিটিভ। তার উপর হরমোন ঠুসেছে গত তিন বছর ধরে — ত্বকের সেন্সিটিভিটি বেড়ে তিরিশ গুণ হয়ে গেছে। আর তার উপরে কাটাকুটি খেলেছেন ডাক্তার সরকার৷ বেঁচে থাকারই তো কথা নয়! সোমকের অনুভুতি টা এমন হচ্ছিল যেন কেউ সমস্ত সেলাই ফেলাই টেনে খুলে ভিতর থেকে কেজি দরে মাংস চর্বি নিয়ে চলে গেছে। তবে সেই অনুভুতি বেশীক্ষণ স্থায়ী হলো না। নার্স এসে কি একটা পুশ করে দিয়ে চলে গেলো। জীবনটাকেই স্বপ্ন বলে মনে হতে শুরু করলো সোমকের। বুঝলো ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে— তবু সেন্স থেকে গেল ।

সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ডঃ সরকার ভিজিটে এলেন। জুনিয়র ডাক্তার ব্রততী মিত্র পেশেন্ট এর গতকালকের যাবতীয় হিস্ট্রি জিয়োগ্রাফি বাতলে দিলেন এক নিশ্বাসে। সোমক কে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। তার ঘুম এখন একটু পাতলা হয়ে এসেছে। নার্স দাড়িয়ে আছেন ড্রেসিং পাল্টাতে হবে বলে। ডাক্তারবাবু জায়গা ছেড়ে দিতে তিনি এগিয়ে গেলেন; খুব সন্তর্পণে ব্যান্ডেজপাতি সমস্ত খুললেন। ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ “উহ” বলে অস্ফুটে আওয়াজ করে উঠলো সোমক। “কি হলো?” ডঃ সরকার জিজ্ঞেস করলেন। নার্স একটু বিচলিত হয়েই উত্তর দিলেন “আসলে স্যার কালকেও ড্রেসিং করাতে গিয়ে একই জিনিস হয়েছে। উনার ওখানে হাত দিলেই উনি চিৎকার করে উঠছেন। আমি খুব ডেলিকেটলি হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করছি। কিন্তু স্যার একটু তো…”। ডঃ সরকার আশ্বস্ত করলেন “ডোন্ট ওয়ারি। সাইট হিল করতে অনেক সময় লাগবে । জাস্ট বি এ লিটল কেয়ারফুল।” বলে ব্রততী মিত্রর দিকে ঘুরে তাকে কয়েকটা দরকারি কথা বললেন। ওদিকে সোমক গাঁইগুই করেই যাচ্ছে। তার ঘুম আরো পাতলা হয়ে এসেছে। সে এবার মাথা এপাশ ওপাশ করে বেদনা বিরক্তি জানান দিচ্ছে। নার্স আপ্রাণ চেষ্টা করছেন যতটা কম ব্যাথা দিয়ে কাজ সারা যায়। তার কপালে একটা দুটো করে ঘামের ফোঁটা স্পষ্ট হচ্ছে

ডঃ সরকার মাঝপথে কথা বন্ধ করে ঘুরে তাকালেন। “ওয়াই ইজ হি হ্যাভিং সো মাচ পেইন ” বলে এগিয়ে গিয়ে নার্সকে একটু সরে যেতে ইশারা করলেন। নিজের হাত দিয়ে আলতো করে ধরলেন সোমকের ফ্যালাস টা। মাথা নীচু করে গভীরভাবে নিরীক্ষণ করতে লাগলেন স্টিচগুলোকে। জায়গায় জায়গায় হাত দিয়ে দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করতে লাগলেন ব্যাথাটা কোন অংশ থেকে জেনারেট হচ্ছে৷ টিপে টিপে দেখছিলেন, কোথাও কোথাও একটু বেশী প্রেশার দিয়েও দেখতে হচ্ছিল। হঠাৎ ব্রততী মিত্র ডাকলেন “স্যার, হি হ্যাস স্লেপ্ট!” ডঃ সরকার মাথা তুলে সেটাই দেখলেন— সোমক আবার কি সুন্দর ঘুমিয়ে পড়েছে। কোথায় পেইন, কোথায় কি! ঠোঁটে আলতো একটা তৃপ্তির হাসিও লেগে আছে।

দুই মহিলা বেজায় অকোয়ার্ড বোধ করতে লাগলেন। ডঃ সরকার দুই তিনবার গলা পরিস্কার করলেন অথচ কিছু বলতে পারলেন না। শেষে আর উপায় না দেখে ব্রততী মিত্রই বলে উঠলেন “আচ্ছা স্যার, ওয়াট এবাউট দ্য ইরেকশন?” ডঃ সরকার একটা হাঁপ ছেড়ে তারপর বললেন “উই হ্যাভ টু ওয়েট আনটিল দ্য টিস্যু ফুল্লি হিলস ইটসেলফ। আই এম ওয়ারিড টু…লেটস সি ইফ হি ক্যান গেট আপ…”
বলেই বেরিয়ে যাচ্ছিলেন ডঃ ঘর থেকে। পিছন থেকে ঘুমের মধ্যেই একজন বলে উঠলো “ডোন্ট ওয়ারি… দেয়ার আর থাউসেনড ওয়েস টু মেক লাভ… জাস্ট ডোন্ট লিভ মি…” বলে ভসভস করে নাক ডাকতে শুরু করলো সোমক।
ডঃ সরকার আর তখন কি করবেন।
“প্লিজ টেক কেয়ার অফ হিম” বলে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে।

ছবিঃ ভুটান

<< কালিজা ২০২২ (৫ম বর্ষ) – সূচীপত্র


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *