গর্জে ওঠো সমকামীরা
– অনুপমা সরকার প্রান্তিকা
আমি সমকামী, কিন্তু মা বাবা ছেলে দেখছে।
কিছুতেই বলতে পারছিনা তাদের আমি আমার সহকর্মী একটি মেয়েকেই ভালোবাসি, ওর সাথেই থাকতে চাই। ভয় করছে, বাড়িতে কিছুতেই মানবেনা।
কাকে ভয় পাচ্ছেন, কিসের লজ্জা! শুনুন, নিজের সত্তাকে আগে নিজে গ্রহণ করুন, মাথা উঁচু রেখে চিৎকার করে বলুন সবাইকে, আপনার পার্টনার পছন্দ করার অধিকার একমাত্র আপনার, আর কারোর নয়, আপনার মা বাবারও না….
আমি মা হতে চাইনা? কিন্তু বলতে পারবোনা, শ্বশুরবাড়ীর লোক কখনোই মানবেনা।
কেন মানবেনা, বলুন কেন মানবেনা? আপনার শরীর, আপনি কখন মা হবেন না হবেন, ডিসাইড করার সম্পূর্ণ অধিকার একমাত্র শুধু আপনার।আর কতদিন আত্মত্যাগী মহান সেজে ঘুরে বেড়াবেন? হাঁপিয়ে ওঠেননা। শুনুন অন্যের কাছে ভালো হওয়ার ভান করার চেয়ে নিজের কাছে সৎ থাকা বেশি জরুরি নয় কি?
ভেবে দেখুন…
ও বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করে, কিন্তু বাবা সাফ জানিয়েছে সরকারি চাকরি ছাড়া অন্য কোনো ছেলে পছন্দ না।
তবে ভালোবাসতে গিয়েছিলেন কেন? আপনাদের মতো লক্ষ্মীমন্ত মেয়েদের ভালোবাসাই উচিত নয়। আপনার বয়স কত? আপনি প্রাপ্তবয়স্ক তো? যথেষ্ট সন্দেহ আছে। শুনুন কাওকে গুরুত্ব দেওয়া আর নিজের এথিক্স ঠিক রাখা দুটোর ভেতর পার্থক্য আছে। আপনি যদি নিজের সিদ্ধান্ত টুকু নিতে না পারেন, তবে আপনি…যাকগে আর বল্লামনা….
নারী অঙ্গে পুরুষ অথবা পুরুষ অঙ্গে নারী সে, তার হাঁটা চলা, কথা বলার ধরণ দেখলেই লোকে ফিচকে হাসে, হিজড়ে, ছক্কা বলে ডাকে তাকে। ভেতর ভেতর দুমড়েমুচড়ে যায়। কিন্তু কিছু করার নেই, তাই এখন ওসব কথা আর পাত্তা টাত্তা দেয়না।
কেন পাত্তা দেননা, প্রতিবাদ কেন করেননা?আসলে আপনি ভয় পান, শুনুন আগে নিজেকে সম্মান করুন, তারপর একবার শুধু একবার চিল্লিয়ে প্রতিবাদ করে দেখুন, দেখবেন অনেকটা হালকা হবেন। আপনি কিভাবে হাঁটবেন, কথা বলবেন, কি পরবেন, কি খাবেন সেটা নিয়ে অন্য কারোর কোনো অধিকার নেই একটা মন্তব্য পাস করার….
এ তো গেল কয়েকটা উদাহরণ মাত্র, আপনারা যারা প্রতিমুহূর্তে পড়শি হাঁড়ির তলায় কতগুলো ফুটো আছে পর্যবেক্ষণ করেন, তারা তো বেশ ভালোই জানেন প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রতিটা মানুষ কত কত সমস্যার সম্মুখীন হয়!
আর রইলো বাকি সমাজের কথা, মোটা মেয়ের রোগা বয়ফ্রেন্ড হলে সমাজের সমস্যা। কালো ছেলের ফর্সা বউ হলে সমাজের সমস্যা। মাধ্যমিকে পাশের বাড়ির মেয়ে বেশি নাম্বার পেলে সমস্যা, না পেলেও সমস্যা, কোনো মেয়ে সিঙ্গেল মা হলে সমস্যা, কারোর বিয়ের পর বাচ্চা না হলেও সমস্যা।
কেউ লিভ ইন করলে সমাজের সমস্যা, কেউ পঞ্চাশ পেরিয়ে যাবার পর বিয়ে করলেও সমস্যা। ব্রায়ের স্ট্র্যাপ বেরিয়ে গেল, জামার পেছনে রক্তের দাগ লাগলে, মাঝরাস্তায় কাউকে জড়িয়ে ধরলে, হট প্যান্ট পরলে সবেতেই সমস্যা সমস্যা আর সমস্যা….
শুনুন, নিজেকে ভালোবাসুন, নিজের জন্য বাঁচুন…
অনেকেই প্রশ্ন করে নিজের জন্য বাঁচলে তো স্বার্থপর বলবে লোকে। এত ভিড়ের মধ্যে থাকেন কেন? আপনার জীবন কোনো নিরীহ ঘাটে বাঁধা লঞ্চ নয়, যে কেউ এসে টিকিট কেটে উঠে পড়বে। খুব সিলেক্টেড কিছু মানুষকে নিজের জীবনে গুরুত্ব দেবেন। যারা আপনার সামান্য সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিতে পারেনা, তাদেরকে আপনি এত সম্মান কেন দেন??প্রশ্ন গুলো নিজেকে করুন।
শুনুন প্রতিটা মানুষের পছন্দ অপছন্দ থাকে, কিন্তু কার ভালোলাগা মন্দলাগাকে গুরুত্ব দেবেন, সেটা আপনি ঠিক করবেন। আর আপনিও অন্যের ব্যাক্তিগত বিষয়ে হুটহাট ঢুকে পড়বেন না-।
জীবনটাই যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার জন্য,সুতরাং নেমে পরুন এবার,শুভকামনা থাকল আপনার জন্য আমরা আছি আপনার পাশে সবসময়।
ছবিঃ ভুটান