অন্তরের শান্তি – প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী (ইচ্ছে)

অন্তরের শান্তি

— প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী (ইচ্ছে)

বেকারত্ব ভাঙা প্রেম নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে সিদ্ধিকসার,
মেয়েবেলার থেকেই বেশ ডাগর ডোগর শরীর ছিলো;
সবাই বলতো মেয়েদের মতো জামা পড়লে ভীষণ ভালো লাগবে;
মা’কে বলতো কী গো তোমার মেয়েটাকে এমন ছেলে সাজিয়ে রাখো কেনো?! কেমন ব্যাটাদের মতো হাবভাব!!!!!
মা বলতো বড়ো হলে ঠিক হয়ে যাবে;
ততদিনে প্রারম্ভ হয়েছিলো মৌমাছিদের মতন কতজনের আনাগোনা,
স্কুলের মেয়েরা কেউ ঘেষতোনা কাছে সময়টা তখন সবে সবে পরিচিত “”হোমো সেক্সুয়াল”” শব্দটার সাথে,
দুটোর মধ্যে কোনো সখ্যতা ছিলোনা—–
কোচিং-এর ছেলেরা রাস্তার ছেলেরা “হোমো হোমো” “ফিফটি ফিফটি” “মওগা” বলে খ্যাপাতো—–
কিচ্ছু বলতে পারতোনা রাস্তা থেকে লাঞ্ছিত হয়ে বাড়ী ফিরতো ভীতু সিদ্ধিকসাটা;
মা চিন্তায় পাগল হয়ে কাঁদতো বোঝাতো;
মরুৎ-এর মতো সময় যাচ্ছিলো;
শরৎ এলো সাথে মর্ত্যে কৈলাসবাসীনির আগমন ঘটেছিলো;
পূজোর কটাদিন মায়ের হাত ধরে ধরে ঘুরলেও কৈলাসবাসীনির ঢাকের তালে মনটা নেচে উঠতো;
কিন্তু জামাপ্যান্ট কিনে আনলেই মা বলতো কীরে একটাও মেয়েদের জামা কিনিসনি?!
সিদ্ধিকসা চুপ করে থাকতো কখনওবা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করতো;
স্কুলে কোচিং-এ মা কে একঘরে করেছিলো!!!!!
কারণ ছিলো সমকামীর মা!!!!!!
দাঁড়িয়ে থাকতো সব অভিভাবকদের থেকে দূরে একদম আলাদা——
তবে সিদ্ধিকসার মা সিদ্ধিকসার হাতটা ছাড়েনি কৈলাসবাসীনি কৈলাসে গেলেও নাড়ি ছেঁড়ার পরেও বুকের মধ্যে আগলে রাখতো;
ধীর লয় এলো মারাত্নক বয়ঃসন্ধি;
যুবতী হওয়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকলো যৌবনের জল;
উঁচু বুকে অনেক পুরুষই জল ছলকানোর শব্দ শোনার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলো;
স্কুলের শাড়ী পরে যখন বাসে উঠতো তখন কনুইয়ের ধাক্কা হাতের চেটোর প্রলোভন ঘিরে ধরতো স্তন ও নিতম্বকে;
সিদ্ধিকসার অভিঞ্জতায় বাবা মায়ের রোজের ঝগড়া বাবার পরকীয়া ড্রাগের নেশায় আসক্ত দাদা—
মরণকূপ বিচ্ছিন্নতাবাদের মুখোমুখি জীবন ছিলো—-
হঠাৎ আগ্রাসনের সময়টাতেই জীবনিকার হয়ে এলো পরাহিকা;
আত্নস্বরূপ নিমজ্জিত হয়েছিলো ক্ষীরোদসাগরে;
সঙ্গমটা নেশার মতো পেয়ে বসেছিলো,,,,,
তবে সঙ্গমগুলো তুমুল আলোড়িত হতো;
এখনের মতো নয় যে দামী হোটেলের ঠান্ডাঘরে মিলনের পর চোখের জল ঢাকতে হয়ে সাদা চাদরে;
তখন টিফিনের পয়সা দিয়ে ভালোবাসা কিনলেও রোগা মনে কোনো জড়তা ছিলোনা,,,,,,
পরাহিকা পরের বিছানায় এখন সুখেই আছে;
সিদ্ধিকসার দরকার পড়েনা খুচরো আবেগের পরাহিকার বর্ম ভেদ করে কোনো কষ্ট ছুঁতেই পারেনা;
সিদ্ধিকসা বোঝে ধীরে ধীরে ফুরাচ্ছে;
বদরক্ত যৌন উদ্দাম নারী কোনো কিছুতেই আর আকর্ষণ নেই,
এখন শুধু একটা চাকরি আর মা- টাকে নিয়ে সহজ মানুষ হওয়া;
স্বাধীনতা পেয়েছে ঠিকই তবে স্বাধীন হতে এখনও অনেক দেরি;
যদি নবজন্ম পায় মনোগামী ঐ নববসন্তে ৬ই সেপ্টেম্বর উদযাপন করবে;
************************
“””””ছেলে ছেলেকে চুমু খেয়েছে বেশ করেছে বেশ করেছে,
মেয়ে মেয়েতে বিয়ে করছে ভালো করেছে ভালো করেছে””””

“”””আজাদি!হাম ছিনকে লেঙ্গে আজাদি””””
*************************
অনন্তশয্যায় শায়িত সমাজ চলচিত্র দেখে উপভোগ করতে পারে;
পারে অন্য সমকামীদের সাহস জোগাতে,
কিন্তু নিজের সময় কুঁকড়ে যায় সরীসৃপ সামাজিক কীট ভুলে যায় এথিক্সের বুলি;
বলে ওঠে সমস্বরে আমরা প্রাইডে যাই সাপোর্ট করি কিন্তু আমরা অমন নই!!!!!!
সমাজ বদলাক কচ্ছপের মতো আর তুরঙ্গমের মতো জীবন কাটুক আমাদের—–
শরীরের ভুলভাল শরীরেই থাকুক শরীরের আদলে কী মন বদলায়—–
গজদাঁত শ্যামবর্ণী কাঙ্খিত এক অচেনা অজানা নারী—-
জলোচ্ছাসে বালির ওপর ঝিনুক এসে পড়ে;
***********************
“””মন পাখি তোর গরাদ ভেঙে আসমানে উড়ান সাগরের নাও সাগরে;
বুক পাঁজরে আগুন জ্বেলে নতুন শহরে,
আঁকি বাঁকি তল নদী বাহু জল গান গান ভাঁটি উজা বুক বাঁধি চল”””

ছবিসূত্রঃ flickr.com (ফ্রি টু ইউজ অ্যান্ড শেয়ার)

~~ o ~~ o ~~ o ~~ o ~~


<< কালিজা ২০২০ (৩য় বর্ষ) – সূচীপত্র


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *