কামিনী রাত

[শুরুর আগেঃ

লিঙ্গ-যৌন-প্রান্তিকতা নিয়ে যে’কটি বই এবারের কোলকাতা বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে, তার মধ্যে বন্ধু অভিজিৎ কুণ্ডুর   “ডায়েরি নয় লিখিত এজাহার” নিঃসন্দেহে বহুলচর্চিত, আদৃত, প্রশংসিত এবং হয়তো কারও কারও কাছে নিন্দিতও বটে। “কালিজা ২০১৮” -এর শুরু করছি তারই অনুবাদিত একটি একাঙ্ক নাটক দিয়ে। বন্ধু অভিজিৎকে অনেক ধন্যবাদ, আর অনেক শুভেচ্ছা তার কলমকে। আশা করি সে আমাদের ভবিষ্যতে আরো দুর্দান্ত কিছু লেখা উপহার দেবে।]

কামিনী রাত

একাঙ্ক নাটক

লেখক: মহেশ দাত্তানি

অনুবাদক: অভিজিৎ কুন্ডু

একটা ছোট ঘর দেখা যাচ্ছে। ঘরের দুটো দরজা। একটা সামনের, একটা পেছনের। সামনেরটা বাইরের দিকে, পিছনেরটা ঘরের ভেতরের দিকে। ঘরে একটা বড় জানালাও দেখা যাচ্ছে। জানালাটা আদ্ধেকটা খোলা। বাইরে এক বিশাল কামিনী ফুলের ঝাড় জানালাটাকে ঘিরে রেখেছেঘরটা ফুলের গন্ধে ম ম করছে।

 

ঘরের মধ্যে একটি খাট। সিঙ্গেল বেড। দেওয়ালে এক মাসল-শোভিত পুরুষের বিশাল পোস্টার – মানে যাকে বলে হাঙ্ক। জিম করার কিছু যন্ত্রপাতিও দেখা যাচ্ছে ঘরে। এই মুহূর্তে ঘরে কেউ নেই।

 

পেছন থেকে এক মহিলার কণ্ঠস্বর শোনা গেলো – সায়ন, যা দরজাটা বন্ধ করে শুয়ে পর।

সায়নের কণ্ঠস্বর: হুম, যাচ্ছি মা।

 

সায়ন পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকলো। বছর বিশেকের এক সুপুরুষ যুবক। পরনে স্লিভলেস টি-শার্ট ও কেপ্রি। যথেষ্ট সুগঠিত চেহারা। সায়ন ভেতরে ঢুকে পেছনের দরজায় খিল লাগিয়ে দিলো, আর এগিয়ে এসে সামনের দরজার ছিটকিনি খুলে দিলো। তারপর খাটে এসে বসলো।

কিছুক্ষন পর দরজায় টোকার শব্দ।

 

সায়ন : এসো ভেতরে এসো, দরজা খোলা আছে।

 

অভি ভেতরে এলো। সুদর্শনসায়নের থেকে কিছু বড়ো। পরনে জিন্স ও চেক বুশ শার্ট। অভি ভেতরে এসে চারিদিক দেখতে লাগলো। সায়ন হাত দেখিয়ে খাটে বসতে বললো। কিছু ফুল বাইরে থেকে উড়ে এসে পড়েছিল। সায়ন ওগুলো কুড়িয়ে নিলো।

 

সায়ন : (ফুলগুলো হাতে নিয়ে) আমার এগুলো গাছেই ভালো লাগে।

অভি: কি?

সা: এই ফুলগুলো। মাটিতে পরে থাকলে ভালো লাগে না।

অভি : ও। (কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে): কেন?

সা: কেন জানিনা। শুধু জানি যে ওগুলো ওখানেই ভালো মানায়। তাছাড়া ঝরে গেলে ওদের গন্ধও চলে যায়। তখন ফুলদানিতে রাখারও কোনো মানে থাকে না, তাই না?

অভি: (কিছু ফুল কুড়িয়ে নিয়ে)  সত্যিই খুব তীব্র গন্ধ।

 

সা: (কিছু উত্তর না দিয়ে) তুমি কি বাথরুমে যাবে?

অভি: হ্যাঁ, একটু গেলে ভালো হয়।

সা: (পেছনের দরজার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে) ওদিকে। বৈঠকখানা দিয়ে যেতে হবে বুঝলে।

অভি: কেউ থাকলে?

সা: ও কিছু হবে না, ওরা সবাই used to ।

অভি: ছাড়ো। পরে যাব।

সা: আচ্ছা, বসো।

অভি: (একটু অধৈর্য হয়ে) বসছি, কিন্তু তুমি দরজা টা তো বন্ধ কর।

 

সায়ন ওকে কিছুক্ষন দেখলো। দেখে দরজাটা বন্ধ না করে, জানালাটাও পুরো খুলে দিলো। এক দমকা হাওয়া আরও কিছু ফুল নিয়ে ঢুকলো। অভি অবাক চোখে চেয়ে রইলো।

 

অভি : আচ্ছা তোমার নামটা তো বলো।

সা: আমি শোভন।

পেছন থেকে আবার সেই মহিলার কণ্ঠস্বর: সায়ন, তাড়াতাড়ি শুয়ে পর। কাল সকাল সকাল বেরোতে হবে, মনে আছে তো।

সা: (চেঁচিয়ে) হুঁ ঠিক আছে।

অভি: সায়ন কে?

সা: আমিই সায়ন। এতো ফেক নেম বলতে হয় সবাইকে,  anyway, তুমি ঠিক আছ।

অভি:  বুঝলাম।

সা: বিশ্বাস হচ্ছে না? এই দেখ, এই দেখ আমার কার্ড। I work for MICROLAND,  Asst. Sales Manager.  ধর।

অভি কার্ডটা হাতে নিয়ে কিছু না দেখেই ওয়ালেটে ঢুকিয়ে রাখলো।

 

সা: আমি তোমারটা পেতে পারি তো?

অভি: কি?

সা: তোমার কার্ড?

অভি: (নিরুত্তাপ ভাবে) আমার কার্ড নেই।

সা: তাহলে আমাকেও আমারটা ফেরত নিতে হবে।

অভি: (ব্যাঙ্গের সুরে) এতো নার্ভাস কেন তুমি?

সা: (একটু বিরক্ত হয়ে) তোমার নাম কি?

অভি: রিলাক্স, এতো টেনশন নেওয়ার কিছু নেই।

সা: (অভির চোখের দিকে চেয়ে) What’s your name?

অভি: তোমায় বলেছি বোধহয় আগেই, অভি।

সা: অভি তো বলেছো, but পুরো নামটা কি? অভিষেক, নাকি অভিরূপ?

অভি: অভিই তোমার জন্য ঠিক আছে। আচ্ছা এখন তো তুমি আমার নাম জানো, এখন তো দরজাটা বন্ধ কর।

সায়ন সামনের দরজাটা বন্ধ করে দিলো।

 

অভি: জানালাটা খোলাই থাক ?

সা: কেউ দেখে ফেললে? তোমার ভয় নেই?

অভি: কিছুক্ষনের জন্য রাখো? একটু পরে আমিই নাহয় বন্ধ করে দেব?

 

অভি জানালার ধারে উঠে যায়, ও কামিনী ফুলের ঝাড়টা দেখতে থাকে

অভি: আমার ঠাকুমা কখনোই কামিনীর ঝাড় লাগাতে দিতেন না জানো, উনি ভাবতেন সাপ আসতে পারে।

সা: এখানে সাপের ভয় নেই।

অভি: আমি একটা লাগিয়েছিলাম। এত সুন্দর গন্ধ!

সা: তারপর?  সাপ এসেছিলো?

অভি: স্বপ্নে…

সা: মানে ??

অভি: (একটু থেমে, খুব ধরা ধরা গলায়) কি করতাম জানো?  ফুলগুলো সব সারা শরীরে ছড়িয়ে দিয়ে শুয়ে পড়তাম… and I would dream….. একটা পাইথন খুব ধীরে ধীরে আমার শরীরের ওপর উঠে পড়ছে। ধীরে ধীরে আমার শরীরের গন্ধ নিচ্ছে, ফুলগুলোর গন্ধ নিচ্ছে। আমার শরীর স্পর্শ করছে। I would imagine that it was attracted to my body! একটা অদ্ভুত ফিলিংস হতো। তারপর, হঠাৎ পাইথনটা একটা অপূর্ব পুরুষে বদলে যেত….. And then he would Make Love to me!

সা: WOW!! আমি অনেক রকম ফ্যান্টাসি শুনেছি… but this one is something special! Snakes turning into Sexy men! তবে জানো, এটা হওয়াটা খুব স্বাভাবিক… সাপ মানেই তো একটা phallic symbol না? Anyway, এখন আমি confirmed যে তুমি gay …. Only a gay man can have such a dream!

অভি: মানে?  তুমি শিওর ছিলে না যে আমি  Gay?

সা: কিছুক্ষনের জন্য ভেবেছিলাম যে তুমি স্ট্রেইট! A straight guy pretending to be one!

অভি: কেন? এমন pretension-এর মানে কি?

সা: যাতে ওরা গে দের ধরে পেটাতে পারে। ওরা তো gay-haters!

অভি: তোমার সঙ্গেও এরকম হয়েছে নাকি?

সা: (নিরুত্তাপ ভাবে) হ্যাঁ অনেকবার।

অভি: তোমার, আমার সম্বন্ধে এমন ধারণা হলো কি করে, যে আমিও একজন so-called ‘gay-hater’?

সা: তুমি যখন পার্কে বসেছিলে, তখন আমি প্রিটি শিওর ছিলাম যে তুমি গে… But তারপর মনে হলো….যে তুমি বোধহয়…..

অভি: Straight? কেন?

সা: (একটু থেমে, আড় চোখে দেখে) You didn’t put your hand on my crotch…

অভি: ও….. তা তাও তুমি তোমার বাড়িতে আমাকে ডাকলে??

সা: Well, আমি তোমার crotch-এ হাত দিয়েছিলাম… কিন্তু তুমি কিছু বললে না। তখন মনে হলো যে একে বাড়িতে ডাকা যেতে পারে।

অভি: কিন্তু এখন তোমার মনে হচ্ছে যে আমি একজন gay-basher…. তাই তো?

সা: দেখো, তাতে আমার কিছুই এসে যায় না। I am trained for combat! ওই gay basher দের ধরে না , আমিই পেটাই।

অভি: তোমার মনে হয়, তোমার আমাকেও পেটানোর প্রয়োজন হবে??

সা: প্রয়োজন হলে তাই করবো। তবে এখন আর তার দরকার পরবে না। অন্তত তোমার ফ্যান্টাসিটা শোনার পর।

অভি: But that was a lie!

সা: ফ্যান্টাসি মিথ্যে হতে পারে না, ফ্যান্টাসি মানে সেটা কল্পনা, কল্পনা মিথ্যে হবে কি করে?

অভি: কিন্তু কল্পনাটা সত্যিই ‘মিথ্যে’। আমি এমন স্বপ্ন কখনোই দেখিনা, যে সাপ পুরুষ মানুষ হয়ে আমার সঙ্গে SEX করছে।

সা: তুমি তাহলে ওটা বানিয়েছিলে?

অভি: হুঁ।

সা: সেটাই তো ফ্যান্টাসি। ফ্যান্টাসি মানেই তা কল্পনা-প্রসূত, ফ্যান্টাসি মানেই তা বানানো। তাহলে ওটা ঝুট হয় কি করে,  তুমিই বল?

অভি: মাই ডিয়ার, গল্পটা আমি ইনভেন্ট করিনি, ওটা আমায় কেউ বলেছিলো, আর আমি সেটা নিজের বলে চালিয়ে দিলাম।

সা: কেন? তার কি কোনো বিশেষ প্রয়োজন ছিল? আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য? (সায়নের চোখে দুস্টুমি। অভির হাতের মাসলে হাত রেখে) তা যদি বল, আমি এমনিই ইম্প্রেসেড। জানালাটা বন্ধ করতে পারি এখন?

 

সায়ন কোনো উত্তরের অপেক্ষা না করে, জানালাটা বন্ধ করে দিলো। তারপর অভির কাছে এসে ওর গলায় হাত রাখলো। গলা থেকে শুরু করে খুব ধীরে ধীরে ওর সারা গায়ে হাত বোলাতে লাগলো। অভি ঠায় বসে আছে। সায়ন ওর মুখটা নিয়ে গেলো অভির মুখের কাছে।

 

হঠাৎ অভি উঠে পরে এক ধাক্কায় সায়ন কে ফেলে দিলো। সায়ন হুমড়ি খেয়ে পড়লো মাটিতে। অভি ওর বুকের ওপর চেপে বসে ওর চুলের মুক্তি আর চোয়াল শক্ত করে ধরলো।

 

অভি: (হিসহিসে গলায়) তুমি কি জানো আমি ওই ছেলেটাকে কি করেছি যে আমায় ওই সাপের গল্পটা বলেছে? ওকে কেলিয়েছি, স্রেফ কেলিয়েছি, কুত্তার মতো কেলিয়েছি! ইচ্ছে ছিল ওর নলি কেটে, নালির জলে ভাসিয়ে দেয়ার। That’s what he deserved, and that is what You deserve!

সা: শুওরের বাচ্চা, ছাড় আমার গলা ছাড়!

অভি: কি, কি করবি তুই? চেঁচাবি? পুলিশকে ডাকবি? বাবা-মা কে ডাকবি? যা যা, পাড়া প্রতিবেশী সবাইকে ডেকে আন, বল, হ্যাঁ গো শুনছেন, যে ছেলেটাকে আমি তুলে এনেছিলাম পার্ক থেকে চোদ-বার জন্য, সে আমায় এখন পেটাচ্ছে! হুঁ!

নেপথ্যে মহিলার কণ্ঠস্বর: সায়ন, এই সায়ন, কে এসেছে তোর ঘরে? এতো চেঁচামেচি কেন?

অভি: (ব্যাঙ্গের সুরে) যা, যা বলে আয় আমি কে?

মহিলার কণ্ঠস্বর: কিরে, কি হলো, কে তোর ঘরে?

অভি: (সায়নের মুখের কাছে মুখ নিয়ে এসে) কি সোনা, উত্তর দাও!

সায়ন: (আচমকা, অভিকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে) ডিয়ার অভিমন্যু চাট্যার্জি, এবার বলি তুমি কে??

 

অভি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। থতমত খেয়ে সরে দাঁড়ায়।

মহিলার কণ্ঠস্বর: কাকে যে ঘরে এনে ঢোকাস, বুঝিনা!

সা: আরে কেউ না, তুমি যাও তো। জাস্ট আমার বন্ধু। যাও শুয়ে পড়ো।

 

সায়ন ধীরে ধীরে অভির দিকে এগোতে থাকে। অভি পালানোর চেষ্টা করে। সায়ন ধরে ফেলে ও এলোপাথাড়ি মারতে থাকে। অভি প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে, কিন্তু ততক্ষনে ওর হিম্মত কমে গিয়েছে

সা: এবার আমি বলি তুমি কে? মাকে ডেকে আনি??

অভি: প্লিজ, আমায় যেতে দাও, প্লিজ।

সা: এই বাড়ির ত্রিসীমানার মধ্যে তোমার থাকার কোনো অধিকার নেই।

অভি: আমি আসবো না, আমি কথা দিচ্ছি তোমায়, আমায় প্লিজ এবার যেতে দাও!

সা: মহুঁ, এমনি তো তোমায় যেতে দেব না, আগে সবাইকে ডেকে বলি তুমি কে?

অভি: না, তুমি কাউকে বলবে না আমি জানি, তুমি এতটা খারাপ নও।

সা: মাস্কা লাগানোর চেষ্টা করোনা অভিমন্যু চ্যাটার্জি, আমি খুব খারাপ!

ম: গায়ত্রী, গায়ত্রী, দেখ তো সায়ন কি করছে??

সা: আর কাউকে না বলি, গায়ত্রীকে তো বলবোই।

অভি: হুঁম, তা তুমি করতেই পারোনা, করলে তোমাকে নিজের ব্যাপারেও বলতে হবে, পারবে তুমি?

সা: হাসালে। গায়ত্রী আমার ব্যাপারে আগে থেকেই জানে। বরঞ্চ আমি যদি বলি, যে তার হবু বড় তারই ছোট ভাইয়ের সঙ্গে সেক্স করতে এসেছে, তাহলে বুঝতেই পারছো, কি হবে??

অভি: সেক্স করতে এসেছি কে বললো? তাহলে আমি তোমায় মারলাম কেন?

সা: ওটা তোমার ঢং। কি ভেবেছিলে, যে আমি তোমায় আগে দেখিনি বলে, তোমায় চিনতে পারবো না? তোমার ফটো আমার দিদির কাছে আছে, এবং আমি মানুষও খুব ভালো চিনি। তুমি এসেছিলে জাস্ট তোমার যৌন লালসা মেটাতে! ব্যাস!

অভি: Bullshit!  আমি এসব করতেই চাইনি! I am not gay! In fact I just stop people from doing that!

সা: Bullshit to you dear. আমি যদি না বলতাম আমি কে,  you would have sucked my cock tonight and come back tomorrow morning to meet my sister!

অভি: OK, Ok I promise you, তুমি যদি না বল আমি কে, তাহলে আমিও কোনোদিনও কাউকে এই রাতের ঘটনা বলবো না। Please, it’s my earnest request to you, I cannot live without her!

সা: ওকে, ঠিক আছে, I will never tell it to anybody. তবে তার বদলে তুমি কি দেবে?

অভি: কি চাও?

 

সায়ন ধীরে ধীরে জানালার কাছে উঠে গেলো, গিয়ে একঝাঁক কামিনী ফুল নিয়ে এলো। এসে ফুলগুলো অভির গায়ে ছড়িয়ে দিতে লাগলো।

 

অভি একটু অপ্রস্তুত হয়ে: কি করছো?

সা: এবার তোমার স্বপ্নের কথা বল…..

অভি: কোন স্বপ্ন?

সা: তোমার ফ্যান্টাসি, সাপের ফ্যান্টাসি।

অভি: আরে! না, আমি পারবো না।

সা: পারতে তোমাকে হবেই!

অভি: তোমায় বললাম তো এমন স্বপ্ন আমি কখনই দেখিনি।

সা: মিথ্যে কথা! কেন লুকোচ্ছ? ওটা তোমারই ফ্যান্টাসি। নাও, শুরু করো !

 

অভি: ( খুব কষ্ট করে ) আচ্ছা ঠিক আছে, বলছি। আমি দেখতাম যে আমি এক বাগানে শুয়ে আছি। ওপরে কামিনী ফুলের ঝাড়। অপূর্ব গন্ধ। চারিদিকে ম ম করছে। আর ঝোপের ভেতর সাপ। পাইথন। পাইথনটা কামিনীর গন্ধ নিচ্ছে, আর আমার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছে। ধীরে ধীরে সাপটা নেমে এলো গাছ থেকে, এসে আমার শরীর স্পর্শ করলো। আমার পা, আমার থাই, তারপর আরো উপরে। আমার হাত পা থর থর করে কাঁপছিলো, আমি বুঝতে পারছিলাম, আমার হার্টবিট বাড়তে থাকছে। ঠিক সেদিন কে যেমন বেড়েছিল, যেদিন আমি আমার কাজিন দাদাকে দেখেছিলাম……

সা: কি দেখেছিলে?

অভি: (দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) Masturbate করতে। (একটু থেমে) হঠাৎ সাপটা এক পুরুষে বদলে গেলো, এক অপূর্ব পুরুষ! It turned into a man, believe me! A Sexy Man! And then I saw he is none other than my Brother ….. আমার মাসতুতো দাদা! And he made love to me…… ওফ, আমি আর পারছি না…. প্লিজ, আমায় আর কিছু জিগেশ করো না!

 

সা: ওকে, রিল্যাক্স, রিল্যাক্স। ….. ওটা তো জাস্ট একটা স্বপ্ন ছিল।

অভি: স্বপ্ন তো বটেই…… nightmare. শুনবে আরো? ফ্যান্টাসি নয়….real story??!!

সা: না আমার আর কিছু শোনার নেই, আমার শুধু এটুকুই জানার ছিল।

অভি: কি??

সা: যে তুমি নিজের মুখে তোমার আইডেন্টিটি-টা স্বীকার করো।

অভি: তা কোথায় স্বীকার করলাম??

সা: তোমার ফ্যান্টাসিটাই তোমার সম্বন্ধে বলে দেয়।

অভি: (একটু থেমে) তুমি আমায় ঘৃণা করছো না?

সা: ঘৃণা নয়,  I pity you.

অভি: তুমি pity করবার কে?? Just because you have this (হাত দিয়ে ঘর আর খাটটা দেখিয়ে), this arrangement, and an understanding sister, you think you are superior to me! (একটু থেমে) or may be you are….. (ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে)

 

সা: Hey, I am sorry, I am sincerely sorry…

অভি: তুমি জানো আমার দাদা আমায় পিটিয়েছিল?

সা: তোমায় বলতে হবে না, আমি বুঝতে পারছি।

অভি: পরদিন আমি ওর সঙ্গে শুয়েছিলাম…. কি করবো, আমি কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না…..I wanted him real… ওকে পেতে চেয়েছিলাম….. ও আমাকে জাস্ট ধরে পিটিয়েছিল। কিল, চড়, লাথি সব কিছু। পরদিন  সন্ধ্যেবেলা ও আমায় পার্কে নিয়ে গিয়েছিলো, গিয়ে আঙ্গুল তুলে ওই হিজড়ে ছেলেগুলো কে দেখায়…. দেখায়, কি বিশ্রীভাবে ওরা বসে আছে…… শুধু সেক্স-পার্টনার খোঁজার তাগিদে। ওদের বিশ্রী লেগেছিলো, Ugly, Miserable! I didn’t wanted to be a part of them, atleast not in my brother’s eyes….. They are so ugly and so repulsive! ওরা কুষ্ঠ রুগীর থেকেও বিশ্রী, কুৎসিৎ। রাতের অন্ধকারে দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে ঘুরে বেড়ানো, কোথায় ভালো ছেলে পাওয়া যায়। তারপর তাদের ঝোপের ধরে নিয়ে যাওয়া। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ সেরে পালিয়ে আসা। বাড়িতে গিয়ে এমন ভাব দেখানো যে কিছুই হয়নি। এবং পরেরদিনের সন্ধ্যের জন্য আবার অপেক্ষা। ছিঃ!

 

I was my brother’s favourite! অন্তত ওর চোখে আমি নিজেকে এতো ছোট দেখতে পারবো না। (একটু থেমে) তুমি আমায় নিজেকে দেখতে বলেছিলে না…. I saw myself in my brother’s eyes and I wanted to die. And I hated myself….. (চোখ ঢেকে কাঁদতে শুরু করে)

 

সায়ন ওর কাঁধে স্নেহ ভরে হাত দেয়। অভি হাত সরিয়ে নেয়, ও কেঁদেই চলে।

অভি: এখন এসবের প্রয়োজন নেই, যখন দরকার ছিল, তখন কোথায় ছিলে?

সা: আমি তোমার পাশেই ছিলাম, তুমিই দেখতে পাওনি। তুমি তখন তোমার ‘দাদা’কে খুঁজছিলে।

অভি: এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।

সা: কিসের দেরি?

অভি: (মুখ তুলে) আমি গায়ত্রীকে বিয়ে করতে চাই।

সা: এখনও ??

অভি: (মাথা নেড়ে) I don’t want to be ugly anymore.

 

সায়ন ওকে চেপে ধরে। জোর করে মুখটা তোলে।

সা: আমার দিকে তাকাও।

অভি: I don’t want to. তুমিও বিশ্রী।

সা: তুমি আরও কুৎসিত বুঝলে, আরও। শুধু তোমার দাদার চোখে নও, আমার চোখেও। এতো কিছুর পরেও you are pretending to love her – ছিঃ!

অভি: I really do!

 

সা: হুম.. কি মহৎ চিন্তা! ভাবছো বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। ওকে প্রচুর ভালোবাসবে, প্রচুর আদর করবে, চুমু খাবে, আর সেক্স করবার সময় চোখ বন্ধ করে তোমার ওই সর্প দেবতার কথা ভাববে। সর্প দেবতার কথা ভেবে যৌন আনন্দ নেবে। আর আমার দিদি ভাববে তাকে আদর করে কি তৃপ্তিই না তুমি পেয়েছো! ছিঃ! Pretension, pretension all the way….. All the fucking way!!!

 

তোমার চরিত্র কেমন জানো? যখন দুদিন পরে এই প্রেম প্রেম খেলায় তোমার মন উঠে যাবে, তখন তোমার বৌকে বোঝাবে যে ওই তোমায় satisfy করতে পারছে না। কিন্তু তুমি মহৎ। বলবে তাতে কি হয়েছে… তুমি ওর দেহ কে নয়, ওর আত্মাকে ভালোবাসো! Fuck!!

 

অভি: No, that won’t happen! আমি তোমায় প্রমিস করছি, এমন হবে না!

সা: চুপ করো। তুমি শুধু কুৎসিত নও, তুমি মিথ্যেবাদী বুঝলে, মিথ্যেবাদী!

অভি: না আমি আর পারছি না, প্লিজ চুপ করো।

 

সা: তুমি তোমার দাদার জন্য, নিজের অস্তিত্ব, নিজের সবকিছু বদলে ফেলতে চাও? ওকে কেন বদলাতে চাওনি? You never asked Him to change…. তুমি ওর কাছে ugly হতে পারো.. ও তোমার কাছে ugly নয় কেন? শুধু ওর গার্লফ্রেন্ড আছে বলে, আর তোমার সামনে বিন্দাস হয়ে খিঁচতে পারে বলে? এদিকে ভাইয়ের আসল পরিচয় জেনে ভাইকে পেটাতে বাধ সাধে না…… বাহ্! Lovely! Fucking Chauvinist!

 

(অভি হাঁপাচ্ছে)

অভি: ওফফ, আমি আর পারছি না, দম বন্ধ হয়ে আসছে…… প্লিজ একটু কেউ জানালাটা খুলে দেবে?

 

সায়ন জানালাটা খুলে দিলো। একঝাঁক কামিনী ফুল ঘরের ভেতর এসে পড়লো। অভি ফুলগুলো কুড়িয়ে নিলো। ওগুলো মুখের কাছে নিয়ে এসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিল।

অভি: What should I do now? কার কাছে হেল্প চাইবো?

সা: নিজের কাছে চাও।

অভি: Will God help me?

সা: God won’t!

অভি: কিন্তু তুমি তো হেল্প করবে??

 

সা: আমি? (অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে) জানিনা! আমিও তোমার মতোই হেল্পলেস।… (আবার অভির দিকে ফিরে) And asking for help…..  তুমি করবে?

অভি: সায়ন……! (সায়নকে পরম আবেশে জড়িয়ে ধরে। সায়নও ওকে আদর করে জড়িয়ে ধরে।)

 

কিছুক্ষন সব চুপচাপ।

 

অভি: হেল্প মি সায়ন।

সা: হেল্প মি অভি।

 

পরস্পর পরস্পরের দিকে মুখটা নামিয়ে আনে। দীর্ঘ চুম্বনের মুহূর্ত।

 

পেছন থেকে মহিলার কণ্ঠস্বর: সায়ন, এই সায়ন…. কি করছিস?

সায়ন মুখ তুলে হাসতে শুরু করে। অভিও ধীরে ধীরে হাসিতে যোগ দেয়। 

মহিলা: কিরে, হাসছিস কেন?

 

সা: (চেঁচিয়ে) মা, আমাদের খেলা শুরু হয়েছে মা, তুমি শুতে যাও।

 

হাসতে হাসতে দুজনে বসে পরে। হাসি থেমে যায়। শুধু দুজন দুজনের দিকে চেয়ে থাকে। স্লো ফেড-আউট হতে থাকে। ধীরে ধীরে সারা স্টেজ অন্ধকার হয়ে যায়।

 

জেগে থাকে শুধু একটা কামিনী ফুলের ঝাড়

[ছবিঃ ভুটান]


 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *