রাষ্ট্র – সমাজ ও আমি
– সামীউল হাসান সামী
সমকামিতা এখনো অধিকাংশ দেশগুলিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত হতে পারে। তবে আশার বাণী হচ্ছে কিছু কিছু দেশ রাষ্ট্রীয় ভাবে সমপ্রেমীদের স্বীকৃতি ও স্বাধীনতা দিতে শুরু করেছে।
এতে সমপ্রেমীদের যেমন অবাধ সুযোগ তৈরি হচ্ছে নিজের সম্পর্ক স্থাপন এবং তার মূল্যায়নের।
অনেকেই ভাবছেন রাষ্ট্র সম্পর্কে স্বাধীনতা দিয়ে থাকলেও সামজিক দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হচ্ছেনা। এতে লাভ কী হতেপের?
এ বিষয়ে আমি আলোচনা করেছি কয়েকজন কমিউনিটি জনগণের সাথে যারা অবাধ সম্পর্কে বিশ্বাস করতে চায়। তাদের প্রশ্ন অনেকটাই এমন ছিলো।
এ বিষয়ে আমার মতামত এমন।
আপনি একটি রাষ্ট্রের জনগণ। রাষ্ট্রের দায়িত্ব আপনার নাগরিক সকল অধিকার নিশ্চিত করা। শুধুই আপনার যৌনতা অথবা ভিন্নতা, যা এমন ভিন্নতা যে সে ভিন্নতায় তোমার কোনো হাত নেই। এমন ভিন্নতা যা আপনার পাশের কাউকে তা ক্ষতি করছেনা যতটুকু ক্ষতি হলে সে আপনার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। তাহলে কেনো আপনার সেই ভিন্নতাকে কেন্দ্র করে আপনাকে আসামি সাব্যস্ত করবে আপনার রাষ্ট্রের সংবিধান?
যে সংবিধান আপনার কল্যাণে, আপনার রাষ্ট্রের কল্যাণে। সেই সংবিধান আপনার বিপরীতে কেনো অবস্থান করবেন?
আপনি যে সামাজিকতা নিয়ে কথা বলছিলেন, আপনি নিজেও সেই সমাজের একজন। আপনার দায়িত্ব এবং কর্তব্য রয়েছে সেই সমাজকে, সেই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকে পাল্টাতে।
এই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সমাজ ব্যাবস্থা এবং সমাজের লোক গুলোর দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে আপনাকেও দীর্ঘদিন কাজ করে যেতে হবে। এটি কোনো হালুয়া রুটি নয় যে আপনি অপেক্ষা করে বসে থাকবেন কেউ তৈরি করে এনে আপনার মুখে তুলে দিবে।
আপনি তখনই সমাজে এবং সমাজের মানুষগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে সমর্থ হবেন যখন আপনি নিজেকে ঐ সমাজে গ্রহণযোগ্য অবস্থানে তুলে ধরতে পারবেন। আপনাকেও সমাজকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে আপনি সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
শুধুই সমকামিতা নয়, এমন অনেক বিষয় রয়েছে যে বিষয়ে সমাজ ও মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন। আপনি নিজেও অনেক বিষয়ে উদার হতে পারেন না। সেই আপনিই উদার হতে বাধ্য হন যখন সেই ভিন্ন বিষয়গুলো আপনাকে ভালো কিছু ভাবায়।
সমকামীরা তাদের কর্ম তাদের সামর্থ্য দিয়ে যতোদিন এই সমাজের ভাবনা স্তম্ভে নাড়া দিতে পারবেনা ততদিন এই সমাজ এদের নিয়ে ভালো কিছু ভাবতে পারবেনা এটাই স্বাভাবিক।
আপনার ভাবনা শক্তি ততক্ষণ সক্রিয় হয়না, যতক্ষণ তা আপনাকে বাধ্য করে। তবে অন্যরা আপনাকে নিয়ে কেনো ভাববে, যদিনা আপনি তাদের বাধ্য করেন?
রাষ্ট্রের সীকৃতি অন্তত আপনাকে এতটুকু চিন্তা মুক্তি দিতে পারে যে আপনার রাষ্ট্র আপনার বিপরীতে নেই। আপনার রাষ্ট্র আপনাকে আসামি ভাবছে না। আপনার রাষ্ট্র আপনাকে তেমনটা ভাবে, যেমনটা আপনার চারপাশের মানুষ গুলোকে ভাবে। আপনি এবং আপনার রাষ্ট্র আপনারা বিপরীতে নয়। কেউ শুনুক আর নাইবা শুনুক আপনার রাষ্ট্র আপনাকে এবং আপনার সম্পর্ককে সম্মান করেছে। এখন আপনার দায়িত্ব আপনার সমাজকে উদার মানোষিকতায় গড়ে তোলা যেখানে কেউ কারো দাড়া নিগ্রহের শিকার হবেনা। সবাই সবার আত্মমর্যাদা, নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার গুলো সমানভাবে ভোগ করতে পারবে।
ছবিঃ ভুটান