কাঁটা থেকে কুড়ি?
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম প্রাইড ওয়াক পেরিয়ে এলো বিশটা বছর!!
— অনিরুদ্ধ (অনির) সেন – নিজস্ব সংবাদদাতা
দিনটা শুক্রবার, তখনো কোলকাতার বাবুমহলে উইকেন্ড সেলিব্রেশনের আগাম পরিকল্পনার হিড়িক তৈরি হয়নি। ছিলোনা সেলফি তোলার জন্যে হাতে হাতে মুঠোফোন। স্বপ্নের রং লাল, সবুজ, গেঁড়ুয়া –তে ভাগাভাগি হয়ে যায়নি তখনো। সীমান্তে চলছে কার্গিল যুদ্ধ। তখন শেষের পথে। আর দিন–চারেক পরে আমেরিকার সেনাবাহিনীর তরুণ ব্যারি উইনচেলকে বেসবল ব্যাট দিয়ে মেরে খুন করতে চলেছে তারই এক সহযোদ্ধা, শুধুমাত্র সমকামী হওয়ার অপরাধে। বিংশ শতাব্দী প্রায় শেষ, জুলাই মাস, ২ তারিখ। পার্কসার্কাস ময়দানে দেখা গেছিলো ১৫টি কালো মাথা। সবার গায়ে হলুদ রঙের টি–শার্ট। তারাও রাস্তায় নেমেছিলো নিজেদের মতো করে আরো একটা নতুন যুদ্ধের সূচনা করতে। তাদের বুকে শুধুই এক আকাশ রামধনু, এক সমুদ্র স্বপ্ন আর এক আগ্নেয়গিরি দুঃসাহস।
ফ্রেন্ডশিপ ওয়াক ১৯৯৯, এই তকমা সেটে সেদিন ১৫ জন যখন কোলকাতার রাস্তার ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে খুঁজে ফিরছিলো নিজেদের অধিকার আর নাগরিকত্বের সংজ্ঞা, তারাও কি জানতো যে এই ঘটনার মাথায় ভবিষ্যত তুলে দিতে চলেছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম প্রাইড ওয়াকের শিরোপা? জেনে হোক বা না জেনে, ১৫ জন মানুষের এই ক্ষুদ্র সংখ্যা দুই দলে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলো উত্তরে এবং দক্ষিণে। সংযোগ স্থাপণ করার চেষ্টা করেছিল, বোঝানোর চেষ্টা করেছিলো বিভিন্ন শ্রেণির মানুষদের আর পোঁছে গেছিলো সরকারী দপ্তরগুলিতেও। যাকে আন্দোলনের ভাষায় “সেন্সিটাইসেশন” বলা হয়, নিঃসন্দেহে এটি ছিলো সাধারণ মানুষের মাঝে গিয়ে, নিজেদের সীমিত ক্ষমতায় তার সর্বপ্রথম নিদর্শনগুলির একটি। আমেরিকার স্টোনওয়াল অভ্যুত্থানের (জুন ২৮ এবং ২৯‘ ১৯৬৯) ৩০ বছরের মাথায়, সেই গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণ করাও এই পদযাত্রার বিভিন্ন পরিকল্পনার মধ্যে একটি ছিলো অবশ্যই। অন্যদিকে গান্ধীজীর অহিংস ডান্ডি যাত্রার (১২ই মার্চ – ৬ই এপ্রিল‘১৯৩০) থেকেও এই যাত্রা খুঁজে নিয়েছিলো দেশীয় সংগ্রামী পন্থা। কারো সমর্থন, কারো উপহাস, কারো বিস্ময় – সবকিছুর উর্ধে উঠে সূচনা করেছিলো এই বিচিত্র প্রতিবাদী ব্যাকরণের। যদি সমগ্র বিশ্বের প্রাইড ওয়াকের সূচনা হয় ১৯৬৯ –এর স্টোনওয়াল অভ্যুত্থানের হাত ধরে, ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বর্তমান সময়ে সারা বছর ধরে যেসকল প্রাইডওয়াক বা রামধনু গৌরবযাত্রার আয়োজন হচ্ছে, তাদের পিছনে কুড়ি বছরের এই ফ্রেন্ডশিপ ওয়াকের ভূমিকাও কিন্তু নিঃসন্দেহে ফেলনা নয়।
আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে, ২০১৯ সালে, কোলকাতা আর চন্দননগরের বুকে উদযাপিত হতে চলেছে সেই ইতিহাসের বিংশতিতম বর্ষ। জুনমাসের ২৯ এবং ৩০ তারিখ, বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হতে চলেছে পুরনোকে ফিরে দেখা।
২৯শে জুন‘ ২০১৯, শনিবার (দুপুর ২টো ৪৫ থেকে ৩টে ৩০) – পার্কসার্কাস ময়দানে জটলা। খুঁজে ফেরা ১৯৯৯ সালের সেই দিনটাকে, সাথে নাচ, গান, বিবৃতি আর ফ্রেন্ডশিপ ওয়াকের প্রতীকী টি–শার্টের বিতরন।
২৯শে জুন‘ ২০১৯, শনিবার (বিকেল ৪টে ৩০ থেকে ৫টা ৩০) – একাডেমি অফ ফাইন আর্টস থেকে টাটা সেন্টার অবধি একটি প্রতীকী পদযাত্রা। (সম্ভাব্য রাস্তা)
২৯শে জুন‘ ২০১৯, শনিবার (সন্ধ্যা ৬টা ৩০ থেকে ৯টা) – ভারতের ক্যুয়ের সাংগঠনিক ইতিহাস নিয়ে আড্ডা, সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ ওয়াক এবং পূর্ব/উত্তর–পূর্ব ভারতের বর্তমান প্রাইড ওয়াকের আয়োজকেরা। এমিটি ট্রাস্টের তরফে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও ফ্রেন্ডশিপ ওয়াক‘৯৯ নিয়ে একটি বিশেষ প্রদর্শনী। স্থান – টাটা সেন্টার, ৪৩, জহরলাল নেহেরু রোড। কোলকাতা – ৭০০০৭১।
৩০শে জুন‘ ২০১৯, রবিবার – চন্দননগর প্রাইড ওয়াক।
— o — o — o —
ছবিসূত্রঃ https://friendshipwalk20.wordpress.com