যৌনতায় যখন পরিচয়/১৩

যৌনতায় যখন পরিচয়/১৩

অবকাশে সঞ্জয়

পরিচয়, পরিচয় আর পরিচয়। পরিচয়হীন হয়ে এ জীবনে বাঁচা যায় না। তাই তো আলাপের শুরুতেই আমরা একে অপরের পরিচয় জানতে চায়। যেমন একদিন জানতে চেয়েছিলেন গুরু দ্রোনাচার্য্য। গভীর জঙ্গলে এক অজ্ঞাতকুলশীল যুবককে দেখে শুধিয়েছিলেন কি তার পরিচয়। সেই যুবক নিজ নামটুকু বলতে পারলেও আর কোন সম্মানসূচক পরিচয় দিতে পারে নি। তবে হ্যাঁ, সে এটুকু বলেছিল যে, সে গুরু দ্রোনাচার্য্যের শিষ্য। সেই কথা শুনে গুরু দ্রোণ অবাক হয়ে বলেছিলেন, আমি তো তোমাকে অস্ত্রশিক্ষা দিই নি। তাহলে তুমি কেমন করে আমার শিষ্য হলে? এরপর সেই অজ্ঞাতকূলশীল যুবক অর্থাৎ একলব্য কি বলেছিল এবং তারপর গুরুদক্ষিনা হিসাবে গুরু দ্রোণ কি চেয়েছিলেন তা আমাদের সবার জানা। সেদিন একলব্য শুধুমাত্র  এক মহান  গুরুর শিষ্যত্বের পরিচয়টুকু পাওয়ার জন্য নিজ বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ অঞ্জলি দিয়েছিলেন।

সম্প্রতি একটি সংবাদের প্রেক্ষিতে উঠে এল আবার সেই একলব্য প্রসঙ্গ। লোক আদালতে দুই রূপান্তরকামী নারীর বিচারক হওয়া প্রসঙ্গে দেশের প্রথম রূপান্তরিত নারী হিসাবে কলেজের প্রিন্সিপ্যাল হয়েছেন যিনি সেই মানবীদি বলেন, রূপান্তরকামীদের একলব্যের মতো নিজের যোগ্যতা দেখাতে হবে। সেদিন একলব্য নিজের যোগ্যতা দেখাতে গিয়ে গুরু দ্রোণের  নির্দেশে নিজ বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ কেটে গুরুদেবের চরণে অঞ্জলি দিয়েছিলেন। এই সমাজ বা রাষ্ট্রকে যদি গুরু দ্রোণ ব’লে ধরে নিই তাহলে সেই গুরু কি নিজের গুরুগিরি দেখিয়ে বলছেন, ওহে রূপান্তরকামী তুমি যদি নিজেকে রূপান্তরকামী নারী বলতে চাও তাহলে প্রথমেই নিজ লিঙ্গচ্ছেদ করে সমাজের চরণে তা অর্পন করো। জানি এটা ওনার ব্যক্তিগত মতামত। উনি এসআরএস নামক লিঙ্গান্তরকরণের সার্জারীর পক্ষে নিজ মতামত দিতেই পারেন। কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট যেখানে সেলফ আইডেনটিফিকেশানের কথা স্পষ্ট বলেছেন, সেখানে ‘একলব্য’-এর মতো নিজ যোগ্যতা দেখাতে হবে একথা বলা কেন? তবু তর্কের খাতিরে যদি ধরে নিই রূপান্তরকামীরা একলব্য হয়ে নিজ যোগ্যতার প্রমাণ দিলেন। কিন্তু তারপর? সমস্ত যশ খ্যাতি প্রতিপত্তি নিয়ে রাজাধিরাজ হয়ে রাজত্ব করবে অর্জুন। আর একলব্যরা চিরকাল হারিয়ে যাবে গহীন বনে? তাহলে কি লাভ একলব্য হয়ে? শুধুই পরিচয় প্রাপ্তি? রূপান্তরকামীরা নিজ পরিচয়সংকটে ভোগেন ঠিকই। কিন্তু সেই সংকট দূরীকরণের জন্য সমাজের কাছে এইভাবে একলব্য হতে হবে? জানি না। সত্যি জানি না। তবে এটুকু জানি, পরিচয়, পরিচয় আর পরিচয়। পরিচয়হীন হয়ে এ জীবনে বাঁচা যায় না। আর সেই পরিচয় যদি হয়, যৌন পরিচয় তখন এ সমাজ বোধহয় এভাবেই গুরুদক্ষিণা চায়!

[ছবিঃ অরূপ দাস]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *