বন্ধুরা, ইংরিজি বছর ২০১৬-এর শেষে চলা শুরু করেছিলাম আমরা। দেখতে দেখতে এতোগুলো দিন হতে চললো। এতো ভালোবাসা আর স্নেহ পেয়েছি সবার, তা ভুলবার নয়। কেউ বিশ্বাস করে নিজের উপরে হওয়া শারীরিক নির্যাতনের ব্যথা ভাগ করে নিয়েছে, কেউ নিজের বান্ধবীর সাথে ঝগড়া করে গাল ফুলিয়ে মনের কথা বলেছে অকাতরে। কখনো এস-আর-এস করতে চাওয়া এক রূপান্তরকামী পুরুষের যন্ত্রণা, কখনো আনন্দের, প্রাপ্তির কিছু মুহূর্ত, তোমাদের সাথে বছরটা কেটে গেলো এই ভাবেই।
শুরু করার দিনটা ছিলো নিজের কাছে কিছু প্রতিশ্রুতি, ফেসবুকের জনপ্রিয়তাকে হাতিয়ার করে বাংলাভাষাভাষী মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার। ধর্ম, বর্ণ, জাতী, দেশ, শহর, গ্রাম, বয়স, লীঙ্গ — সবকিছুর বাধা পেড়িয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো আন্তর্জালের ছড়িয়ে রাখা এই মায়ায় ভর করে। আর সঙ্গে ছিলো একটাই দাবী। ফুউউউউশতন্ত্রের আত্মাভিমানে আঘাত করা। লিঙ্গ-যৌন-প্রান্তিক এবং আরেকটু এগিয়ে সমস্ত মানুষের মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার হওয়া। কতটুকু পেরেছি, জানা নেই, বলতে পারবে একমাত্র তোমরাই।
কিন্তু জড়িয়ে পড়েছি অনেকের সাথে, অনেক নতুন বন্ধু, নতুন করে শেখা অনেক কিছু, নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন সুযোগ — পরস্পর এই আদানপ্রদানের শেষে, লাভের পাল্লা বোধহয় আমাদেরই একটু বেশী ভারী। আমাদের ছোট্ট চার দেওয়ালের বাইরে, যেখানে আকাশ গিয়ে মাটির সাথে মিশেছে, সেই বিস্তৃ পৃথিবীর আনাচেকানাচে, কত্তো মানুষ, কত্তো অভিজ্ঞতা, কত্তো লড়াই।
কখনো তোমাদের পাশে পেয়েছি, আর নিজের মতো করে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টাও করেছি। কখনো সুখে, কখনো দুঃখে। কখনো সাহসে, কখনো ভয়ে।
২০১৬ সালের প্রায় শেষ, বাংলাদেশের এলজিবিটি+ কমিউনিটি আন্ডারগ্রাউন্ড, কোলকাতাসহ প্রায় গোটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরা প্রধানত বেছে নিয়েছে ইংরেজি ভাষার ক্ষুরধার শব্দগুলোকে তাদের আন্দোলনের অস্ত্র হিসেবে। ত্রিপুরা রাজ্যে কোন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার খবর পাইনি যারা অন্তত সেই রাজ্যে লিঙ্গ-যৌন-প্রান্তিক মানুষের অস্তিত্বটুকু জানান দেবে। তাই হয়তো কাঁচালঙ্কার দরকার পড়েছিলো। পুতু পুতু শব্দ নয়, শিষ্টতা মার্জিত ব্যবহারে পুরুষতন্ত্রের বিরোধিতাও অর্থহীন। দম্ভের উলটো পথে আমাদের ধৃষ্টতা আর স্বত্বার প্রকাশ, এটুকুই ঝাল লাগাতে পারতো গোড়া সমাজের মুখোশপরা ঠোঁটে।
কাঁচালঙ্কা — কখনো সবুজ, কখনো কমলা, কখনো সাদা, কখনো কালো, কখনো বা লাল। লম্বা, গোল, ছোট, বড়ো, সরু, মোটা — নিজস্ব প্রকৃতিতে যেন খাপ খায়না, সমাজের তৈরি কোন বাক্সে। ঠিক মানুষেরই মতো। তাই “Q” এর মাথায় চন্দ্রবিন্দু লাগিয়ে নেমে পড়েছিলাম মাঠে। বছর ঘুরেছে, পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টেছে, তবে অনেকটা নয়। তাই কাঁচালঙ্কায় চন্দ্রবিন্দু থাকলেও, পঞ্চত্বপ্রাপ্তির জন্যে তারা এখনই উদগ্রীব নই মোটেই।
দুঃসংবাদের খবরগুলো আজ এখন আর এই লেখায় টেনে আনছিনা। কিন্তু লড়াই থামছেনা, বরং আরো জোরদার হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এটুকু বলতে পারি। অনেক চমক থাকবে ভবিষ্যতে এটুকু আভাষ দিলাম, উল্টোদিকে, এটাও ঠিক, আমরা একা পারবোনা গোটাটা। আমরা/তোমরা ভুলে আমরা বরং সবাই হয়ে উঠি কাঁচালঙ্কা।