চতুরঙ্গ
– প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী (ইচ্ছে/ইচ্ছেডানা)
(১)
ময়াল সর্পের খোলসে নিহত বাক্যব্যঞ্জনা..
ধুলোমাখা কায়ায় বন্য সৌন্দর্য;
অর্ধনারীত্বে নিরীহ ভবিষ্যৎ কল্পনা;
বাহ্যিক দৃষ্টিবিনিময় কৃকলাসে বন্দী মোহিত শব্দার্থ..
কলরব উচ্ছৃঙ্খলতা মায়াবী ছায়াপথ জুড়ে ;
আরশিতে ফুটে ওঠা খর্বিত ঋতুচক্র শেষের দিনান্তে লোভনীয় চরণামৃত..
(২)
সক্রিয়ভাবে অবিদ্যমান প্রশ্নগুলো বিদ্যমান সমাজের চোখেমুখে,
ব্যাথাটা গভীরতর হয়ে রাতের সাথে সাথে;
কুহেলিকা আশ্রিত পূর্ণিমার তামরসে–ঝুলন্ত চোখ ঘুমাতে চাইছে;
বদান্য হৃদয়ের প্রজাপতি আখার আঁচে কুঞ্চিত—–
জ্বালা ভীষণ জ্বলছে!!কষ্ট হচ্ছে!!!মা বাঁচাও বাঁচাও!!!! কেউ নেই ঘরটাতে মাতো চলে গেছে!!!!!———
তমসাঘন হাতের শিরাগুলো;
মদালস রাসলীলা!!!! পয়গম্বর নেই –কুহেলিকা আজ অব্দি দেখেনি তাকে–
জীবনতরের মতো হারিয়ে গেছে ফাগের রং;
সামান্য নিশাজল!!!!কুহেলিকা ভীষণ একা—–
একটু বাদেই সকাল হবে রোজের মতো–
কুহেলিকা ঘুমাবে —–
এখন আর কাজে যায়না স্বেচ্ছায় নির্বাসন,
তাগিদ নেই লক্ষ্য নেই সেদিন বৌদি বলে গেছে পরের মাসে বাড়ী ভাগ হবে;
মনটার কটা ভাগ হয়েছে সে খবর কেউ রাখেনা ভাইপোটাকেও আটকে রাখে আসতে দেয়েনা এদিকে;
কুহেলিকার জন্য ঠিক হয়েছে শেষপ্রান্তের ঘরটা;
দূর থেকে রোজ এই সময় শুনতে পায় কুহেলিকা আজানের আওয়াজ———-
“আল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার,
আল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার,”
যখন স্কুল পড়তো উফ্ কী মার খেয়েছিলো যখন বাবা মা জানতে পারলো কুহেলিকা সমকামী;
বাবাতো সব শার্টগুলো ছিঁড়ে ফেলেছিলো—
সহপাঠীরাও বলতো তুই একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সাথে শুবি কীভাবে????!!!
কত কষ্ট কত যন্ত্রণা কুহেলিকা মেরুদন্ড শক্ত করে রেখেছিলো;
সেদিনই বৌদি এসে বলে গেছে ঘরদোরে ছিটকিনি দিয়ে রাখবে আমার ছেলেটা ছোটো;
কী দেখতে কী দেখবে কুশিক্ষা পাবে সমাজে থাকতে হবে আমাদের—
হায়রে সমাজ!!!!!!!
কুহেলি কলেজের নাম করে প্রাইডে যেতো;
পেপারে ফোটো উঠতেই বাবা বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছিলো ——
পাড়ার মাতব্বররা বলেছিলো বাড়ীতে ঢুকিয়ে দিয়ে “মা অনেক হয়েছে এইবার ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে নাও”——
অত দুঃখের মধ্যেও কুহেলির হাসি পেয়েছিলো;
আর এক প্রাইডে দেখা হয়েছিলো শ্বেতাঙ্গীনির সাথে–
কুহেলির জীবনেও এসেছিলো রোমহর্ষক ভালোবাসা—–
কিন্তু বিধি বাম!!!
“”””উইদআউট এক্সপেকটেশনস “””””” এর দোহাই আর টেক কেয়ার বলে সব শেষ একনিমেষে;
কুহেলির কেরিয়ার হলোনা কোর্স করে ঘরেই পরে রইল —-
সমস্যাটা ঐ ড্রেস কোড মেয়েদের মতো সাজতে হবে—–
সমঝোতা করেনি কুহেলিকা উল্টে প্রতিবাদ করেছিলো–
আচ্ছা পোশাক খায় না মাথায় দেয়ে,
সেই কারণে কোথাও আর চাকরি পাইনি;
তবে হেরে গিয়েও জিতে গেছে—–
কুহেলিকার চিৎকার পৌঁছেছিলো অনেক দূর অব্দি;
কুহেলিকা এখন আর প্রাইডে যায়না—–
শ্বেতাঙ্গীনি এখন অনেক বড়ো একটা কোম্পানিতে কর্মরত;
কতদিন দেখেনি তাকে—-
এখন অভিমান হলে ফুল কে কিনে দেয়ে কী জানে!!!!!
কুহেলিকা কান পেতে শোনে আজানের আগমন—
বাবা বলতো চিমটি মেরে ও পাড়ায় একটা হিজরে থাকে ওর লিঙ্গটা তুই পেলে ভালো হতো–
আজান বইছে বাতাসে—–
“আশহাদু-আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ
আশহাদু-আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ
হাইয়া আলাস সালাহ্
হাইয়া আলাস সালাহ্
হাইয়া আলাল ফালাহ
হাইয়া আলাল ফালাহ
আস সলাতু খাইরুম মিনান নাউম
আস সলাতু খাইরুম মিনান নাউম
আল্লাহু আকবার
আল্লাহু আকবার
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”
ছাদের চিলেকোঠাটা পেলে কুহেলিকা মনভরে শুকতারা দেখবে আর আজান শুনবে;
একটা ঘরই তো চেয়েছিলো কুহেলিকা তা সেটা একঘরই হোকনা ক্ষতি কী?
ভালোই থাকবে শেষ জীবনটা একা থাকবে,,,,
আর থাকতে নাহ্ দিলে শুকতারাতো আছেই চলে যাবে মায়ের কাছে ওখানেই থাকে মা এখন;
মায়ের ওপর রাগ নেই অভিমান ছিলো—
কুহেলি টলতে টলতে আয়নার সামনে যায় চোখের নীচে অনেকটা কালি——-
বোটানিক্যাল গার্ডেনের বটগাছটার থেকেও যেনো বেশি প্রাচীন পরিণত এক অন্য কুহেলি;
“সেদিনও আকাশে ছিলো কত তাঁরা
আজও মনে আছে তোমারই কথা—–”
কুহেলির গানের গলাটা ভালো লাগতো শ্বেতাঙ্গীনির!!!আজও কুহেলি স্বাধীনতার গান গায়-
“উই শ্যাল ওভারকাম ওয়ান ডে—–”
দাদা বলে মাতলামো যত রাজ্যের বোন না হলে লাথি মেরে বের করে দিতাম—–
কুহেলিকাই শুধু জানে এই গানের মানে,,,,,,
দক্ষিণ বাতাসে ঘরের ড্রিম ক্যাচারটা উড়ছে—–
শৌখিনতা মাতালেরও শৌখিনতা;
৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹৹
কুহেলিকারা এখনও পরাধীন;
পিঞ্জরে বসে পাপক্ষালনকারী——
আত্না নির্দিষ্ট সত্য অন্তিমে একাঙ্গিক অঘনাশন;
শ্লোগানে গর্জে ওঠে শোষিত নির্যাতিত অবহেলিত পাষাণগণ——–
“আমার শরীর আমার মন
দূর হটাও রাজশাসন–
(৩)
“উফ্ ঘুমটা ভেঙে গেল—–
সকাল সকাল ঢাকের বাদ্যি,
রোদের আলো বিছানার চাদরের আনাচে কানাচে;
চোখের কোণে বিষাদগাঁথা ঠোঁটের মাঝে চওড়া হাসি,
হেমন্ত এমন কোনো দিনেইতো তোর সঙ্গে,
মেয়েলি রাতপোশাকটা পুরুষালি রোমশ বুকের ওপর চেপে বসে আছে;
ওদিকে মাইকে বারোয়ারি পূজোর স্তোত্রপাঠ শুরু হলো;
পুরোহিতের ভরাট গলায় আকর্ষণীয় মন্রচ্চারণ কিন্তু এখন কী আর সেজেগুজে ছেলেভুলানো সাজে,
হেমন্ত নির্বিবাদে ছত্রিশটা বসন্ত পেরিয়েছে;
শারদীয়া সকাল কাটে আমার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে,
মনে আছে পুরুষালি চেহারাটাকে নারীর সাজে যখন সজ্জিত করতাম;
তুই কেমন হাঁ করে তাকিয়ে থাকতিস একদৃষ্টে মুখের দিকে,
সত্যি কথা বলতে তোর জন্যই আলাদাভাবে নিজেকে সাজাতাম,
তুই তীর্থের কাকের মতো দাঁড়িয়ে থাকতিস নাচের ইস্কুলের সামনে;
সবাই বলতো অবিনাশ এসেছে তোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে
মজা লাগতো তাও কপট রাগ দেখাতাম,
রজনীপ্রান্তের ঊষাভাষ্যে যখন ঘুমের প্রহর কাটত সেই নিদ্রাসমাপ্তি জুড়ে থাকতো তোর ছোট্ট নাম,
নটরাজন নন্দনে প্রতিভা উদ্ভাসিত পলক নিঃসংকোচে বিস্তৃত হতো স্বভাব অনুযায়ী;
দিনগুলো হঠাৎ যেন ফুরিয়ে গেল———
মহালয়ার দেবীপক্ষ হতে দূর্গোৎসবের সূচনা আর মদের বোতলে টিপ্পনি সহযোগে জীবন বন্দি;
শুনলাম তোর একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে এখন ভীষণরকমের সংসারী তুই;
সেসব দিনের কথা এখন তোর কাছে নেহাতই ছেলেবেলার ছেলেমানুষি;
অন্দরমহলে সমাদৃত অন্ধকার ক্রমান্বয়ে স্বপ্নের সাথে সমঝোতাহীন আড়ি;
আলয় দহিত হয়ে অতীত সুখের অন্তরালে নির্জন দ্বীপে অর্ধ পুরুষালি,
পূর্ব ঝটিকা সমাপ্তি পায় অর্থহীন অভিমানে মনখারাপগুলো ভীষণ আনাড়ি;
সহচর তুই সফরসঙ্গী হতে পারলি আর কই
সর্ম্পকের টানাপোড়েনে সুখ বাজি রাখলি;
বয়ে যায় মধুরাতি আড়াল থেকে দেখেছিলাম তোকে—
বেশ মানিয়েছিলো তোকে বরবেশে;
শুভদৃষ্টির সময় দেখলাম তোর চোখটা গভীর হলো সমুদ্রের মতো গভীর
হঠাৎ এদিক ওদিক তাকালি;
প্রেম শেষ হলো সামাজিক অনুষ্ঠানের নিঃশেষে,
মহানবমীর রাতের ন্যায়ে বিদায় বিচ্ছেদ মিলিয়ে অতিবাহিত হয়ে আধখানা শশধরের প্রত্যেকটা দ্বিপ্রহর নিশি,
“”যার কপালে নাই সুখ,
ব্রক্ষান্ড বৈমুখ,
দুখ বিনে সুখ নাই এ
সংসারে;
দুখো দাও যে জনারে,,””
রাতজামার কুঁচি উড়ছে
উড়ছে খিড়কির ফিনফিনে পর্দাগুলি;
মিশে যাচ্ছে ড্রইংরুমের নীল আলোয় ব্যস্ত পদক্ষেপে হাতে রঙিন সুরামৃত,
নারীর ছাঁচে পুরুষ মিশছে
আর পুরুষ ছাঁচে নারী;
বাইরে সিঁদুরখেলা ঘরের মধ্যে সেই সিঁদুরের লাল আরো গাঢ় আরো অনেকখানি জীবন্ত;
নারীর ছাঁচে পুরুষ মিশছে
পুরুষ ছাঁচে মিশে যাচ্ছে নারী।।।।।
(৪)
তাম বিছানায়,
হ্যাঁরে অবাক হচ্ছিস——-
হাতরাতাম অন্যকিছু হাতরাতাম শরীরের নয় মনোস্বাচ্ছন্দ্য;
ইতিহাস স্বাক্ষী আছে কৌমার্য হারিয়েছিলাম ঝোঁকের মাথায়;
চামড়ায় আশ্রয় নিয়েছিল ‘ক্যারেকটার লেস’ তকমা;
সবাই বলতো “ওর কী চরিত্রের ঠিক আছে মেয়েছেলের শরীর পেলে?!”
সত্যি শরীরগুলোকে একসময় মাংসের তাল মনে হত,
ভাবতাম প্রত্যেকটা নিঃশ্বাসের সাথে পাবো এইবার হয়েতো কিছু পাবো!!!!!!!!!
সাতরাজার গুপ্তধন না মণিমাণিক্য না অন্যকিছু—-
চরমে পৌঁছে একই গতির সাথে সব শেষ—–
তুই এসেছিলিস ভেবেছিলাম তুইও কাঁকলাস;
কবুতর হয়ে উড়ে যাবি—
আঁধারচ্ছন্ন পরিবেশে পতঙ্গ যায় রোহিতাশ্বের স্পর্শে;
ভুল ধারনা রোহিতাশ্বের স্পর্শে পতঙ্গ ঝলসায়নি সেদিন—–
খুঁজে পেয়েছিলো সাতরাজার ধন মনিমাণিক্য নয় ‘ভালোবাসা’ ——
অসুখলতার মতো ভালোবাসা উপবীত দিয়ে ঢেকেছিলো;
পুরাকাল অব্যবহার্য তৃণদ্রুম দীর্ঘসূত্রী;
ছায়ালোকে অভিনন্দিত বলাহকের রূপ অতর্কিত পরিভ্রমন;
অভিলাষ!!সমর্পিত নিরন্তর রতির প্রতিকৃতি ছায়াবাজির খেলায় লণ্ঠনের আলো কেঁপে ওঠে,
সেই রতির পেলব আচ্ছাদিতে দেখতে পাই তন্দ্রাণীতে অন্য এক রতি–
কলেবরের পাপ পরাক্রমী অনমনীয়——
আমিও তো কামিনী হয়ে অন্য এক তরঙ্গিণীকেই মধুভৃতের ন্যায় প্রেম নিবেদন করেছিলাম;
দুটি দৃক ভিজেছিলো সমাপ্তিতে রূধিরে আজও বর্তমান রিক্ততা;
জলধর আজও বৃষ্টির নিমন্ত্রন নিয়ে আসে;
নহলী মনস্বিতা একান্তই বাকশূন্য;
ইন্তেকালে দূর্ভিক্ষ লেগেছে—-
অপকৃষ্ট সন্দভিতে মায়া দুঃখ,
গাঁজার নৌকায় ভেসে চলে কত দুরন্ত লাশ—
মড়ক লাগেনি তাও ভাসে ওরা—–
জনহীন নিবন্ধ তত্ত্বধায়নে বাহিত ঐ গাঁজার ডিঙি;
চিরবিদায়!চিরবিদায়!ভালোবাসা!!!!
পরিত্রাণ আব্রু সুখে থাকুক নব্য চারুলতারা।।।।।
ছবিঃ ভুটান