সেমসাইড করতে বলবেন না প্লিজ

[শুরুর আগেঃ

ভুটান, সদ্য একজন কাঁচালঙ্কা হয়েছেন। তাকে ছাড়া বেজায় মুশকিলে পড়তাম সন্দেহ নেই। সব ছবিই তার আঁকা, লোগোটাও। তার নিজের গল্পের ছবিটাও। একদিক দিয়ে ভালো, গোটা উদ্যোগের ছবিগুলি একইরকম দেখতে হয়েছে। ভুটান লেখে চমৎকার। কখনৈ বাঁধাধরা গতে লিখতে চায়না, একটু অন্যরকম কিছু। বর্তমানে বঙ্কু পত্রিকার সাথেও যুক্ত। আরো লিখে যাও বন্ধু। চেষ্টা করবো যাতে তোমার লেখা পৌঁছে যায় আরো বেশী মানুষের কাছে। আর ছবি এঁকে দেওয়ার জন্যেও জ্বালিয়ে খাবো। বিঃ দ্রঃ লেখকের নাম ছদ্মনামে।]

সেমসাইড করতে বলবেন না প্লিজ

ভুটান

ডেটিং অ্যাপটার ফিডব্যাক পেজে মেসেজ ঠুকে দেওয়ার সাথে সাথেই অ্যাপটা খেঁকিয়ে হেসে উঠল।

অ্যাপ – সাইড আবার কি লো? এগুলো তোদের নতুন ধ্যাস্টামি। এসব বালছাল আপডেট মেরে কি হবে?

আমি – যাব্বাওয়া!! মানে আমি এটাই তো।।

অ্যাপ – একটা জমাটি নাম পেলিনা?

আমি – আঃ! সেটা বড় কথা নয়। টপ, বটম, ভারসাটাইল (এর আবার দুটো সাব ডিভিসন আছে) — এত গুলোর ভিড়ে আর এক খান জুড়তে আপত্তি কোথায়।

অ্যাপ – জুড়তে আপত্তি নেই, তবে তোদের এই পজিশনটা কমুনিটি খাচ্ছে নাকি? কেউ জানেইনা, বোঝেইনা। পপুলার না হলে আবার আপডেট করাটা চাপের।

আমি – হ্যাঁ হ্যাঁ অনেকেই জানে বাওয়া। বলছিনা যে সবাই হেব্বি বিজ্ঞ, মাঝেমধ্যে সাইড বোঝাতে অসুবিধা হয়েছে ঠিকই, তবে এভাবেই তো ছড়াবে।

কথাটা শুনে খ্যাক খ্যাক শব্দে একপ্রকার খস খসে হাসি দেয় অ্যাপটা।

অ্যাপ – তা আমাকেও একটু জ্ঞানের আলো দাও সোনা, কি করে কেউ বুঝবে যে সে সাইড?

আমি – দেখ বস! এরা ওই সব্বার মত পকাপকে নেই এইটা বেসিক। এছাড়া আরো কিছু ব্যাপার আছে গুগল করে দেখে নাও, কিন্তু মেইন পয়েন্টটা তো সেটা নয়।

অ্যাপ – তাহলে কি?

আমি – আরে ভাই থুরি জেন্ডার নন কনফরমিং অ্যাপ, এই আপডেটটাই তো মেইন পয়েন্ট। কেউ তো মানছেই না, উলটে খিল্লি মারে (ফ্যাঁচফ্যাঁচ)।

এপ – আহা! কি জ্বালাতন, সাবটাইটেল না দিয়ে কাঁদলে যে কেউ বুঝতে পারবেনা।

অ্যাপ – ও তাও ঠিক, ফ্যাঁচফ্যাঁচ (কান্নার আওয়াজ)।

পকেট থেকে রুমাল এগিয়ে দেয় অ্যাপটা।

অ্যাপ – কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে চাইনা, তবে জানতে ইচ্ছে করে খিল্লি কয় প্রকার ও কি কি?

আমি নাক মুছতে মুছতে বলি

আমি – না চেয়েও তো কম রগড়াচ্ছ না দেখছি। যাই হোক তোমার জানা দরকার ডিস্ক্রিমিনেশনটা কোন লেভেলের।

অ্যাপ – আহারে! ঢেলে দে যা আছে সব। (চোখে সারকাজম মুখে চুকচুক)

আমি – পিং করলাম কাউকে, ফিরে এল সেই অমোঘ প্রশ্নবাণ টপ, বটম, ভারস? প্রশ্নটা দেখেই আজকাল পেট গুড়গুড় করে, আবার হাতছাড়া হবে একজন, নয়তো পড়তে হবে আরেকটা চুড়ান্ত খিল্লির সামনে। দিলাম লিখে সাইড, কাঁপা আঙুলে সেন্ডও করে দিলাম।

অ্যাপ – তাপ্পর তাপ্পর

আমি – তারপর আর কি, সেই পেট গুড়গুড়, চোখ টনটন, বুকে লাবডুব, হাটুর ঠক ঠকানি নিয়ে ঠাঁয় বসে রইলুম অপর দিক থেকে কি আসে তা দেখতে।

অ্যাপ – মরে যাই কি নাটক মাইরি, যাই হোক তা ওই ওপার থেকে কি মেসেজ এলো।

আমি – মোটামুটি কিছু টেস্ট পেপার গোছের প্রশ্নোত্তর সাজিয়ে রাখি বরাবর, জানা থাকে প্রাথমিক প্রশ্ন টা কি আস্তে পারে। তো এবারেও সেটাই এল ওপার থেকে

‘সাইড টা আবার কি’, তা আমি যত্ন করে আমার এই এক্সিসটেন্স নিয়ে দু’কথা লিখে দিলুম।

অ্যাপ – বাহ! বাহ!

আমি – হ্যাঁ, মানে জানি এ কাজ বাহবা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু ওপার থেকে আমার এক্সিসটেন্সের পিন্ডি চটকানো মেসেজ ধাঁ করে উড়ে এল।

অ্যাপ – কি ছিল? কি ছিল? (অতি উৎসাহে)

আমি – ‘হুম, তা কোন সাইডে শুতে পছন্দ করো? ডান দিক না বাঁ দিক’ এই ছিল তার উত্তর। তবুও আমি ছেলেটার কচি চোপার দিকে তাকিয়ে আরেকটু গুছিয়ে লিখি যে পকাপকে নেই রে মোরা। তাতে যা উত্তর আসে সেটা আরও মারাত্তক, ব্যাটা বলে কিনা ‘ধুর বাঁড়া, এসব না করলে এখানে আছিস কেন? তুই নিজেরটা নিজের পেছনে ঢুকিয়ে বরং সেম সাইড কর’।

অ্যাপ – খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক ( চুরান্ত নোংরা হাসির শব্দ)

আমি – না মানে আমার পছন্দের (পড়ুন প্রেফারেন্স) অস্তিত্ব কে এভাবেই হেসে বারবার হেনস্তা করে তো লাভ নেই। এবার এই টপ বটম ইন্টারকোর্সের মোনোপলি একটু বন্ধ হোক। আমরাও এর মাঝে আছি বাওয়া।

অ্যাপ – দেখ একটা ব্যাপার তো মানবি যে এখানে আগে থেকেই এত কিছু রয়েছে, সেগুলোর প্লাস মাইনাস দিকও রয়েছে। যেমন ধর কে টপ, কে বটম, কে ভার্স — তার আবার দুটো সাব ডিভিশন, কেউ রোগা চায় কেউ মোটা চায় কেউ হাংক চায়। তার উপর ফরসা কালো নিয়েও কম্পলেক্স আছে, সাইজ নিয়েও কম্পলেক্স খায়। তো এত কিছু টপকে কাউকে পাওয়া তো আর মুখের কথা নয়, তাই এর মাঝে আর একটা জুড়ে ভিড় বাড়িয়ে কি কোনো লাভ আছে?

আমি – আমরা কি ফাউ নাকি বে? তোরা এই অ্যাপগুলোতে এখনও মেল ফিমেলের বাইরে আর কিছু রাখিস নি, পজিসনেও সেই এক জিনিস। মাঝে মধ্যে মনে হয় যেন এগুলো আমাদের জন্য নয়, এখানেও আমাদের রিপ্রেসেণ্ট করার সুযোগ নেই।

অ্যাপ – সবই বুঝলাম কিন্তু আমার হাত পা বাঁধা। যতদিন না তোরা একটা পপুলার পজিসন প্রেফারেন্স হয়ে উঠছিস, অথবা, এর সাথে রিসার্চ করার লেভেলের কোনো জটিল মানসিক তত্ত্ব কথা জুড়তে না পারছিস, ততদিন বস কিছু করার নেই। পপুলারিটি বাড়াতে ফেসবুকে পোস্টের ঝড় তুলে দে, পরে কোনো পাব্লিশারকে ধরে একটা গাব্দা বই আকারে সেগুলোকে বিক্রি করে ছড়াতে থাক, ব্লগ খোল, ইউটিউব চ্যানেল বানা। এভাবেও বেড়ে ওঠা যায়।

কথা গুলো শুনেই মাথাটা রাগে ঝনঝন করে উঠলো, কাজের কাজ না করে ফ্রিতে জ্ঞান অনেক দিয়েছো। তোর বেড়ে ওঠা আগে কাচি দিয়ে ছাঁটি, তাই মুখ বন্ধ করতে টুক করে আনইনস্টল মেরে বেশ করেছি, উচিৎ-শিক্ষা-দিয়েছি-মার্কা ভাললাগাকে জাপটে ধরে শুয়ে রইলাম পুরোটা বিকেল।

[ছবিঃ লেখক]


1 comment on “সেমসাইড করতে বলবেন না প্লিজ

  1. Pingback: কালিজা ২০১৮- সূচীপত্র - কাঁচালঙ্কা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *