লিঙ্গ-যৌন-প্রান্তিক মানুষের পাশে কোলকাতার প্রাক্তন মেয়র

লিঙ্গ-যৌন-প্রান্তিক মানুষকে পাশে নিয়ে কোলকাতার প্রাক্তন মেয়র

— অনিরুদ্ধ (অনির) সেন / নিজস্ব সংবাদদাতা

কোলকাতার এলজিবিটি+ গোষ্ঠীর সাথে প্রার্থী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য (ছবিসূত্রঃ শ্রী বাপ্পাদিত্য মুখার্জী)

একসময় ছিলেন কোলকাতার মহানাগরিক, রাজ্যে শক্তিশালী ছিলো বামপন্থী রাজনীতি। এবার আবার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। আর সেই ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তায় সাথে চাইছেন সবাইকে, হোক না সে শারীরিক/মানসিক ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ অথবা এলজিবিটিআইকিউ+ গোষ্ঠীর অন্তর্গত।

সিপিয়াইএম দলের পক্ষে এলজিবিটিআইকিউ+ গোষ্ঠীর মানুষের সাথে সর্বমোট চারটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিলো। প্রথম সভাতে উপস্থিত ছিলেন উত্তর কোলকাতার সিপিআইএম প্রার্থী শ্রীমতী কনীনিকা বসু ঘোষ ২১শে এপ্রিল (বিশদ এখানে), দ্বিতীয়টিতে দক্ষিণ কোলকাতার প্রার্থী শ্রীমতী নন্দিনী মুখোপাধ্যায় ১০ই মে, তৃতীয়টিতে দমদম কেন্দ্রের প্রার্থী শ্রী নেপালদেব ভট্টাচার্য ১১ই মে, এবং সবশেষে ১৩ই মে উপস্থিত ছিলেন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআইএম প্রার্থী শ্রী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য মহাশয়। এই আলোচনা সভাগুলিতে সিপিআইএম দলের পক্ষ থেকে নিজেদের ইশতেহারে প্রকাশিত প্রতিশ্রুতিগুলির (বিশদ এখানে) পাশাপাশি উঠে এসেছিলো লিঙ্গ-যৌন-প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানবাধিকার প্রসঙ্গে প্রার্থীদের এবং দলের মতামত এবং একসাথে পথ চলার অঙ্গীকারের আশ্বাস।

সন্তোষপুর অঞ্চলে আয়োজিত শেষোক্ত আলোচনার শুরুতেই বিকাশবাবু বলেন “মানুষের চরিত্র কিন্তু তার লিঙ্গ দ্বারা নির্ধারিত হয়না, এই ধারণা তৈরি করেছে ব্রাহ্মণ্যবাদ। তাই আমাদের সবার লড়াই কেন্দ্রীভূত হোক এই ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে। যৌনতা নয়, আমাদের সবার লড়াই আসলে মানবাধিকারের, যেই মানবাধিকার আমাদের সবার এক, আপনাদের পাশে আমি আছি।”

পুরুষতন্ত্রের ধারক এবং বাহক হিসেবে আরএসএস-এরও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি, অন্যদিকে এও মেনে নেন যে কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত বেশ কিছু মানুষও যুগ যুগ ধরে চলে আসা ধ্যানধারণার বাইরে বেরোতে পারেননি। বাঙ্গালী জাতীর সেক্স সম্পর্কে নাকসিঁটকানো নিয়েও করেন চটুল মন্তব্য, “সেক্স হচ্ছে সাংঘাতিক গোপনীয় ব্যাপার, অতএব সেক্স নিয়ে কথা বলা যাবেনা, বাপ-মা ছেলে-মেয়েদের ঘটা করে বিয়ে দিচ্ছে শুধুমাত্র তাদের যৌন জীবনে পূর্ণাঙ্গতা আনার জন্য, অথচ বিয়ের আগের দিন অবধি যৌনতা নিয়ে তারা রা কাটেনননা”।

রবীন্দ্রনাথের তাসের দেশের মতো যে-পথে-চলেছি-সে-পথেই-চলবো পন্থা আমাদের পিছনে টেনে রেখেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি, জানান যেখানে বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের জন্যেই বাথরুম তৈরি করা সম্ভব হয়নি সেখানে ট্রান্সজেন্ডার বা ভিন্ন-লিঙ্গচেতনাসম্পন্ন মানুষদের জন্যে আলাদা বাথরুম তৈরি করা যথেষ্ট দুঃসাধ্য। মানুষের মাঝে এ বিশয়ে আরো বেশী শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি।

শেষ পাতের ভোটের বাক্সে সিপিআইএম দলের জন্যে রসগোল্লা আছে না উচ্ছে আমরা জানিনা। তবে লিঙ্গ-যৌন-মানুষের জীবনসংগ্রামের ইতিহাসে তিক্ততার স্বাদ অনেকখানি। ভোটের প্রচার, এবং ফলাফল ঘোষণার পরবর্তী পর্যায়ে ভারতের এলজিবিটিআইকিউ+ গোষ্ঠী সভাকক্ষের ভিতরে ও বাইরে এই রাজনৈতিক দলগুলিকে পাশে পাবে তো? উত্তর তোলা থাকলো সময়ের খাতার না-ওলটানো পাতাগুলির মধ্যে।

কাঁচালঙ্কার তরফে আমাদের সংবাদদাতা এই অনুষ্ঠানটিকে পুঙ্খানুপুঙ্খ নিরিক্ষন করে বন্ধুদের জন্যে এর সারাংশগুলি এই নিবন্ধের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করলেন। দীর্ঘ আলোচনার সমস্ত কথাকে লিপিবদ্ধ করা সম্ভবপর হয়নি, এই ত্রুটি বন্ধুরা নিজগুণে ক্ষমা করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

** বিঃ দ্রঃ কাঁচালঙ্কা কোন রাজনৈতিক দলকে সরাসরি সমর্থন করেনা। কিন্তু এলজিবিটি সম্প্রদায়ের পক্ষে ও বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে তার সমালোচনা মুক্তকণ্ঠে করতে কোন সংকোচও বোধ করেনা।

—- o — o — o —-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *