জলছবি

      No Comments on জলছবি

[শুরুর আগেঃ

সমর্পণের সাথে পরিচয় অনেকদিনের। তার নাম এখন অনেকেই জানি। মিঃ গে ওয়ার্ল্ড ইন্ডিয়া খেতাবের পালক সম্প্রতি জুড়লো তার মুকুটে। তবে হ্যাঁ, সমর্পণ এখনও আগের সমর্পণই আছে। সদ্য ওদের গ্রামের বাড়ি গিয়ে ওর বোনের বিয়ের খাওয়ায় খেয়ে এলাম পাত পেড়ে। বেশ কিছু রুপান্তরকামী এবং কোতিদের বিয়েবাড়িতে উপস্থিতিতে গ্রামের মানুষের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিলো দেখবার মতন। বিয়ের কার্ডেও বাবু জানিয়েছেন সমলিঙ্গে বিবাহের আহ্বান। সে এক হুলুস্থুলু কান্ড এ’ক’দিনে। কিন্তু সমর্পণ যে লেখেও দুর্দান্ত তা কিন্তু আমরা কয়েকজন বেশ জানি। শুধু লেখা? গান, গয়নাবড়ি, মডেলিং, অ্যাক্টিং। সে যাই হোক, উনি খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন হয়তো, তাই নতুন লেখার জন্যে আর না জ্বালিয়ে, পুরনো একটা লেখাই তার অনুমতি নিয়ে এখানে প্রকাশ করছি। বহুমুখী প্রতিভাধর বন্ধু সমর্পণ, তোমার জন্যে রইলো অনেক অনেক শুভেচ্ছা। তোমার বিভিন্ন ব্যক্তমাধ্যমে আন্দোলন হয়ে উঠুক আরো প্রাঞ্জল, আরো জীবন্ত।]

জলছবি

সমর্পণ মাইতি

 

কালবৈশাখীর সোঁ সোঁ হাওয়া কাকে আগে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। বারীনের মাথার ঝাঁকড়া চুল নাকি নাকি ওই মাঠের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে থাকা একলা তালগাছটার মাথাটুকু। স্বভাব। যার যেমন স্বভাব। কারও স্বভাব ওড়ানো আর কারও বা ভেজানো। বৃষ্টি আসবে মনে হয় এবার। এলে আসুক। বাড়ি ফেরার কোন তাড়া নেই বারীনের। দেখতে দেখতে বারীনের মাথার খোলা চুল গাছ হয়ে উড়তে লাগল। বিদ্যুতের ঝিলিক চমক লাগাচ্ছে তার খোলা চুলের ডগায় ডগায়! বৃষ্টি এলো। বৃষ্টির জলে উদোম হয়ে বারীন তার শরীরের তাপ জুড়ায়। বুক থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে নাভি, শিশ্ন বেয়ে জল চুঁয়ে যাচ্ছে। কেউ দেখলে দেখুক। শুধু ঐ শিশ্নটুকু আড়াল করে রাখার জন্য কত না ছল। গুনগুন করে গান ধরে বারীন। চণ্ডীদাসের পদ।

 

।। বলে বলুক মোরে মন্দ আছে যত জন

ছাড়িতে নারিব মুই শ্যাম চিকণ ধন

সে রূপ লাবণ্য মোর হৃদয়ে লাগি আছে

হিয়া হইতে পাঞ্জর কাটি লইয়া যায় পাছে।।

 

বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ নেই। না এবার ঘরে ফিরতেই হবে। দিনটা দেখতে দেখতে কালো হয়ে আসছে। এদিকের রাস্তায় জাতসাপের উৎপাত বড্ড বেশী। গেল বর্ষায় সাপে কেটেছিল বৌটারে। মায়ের দয়াই বল বা সরকারের দয়া, বৌটা প্রাণে বেঁচেছে। ধুতিটা কোমরে জড়িয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দেয় বারীন। ঘরে ঢুকেই দেখে পেছন ফিরে পদ্মা দাঁড়িয়ে। খোলা পিঠ। কোনমতে শুধু শায়াটুকু জড়ানো। ভারী নিতম্বের খাঁজটুকু বেশ উঁকি মারছে শায়ার ভেতর থেকে। দু’এক পলক দেখেই চোখ ঘুরিয়ে নেয় বারীন। কেমন যেন সংকোচ করে তার। মুখ ঘুরিয়ে কিছু একটা ভাবছিল বারীন। চমকে উঠলো পদ্মার আচমকা ডাক শুনে। – কি গো কখন এলে?এসে এরকম ভিজা গায়ে দাঁড়িয়ে আছ কেন? গায়ে জল ধরবে যে। ধর, গামছাটা দিয়ে গা’টা মুছে ভিজা ধুতিটা খুলে রাখ দেখি। আধভেজা গামছাটা বারীনের হাতে ধরিয়ে দেয় পদ্মা। এই একই গামছা দিয়ে মনে হয় পদ্মাও গা মুছেছে সবেমাত্র। মেয়েলি একটা গন্ধ লেগে আছে। বারীন মন্থর হাতে গায়ের জল মুছে গামছাটা পরনে জড়ায়। গামছার ভেতর থেকে ভেজা ধুতিটা সাবধানে টেনে আনে। পদ্মা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল এতক্ষণ। এইবার মুখ নাড়ল। -চা খাবে? র চা। এত ঝড় বৃষ্টিতে বিকালে গাই দুইতে পারিনি। সকালের দুধ যা ছিল বেতালের মাকে দিয়ে দিছি। অতটুকু ব্যাটা। দুধ না পেলে চলবে কি করে। পইতির আবার বুকে দুধও নেই। তুমি বরং রান্নাঘরের দাওয়ায় এসে বুস। আমি একটু র চা’ই করে দেই। এই এক স্বভাব পদ্মার। সারাদিন শুধু বকবক বকবক। বারীন আর কথা বাড়ায় না। শোবার ঘরে ঢুকে জামা-কাপড় রাখার দড়িটা থেকে একটা ধুতি নামায়। খয়েরী পাড়ের ধুতিটা হাতে নিয়ে পানকৌড়ি হয়ে যায় বারীন। একটা ভরা গলা দীঘল পুকুর। সবজে রঙের ঢলানি জল। এদিক ওদিক আটকে থাকা কিছু পানা ঝোপ। স্রোতের অপেক্ষায়। পুকুরে আবার কিসের স্রোত!কি জানি তবুও ওর মনে হয় কচুরিপানা গুলোর বড় কষ্ট। ওরাও ভেসে ভেসে ঘুরে বেড়াতে চায়। নতুন জলের গন্ধ নিতে চায়। ও জল থেকে মুখ তুলে দেখে পূব পাড়ে ডাই করে রাখা এক গাদা বাসন। মা এবার হারুনের মা, লক্ষ্মীপিসি, বাতাসি কাকী সবার সঙ্গে বসে বসে এক ঘণ্টা ধরে বাসন মাজবে আর পাড়ার কার বাড়ীতে কি হয়েছে তার খবর নেবে। মায়ের ঘোমটা টানা মুখটা এক ঝলক দেখে নিয়ে আবার জলের তলায় ডুব দেয় ও। উত্তরপশ্চিম কোনে বাঁশের সারি ঝুঁকে পড়ে একদম জল ছুঁয়ে রয়েছে। একটা মাছরাঙ্গা বসে আছে ডালটার উপর। মাছরাঙার রূপ দেখে খুব হিংসে হয় ওর। বুকের তলায় আগুন রি রি করে ওর। আগুন নেভাতে আবার ডুব দেয় ও। পুকুরের পাড়টা বড় অদ্ভুত। খুব সখ্যতা বারীনের সঙ্গে। রোজ স্নান সেরে দক্ষিণ দিকের শিরীষ গাছটার ডালে বসে ডানা শুকায় আর রাজ্যের ছেলে বুড়োর স্নান করা দেখে।

কি গো এখনো হল নি? ধুতিটা পরে এদিকে আসো দেখি। চা তো জুড়িয়ে যাবে এবার। হকচকিয়ে পুকুর পাড় থেকে ভাঙ্গা বাসায় ফিরে আসে বারীন। রান্না ঘরের এক কোনায় দোপাখা উনুন। তার একটায় চা আর একটায় ভাতের হাঁড়ি বসানো। বাঁশের বেড়ার উপর মাটির প্রলেপ দিয়ে তৈরি দেয়াল। বেড়ার যেখানে মাটির প্রলেপ নেই সেটা জানালা। জানালার কোন দিয়ে জল গড়িয়ে নামছে। লম্ফের আলোয় বারীনের চোখ ইলিশের মত চকচক করে ওঠে। পদ্মার মুখের দিকে তাকায় ও। পান্তাভাতের মত সহজ। পদ্মার মুখ দেখে ওর মায়ের মুখটা পড়ে যায়। গেল বছর বাজ পড়ে মরে গেল মাটা। মায়ের শখ মেটাতেই কোনরকম নিমরাজি হয়ে পদ্মাকে বিয়ে করা। ঘর সংসারের কাজ কে করবে। আমি মরে গেলে তুলসী তলায় পিদিমটাও দেবার লোক থাকবে না। বারীনও আর বেশী দিন জেদ ধরে থাকতে পারে নি। ভেবে দেখল, বিয়েটা করলে মায়েরও অনেক উপকার হয়। কদ্দিন আর এত পরিশ্রম করবে। আর ক্ষেতি বাড়ি করার জন্য একটা মাথাও বাড়ে। মনে মনে ভয় যে করছিল না তা নয়। হাত পা কেমন যেন পেটের ভিতর গুটিয়ে আসছিল। প্রথম যেদিন পদ্মাকে দেখতে গিয়েছিল মনের ভিতর থোকা থোকা সংকোচ নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল। রাতে ভাত খেয়ে পুকুর পাড়ে গিয়ে বসেছিল। ঝিঁঝিঁর শীৎকারে জল জেগে ওঠে। বারীন কল্পনা করে পদ্মার ঠোটের নিপাট ভাঁজ। কিন্তু ঠোটটা কেমন যেন ভারী হয়ে আসে। কালচে। বিড়ির গন্ধ পায় ও ঠোটে। সে গন্ধে অদ্ভুত মাদকতা। মৌতাত ছড়াচ্ছে ওর সমস্ত শরীর জুড়ে। আকাশ ভরা আদরে লুঙ্গির ভেতর ছলাৎ ছলাৎ করে চলকে ওঠে বারীন। নিজেকে নিঃস্ব করে এক খাঁ খাঁ শূন্যতা ওকে গ্রাস করে। হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলে ও। কি এত ভাবছ বল তো? ওমা তুমি আবার রতন ঠাকুরপোর ধুতিটা পরেছ কেনে? কেচে রাখলি ধুতিটা। ভাবলাম তোমায় জিগাব তুমি আবার কবে যাবে ওদিকে, গেলে ধুতিটা লিয়ে যাবে। -রতন আজ রাতে আসবে। সাউপাড়ায় ভব সাউয়ের ঘরে আজ কেত্তনের আসর ছিল। এই বর্ষায় আর কেত্তন হবে নি বোধয়। পেসাদ পেয়েই চলি আসবে। -অমা, আগে বলনি কেনি? -আগে বলেই বা কি হত? তোকে তো আর রাঁধতি হবে নি। উ তো খেয়েই আসবে। -এই বর্ষায় শুতে দিব কুথায়? -কেনি? তুই একটু কষ্ট-সিষ্ট করে রান্না ঘরে শুয়ে পড়। আমি আর রতন না হয় ঘরেই শুয়ে পড়বো। -সে না হয় হবেখন। রাতে কি খাবা? ভাবছিলাম বর্ষা পড়েছে। হাঁসের ডিম ভাজা আর চালে ডালে বসিয়ে একটু ফুটিয়ে লুবো। -সে তর যা মন চায় কর। পদ্মার দিকে তাকিয়ে একগাল হাসি ঢেলে দেয় বারীন। -কি গো আজ এত খুশি খুশি লাগছে তুমারে? স্যাঙ্গাত আসছে বলি?বারীনের গায়ের দিকে ঘেঁষে আসে পদ্মা। একটু গদগদ ভাব। তোমারে একটা কথা বলব রাগ করবা না তো? -কি আবার বলবি? বল। অত গাজন ভজিস না। -দেখলা?ঠিক রাগ করতেছ আবার। আমি আর বলব না। -এত হ্যাজাস না দিকি। বল। -বলছিলাম মালতী ঠাকুরঝি এয়েছে কাল। আজ বিকালবেলা মোদের ঘর এয়েছিল। মালতীর বরেরও তো হত নি। তারপর অরা কোলকেতায় কুন ডাক্তারের কাছে দেখিয়ে এখন মালতী সাত মাসের পইতি। তুমিও যাও না গ একটিবার। তুমার কি শখ হয় না, ঘরে মোদের একডা গুড়গুড়ে বাচ্চা আসবে। তুমারে বাবা বলি ডাকবেক। তুমার বাপ ঠাকুরদার ভিটেয় তাদের বংশধর আসবেক। কত্ত খুশির জুয়ার আসবে মোদের ঘরে। লক্ষ্মীটি, চল না গ একবার।

বারীনের মাথাটা ধরে আসে। উঠে দাঁড়ায় বারীন। পদ্মার মুখের দিকে তাকিয়ে খুব মায়া হয়। তুই রান্না চাপা। আমি একটু ঘরে গিয়া শুই। তাড়াতাড়ি রান্না শেষ কর। রতন আসার আগেই খেয়ে লিব। একটু কি জ্বর আসছে বারীনের?সে দেখে দুটো বাচ্চা বাড়ির পাশের ছাইগাদায় খেলা করছে। একজনকে বারীন আর একজনকে রতনের মত লাগছে?দুটো বাচ্চাই খেলতে খেলতে কখন গোয়ালঘরে লুকিয়ে পড়ে। যখন বেরিয়ে এল তখন অনেক বড় হয়ে। একজনের মুখে মুখোশ পরনে কিছু নেই। আর অন্যজনের মুখটা খোলা, কিন্তু বেয়াব্রু নয়। তারপর যে কি হল। সে আর খেই খুঁজে পায় না। একজন পানকৌড়ি হয়ে ঘাটে ঘাটে ডুব সাঁতার দিয়ে বেড়ায়। আর একজন মাছরাঙা হয়ে শুধু ওপর থেকে ছোঁ মেরেই পালিয়ে যায়। ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?শুনছ? খাবে এস। রান্না হয়ে গেছে। পদ্মা বারীনকে ঠেলা দেয়। বারীন ধড়ফড় করে উঠে বসে। চোখেমুখে জল দিয়ে রান্না ঘরের কোনায় দুজনে খেতে বসে। রতনের গলা শুনে পদ্মা মাথায় ঘোমটাটা একটু ভালো করে টেনে দেয়। গলা খাঁকারি দিয়ে রতন ভেতরে আসে। কী রে মাগ ভাতারে খুব পিরিত করে খাওয়া হচ্ছে!রতনের মুখে এই রকম কথা শুনে শুনে পদ্মা অভ্যস্ত। প্রথম প্রথম খুব লজ্জা পেত। বারীনকে বলেওছে। কিন্তু বারীনের রতনের জন্য সব সময় একটা প্রশ্রয় জেগে থাকে। বলে তুমি সম্পর্কে ওর বৌদি হও। একটু না ঠাট-ইয়ারকি করলই। -তুমি খেয়ে এয়েচ? -খেয়ে এলুম ত কি হইছে, তোমার হাতের পদ্মমধুর লোভ কি আর ছাড়তে পারি? -আমি তমার জন্যি খাবার বাড়ছি। একটু ঘরে গিয়া বুস। -আরে না গো, আমি কিছু খাব নি। আজ পেসাদ পেলাম। এই মুখে আজ আর আমিষ ছুঁব নি। তোমরা খেয়ে লও। আমি ঘরে যেয়ে একটু গড়াই। রতন ঘরে যেতেই বারীনের খাওয়ার গতি আরো বেড়ে যায়। ওমা, স্যাঙ্গাতের লগে আড্ডা দিবার তরে আর তর সইছে না? একটু আস্তে আস্তে খাও। তার দিকে চেয়ে বারীন একটা আহ্লাদী হাসি দিল। ঘরে এসে চোখ কটকট করে রতনের দিকে তাকায় বারীন। তারপর বিছানায় উঠে আলগা করে রতনের পায়ে পা ঠেকায়। -কি রে তুই কখন ঢুকলি ঘরে? -এইমাত্র। -পদ্মা? -শুয়ে গেছে রান্নাঘরে। বা্রীন এবার শক্ত করে পাটা রতনের উরুর উপর তুলে দেয়। রতনের নিঃশ্বাসের সঙ্গে বিড়ির গন্ধ এসে মিশছে বারীনের নাকে। বারীন নিজে বিড়ি খায় না। কিন্তু মাসে এক দুবার এই গন্ধটার জন্যই সে হা পিত্যেশ করে থাকে। ভীষণ নেশা তার এই গন্ধে। গন্ধটা আরো গাঢ় হতেই সে আবেশে দু চোখ বন্ধ করে ফেলে। গন্ধের ঘোর কিছুটা কেটে যেতেই দেখে রতন বিছানায় বসে আছে। বারীনও উঠে বসে। কি হল রে তর রতন? -কিছু না। তোরে একটা কথা বলি। তোর বউটারে আজ মোর খুব মনে লেগেছে। আজ রাতের জন্য পদ্মারে পাবো নাই? – এ তুই কি কইছিস রতন? বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় বারীন। – একটা রাতের জন্য। তুই সাহায্য দিলে কেউ কিছু জানতি পারবা না। তুই ভালো করি ভেবে দেখ। পদ্মারে ত তুই কুন সুখ দিতে পারিস নি। আমি পদ্মারে সে সুখ দিব। তর সাথে যেমন মাঝে মাঝে খেলা করি। খেলব। ভেবে দেখ, তুর আর আমার কথা যদি পদ্মারে বলি দিই কি হবে তখন? গেরামের লোকেরে যদি বলি, তুই ঘাটে বসে বসে পোলাপান দের চান করা দেখিস…মোর সাথে শুলে তোর পুরুষ জাগে, পদ্মার সাথে জাগে না… কি হবে বল তো?থাকতি পারবি রে গেরামে? পানকৌড়ি আজ বড় বেশী ভিজে গেছে। এত ভারী ডানা নিয়ে তার আর একটু উড়ে গিয়ে পাড়ে বসার ক্ষমতাটুকুও নেই। সে জলে ভেসে ভেসে ডানা ঝাপ্টায়। চাঁদের আলোয় শুধু মায়া আর মোহ। ডানা শুকানোর তেজ নেই তাতে। চুপিচুপি রান্নাঘরে যায় বারীন। পিছুপিছু রতন। মকমক করে ব্যাং ডাকছে বাইরে। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। পদ্মার মুখটা চেপে ধরে বারীন। তর বাচ্চা চাই না পদ্মা? বারীনের গলাটা কেমন হিংস্র হয়ে ওঠে। তর গব্বে এবার বাচ্চা আসবে। তরে মা বলে ডাকবে। বারীনের হাতের ভিতর ছটফট করতে থাকা পদ্মার কপালে টুপটাপ করে বৃষ্টি ফোঁটা হয়ে ঝরতে থাকে। আর মাছরাঙা জলে ঝাঁপ দেয়।

[ছবিঃ ভুটান]


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *