শেক্সপিয়ারের সেই রোদ ঝলমলে ছেলেটি

“DON PEDRO Speak low if you speak love.”

প্রেম অস্ফুটে প্রকাশ করো। শেক্সপিয়ারের চরিত্রের এই ভাষ্য, হয়তো তাঁর নিজেরও। যিনি প্রেমকে, জাহির করার অভিব্যক্তি হিসেবে দেখেননি কখনো, তাঁর মুগ্ধতা, তাঁর বিরহ উপভোগ করেছেন তারিয়ে তারিয়ে। আজ সেই প্রেমের গপ্পো বলবো। কয়েকটা লেখা, ধ্রুপদী ইংরিজি থেকে হুবহু তুলে দিয়ে, বাংলাভাষায় তার মানে কিরকম দাঁড়ায়, বেশ জটিল রসকষহীন অনুবাদের মাধ্যমেও তা করা যেতো হয়তো; কিন্তু ষোড়শ শতকের এই কালজয়ী মানুষটির হাসিকান্নার সাথে আমার মনের সুরটাকে আরেকটু বেঁধে নেওয়ার তাগিদেই, একটু অন্যভাবে ছন্নছাড়া টুকরো টুকরো কথায়, এই লেখা এগিয়ে নিয়ে যাবো, এই ঠিক করলাম আপাতত। দেখা যাক কি হয় এর পরিণতি।

উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের জন্ম ঠিক কবে, জানা যায়না। ১৫৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তাকে খ্রিষ্টীয় নীতি অনুসারে ব্যাপ্টাইস করা হয়, মৃত্যু ১৬১৬এ। ১৮ বছর বয়সে বিয়ে করেন, এবং সেই সুবাদে দুই যমজ ছেলেমেয়ের পিতৃত্ব লাভ করেন। একসময় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন যুক্তরাজ্যের রঙ্গমঞ্চ। সৃষ্টি করেছেন একের পর এক কালজয়ী নাটক। আমাদের গপ্পো কিন্তু এ সবের থেকে আলাদা, এক অন্য রাজ্যের রূপকথা। নাটক নয়, পাঠককে আজ নিয়ে যাবো কবি শেক্সপিয়ারের সাথে আলাপ করাতে।

বৃদ্ধ শেক্সপিয়ারের জীবদ্দশায় ১৬০৯ খ্রিষ্টাব্দে, অর্থাৎ আজ থেকে ৪০০ বছরেরও আগে, তাঁর লেখা কিছু অপ্রকাশিত চতুর্দশপদী কবিতা বা সনেটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংখ্যায় মোট ১৫৪টি। এই কবিতাগুলির গঠন বেশ জটিল। ১৪ লাইনের মধ্যে সনেটের নিয়ম মেনে অন্তমিল, অর্থাৎ ‘ক-খ-ক-খ চ-ছ-চ-ছ ট-ঠ-ট-ঠ ত-ত’ সুত্রে গাঁথা। অন্যদিকে প্রত্যেক লাইনে আবার আয়ামবিক মতে পুরুষালি ‘খালি-তালি-খালি-তালি-খালি-তালি-খালি-তালি-খালি-তালি’ অথবা মেয়েলী ‘খালি-তালি-খালি-তালি-খালি-তালি-খালি-তালি-খালি-তালি-খালি’ ছন্দমিল। এতো ব্যাকরণের মধ্যে ঢুকছি কারণ পরবর্তী গপ্পে এই ছন্দগুলির উল্লেখ রয়েছে, কবির মনোভাব বিশ্লেষণে। কিন্তু কথা হচ্ছে শেক্সপিয়ারকে নিয়ে; তাই এই জটিল বাঁধাধরা গড়নেও যে মাধুর্য তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন, তা পড়লে এতো বছর পরেও গায়ে কাঁটা দেয়।

গোল বাঁধলো পরে, যখন এই প্রেমের কবিতাগুলি কাকে উদ্দেশ্য করে লেখা সেই নিয়ে গবেষণা শুরু হলো। মুদ্রণটি উৎসর্গ করা হয় জনৈক মিঃ ডাব্ল্যু এইচ -কে। কে এই ডাব্ল্যু-এইচ সে নিয়ে প্রচুর তর্ক বিতর্ক দানা বাঁধে। ১৮৮৯ সালে প্রকাশিত অস্কার ওয়াইল্ডের ছোটগল্প ‘দি পোরট্রেইট অফ মিঃ ডাব্ল্যু এইচ’ -এ অস্কার ওয়াইল্ড উইলি হিউ নামক এক মেয়েলী পুরুষ চরিত্রের উপস্থাপনা করেন। শেক্সপিয়ারের নাটকগুলিতে নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন এই কিশোর। তার প্রেমে শেক্সপিয়ার হাবুডুবু। তবে এই উইলি হিউ নামক ব্যক্তির কোন ঐতিহাসিক খোঁজ পাওয়া যায়নি কখনো। তবে বেশিরভাগ গবেষক সেই সময়ের বিভিন্ন নামজাদা মানুষকে এই মিঃ ডাব্ল্যু এইচ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কেউ কেউ মনে করেন এই মিঃ ডাব্ল্যু এইচ, শেক্সপিয়ার নিজেই। এই বিষয়ে একটা কথা বলে রাখা ভালো। এই মুদ্রণের পিছনে আদৌ শেক্সপিয়ারের সায় ছিলো, না কি তাকে না জানিয়েই এগুলি ছাপা হয়েছিলো, সে বিষয়ে কিন্তু দ্বিমত বর্তমান। যিনি নিজের প্রেমের কথা জাহির করতে বারণ করেছেন, তিনিই কি তাঁর গুণমুগ্ধদেরকে সন্ধান দিয়েছিলেন তাঁর মনের জানলার? প্রশ্ন থাকা তো স্বাভাবিক।

এইখানে এসে একটি ক্যুয়ের প্রবন্ধ নটে মুড়িয়ে কম্বলের তলায় লম্বা হতে চাইলে, কার কিই বা বলার থাকতে পারে? কিন্তু গপ্পের বলা এখনও শেষ হয়নি।

সনেটগুলি ঠিক কবে রচিত হয়েছিলো, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য না থাকলেও, ১৫৪টি কবিতার বক্তব্যকে বিশ্লেষণ করে, প্রায় সমস্ত বিশেষজ্ঞ একটি ব্যাপারে প্রায় একমত। কবি প্রথম ১২৬টি কবিতা রচনা করেছেন এক ফর্সা যুবক অথবা কিশোরকে নিয়ে। তিনি তার প্রেমের কাঙ্গাল। তার কাছে তাঁর আবদার, তাঁর অভিমান, তাঁর সমর্পণ। কি সাংঘাতিক!! কথা হচ্ছে শেক্সপিয়ারকে নিয়ে। বিসমকামী বা হেটেরোসেক্স্যুয়াল যুগল রোমিও-জুলিয়েট যার তৈরি স্বাস্বত প্রেমের পরাকাষ্ঠা, তিনি নিজে একজন পুরুষ হয়ে হাবুডুবু খাচ্ছেন অন্য এক পুরুষের প্রণয়বন্ধনে? তাকে কি “এই সমাজ মেনে নেবে?”

কিন্তু না মেনে উপায় কি? স্রস্টার কাছে তার সৃষ্টির চেয়ে বড়ো সত্যি তো আর কিছুই নেই। ১৬০৯ সাল, রেনেসাঁস্নাত ইংল্যান্ড, যেখানে সমকাম হোক, বা সমপ্রেম, এক সংজ্ঞাবিহীন অনুভূতি, যা তদানীন্তন পাঠকমহলে অধরা রয়ে গেলো, তাই আধুনিক সাহিত্যে, সমাজবিজ্ঞানে, ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে ছুঁয়ে যাচ্ছে এক নতুন আঙ্গিকে।

ফর্সা যুবকের প্রতি তাঁর নিবেদিত ১২৬টি পদ্যকেও আবার ৫টি পর্যায়ে ভাগ করে ফেলা যায়, প্রথম ১৭টি কে বলা চলে ‘প্রোক্রিয়েশন সনেট’। এর মাধ্যমে কবি নিজের প্রেমিককে উৎসাহ দেন যাতে সে বিবাহে আবদ্ধ হয়ে তার উত্তরসূরিকে নিয়ে আসেন পৃথিবীতে। কারণ? তাঁর প্রেমিকের যে অনন্য সৌন্দর্য্য, তা যেন তার মৃত্যুতে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন না হয়ে যায়, যেন জিনের মাধ্যমে এই রূপমাধুরী রয়ে যায় ধরাতলে। ১৮ নং পদ্যে, শেক্সপিয়ার যখন বোঝেন তাঁর প্রিয়তম বিবাহে বিশেষ উৎসাহী নন, তখন তিনি নিজেই এক পন্থা আবিষ্কার করেন, তাঁর প্রেমিকের লাবণ্যকে শাশ্বত করে রাখার। দ্বিতীয় পর্যায়ের এই বিভিন্ন ধারার পদ্যগুলির ইতি হয় ৭৭ নং পদ্যে। এই ৫৯টি পদ্যের রচনাকাল যেন কবি এবং প্রেমিকের প্রেমের দিনলিপি। ৭৮ থেকে ৮৬, এই ৯টি পদ্যকে বলা চলে ‘রাইভাল পোয়েট সনেট’। এই ধারার পদ্যগুলিতে কবি খানিক ঈর্ষান্বিত। কারণ তাঁর এই ফর্সা যুবকের প্রতি শুধু তিনি একাই অনুরক্ত নন, তার গুণগ্রাহী একাধিক। অনুরাগীদের মধ্যে তিনিই যে গোপিনীশ্রেষ্ঠ রাধা, তারই প্রমাণে ব্রতী হন শেক্সপিয়ার। সুর পাল্টায় ৮৭ নং পদ্যে। ৮৭ থেকে ১২৫, কবি এবং প্রেমিকের মধ্যে বিচ্ছেদের স্বর প্রকট হয়। বিরহ, যন্ত্রণা, অনুশোচনা, সমালোচনা এবং আত্মসমালোচনায় মুখর হন শেক্সপিয়ার। শেষ ১২৬ নং পদ্য, শেক্সপিয়ারিয়ান সনেটের ফর্সা যুবকটির প্রতি ব্যক্ত অনুরাগের ইতি বা এনভয়। এই পদ্যের কিছু অংশ ছাপা হয়নি, এমনই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এতে কবি তাঁর অনন্তযৌবন প্রেমিককে মৃত্যুর সত্যতা সম্পর্কে অবিহিত করেন। এর পরের পদ্যগুলিতে, অর্থাৎ ১২৭ নং পদ্য থেকে তিনি তুলে আনেন এক কালো মেয়ের প্রতি তাঁর আসক্তির আখ্যান। এই পদ্যাবলি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে শেক্সপিয়ারের উভকামিতা বা বাইসেক্স্যুয়ালিটিকে প্রমাণ করতে সক্ষম, মতামত অধিকাংশ বিশেষজ্ঞদের।

১২৬ টি পদ্যের মধ্যে আমরা যেগুলি নিয়ে একটু গভীরে যাবো, সে সবকটিই দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত। খুঁজে নেবো আজ থেকে ৪০০ বছরেরও বেশী পুরাতন, পুরুষের প্রতি পুরুষের না বলা সেই প্রেমের গপ্পো। ১৮, ২০ আর ৫২ নং পদ্যে।

পদ্য ১৮ সম্ভবত শেক্সপিয়ারের সবথেকে বিখ্যাত পদ্য। যারা আমার মতোই ইংজিরিতে কাঁচা, তাদের জন্য আমরা এখানে এর খানিক সাধ্যমত ভাবানুবাদের চেষ্টা করে দেখি। অন্তমিল রাখলেও সূত্র মেনে ছন্দমিলে আপাতত আমি ব্যর্থ। সেজন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তবে আপাতত দেখে নেওয়া যাক এখানে এক পুরুষ আরেক পুরুষকে উদ্দেশ্য করে কিভাবে তার রূপকীর্তনে মশগুল। আগেই বলেছি পদ্য ১৭ অবধি কবি তাঁর প্রিয়কে বলেছেন, সে যাতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় আর তার রূপ জিনের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চালিত করে, এবং হার মেনেছেন। উল্লেখ্য, শীতপ্রধান ইংল্যন্ডের গ্রীষ্ম, সেখনকার জলবায়ুর নিরিখে নাতিশীতোষ্ণ এক ঋতু; উৎসবে মুখর হওয়ার সময়। আর কিছু বলছিনা, সরাসরি নিচের বাংলাভাষার বিফল তর্জমায় আসছি।

তোমায় আমি গ্রীষ্মের দিন বলি?
যদিও এ তুমি শান্ত ও সুন্দর।
চৈতির ঝড়ে ভেঙ্গে পরে আম কলি;
নিদাঘ থাকেনা খানিক দিনের পর।।
স্বর্গের চোখ কখনো তীব্র দ্যুত;
কখনো সোনালি ঘোলাটেতে আটকায়;
সুন্দর থেকে সুন্দর হয় চ্যুত;
প্রকৃতির ঘড়ি ঘরঘর চলে যায়।।
তোমার গ্রীষ্ম-আগুণ নেভেনা কভু,
তোমার রাঙা যে আরো বেশী ঝলসায়,
মৃত্যুর ছায়া ছিন্ন করে হে প্রভু
আরো আরো জ্বলো সময়ের কবিতায়।।
মানবের চোখ, শ্বাস যদি থাকে তবে
থেকে যাবে এটা, এটাকে তুমিই রবে।।।।

এই কবিতাটা নিয়ে কয়েকটা বিশেষ দিক সামনে আনবো। এখানে কোথাও কবি তাঁর প্রিয়ের লিঙ্গচিহ্ন, অর্থাৎ নারী না পুরুষ, তার ঊর্ধ্বে প্রিয়ের প্রতি নিজের অনুরাগ ব্যক্ত করেছেন। এই ইংরিজি সনেটের ছন্দে মেয়েলী আয়ামবিক ছন্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা ভাবানুবাদে আমরা রাখতে পারিনি। প্রথা অনুযায়ী মেয়েলী আয়ামবিক ছন্দ ব্যবহার করা হয় তখনই, যখন স্রষ্টা নিজের মনের দুঃখ বা দোলাচল বা অসহায়তা প্রকাশ করতে চান। কবিতায় কবি তাঁর প্রিয়কে যেন পেতে চাইছেন কিন্তু পেতে পারছেননা। সনেটটির কোয়ার্তো লিপির (সব কিছু বিশ্লেষণ করতে নেই, রসভঙ্গ হয়) গভীর অনুধাবন করতে গেলে একাধিকবার “উইল” আর “হিউ” শব্দবন্ধগুলি খুঁজে পাওয়া যায়। অস্কার ওয়াইল্ডের ‘উইলি হিউ’ তত্ত্ব অনেকাংশে এই বিশেষ পদ্যটির উপরে দাঁড়িয়ে।

এ যে মায়ার আঁকা মেয়েদের মতো মুখ;
তুমি স্বপ্নে পাওয়া রাজপুত্র না কন্যা?
ওই হৃদয় জুড়ে পেলব ধুকপুক;
তারা ইচ্ছেমতোন পালটে পালটে যায়না।।
তাদের চেয়েও উজ্জ্বল চোখ স্মিত,
যাতে পড়ে তাতে পরশপাথর লাগে।
রঙ্গিন, তোমাতে সব রঙ হয় স্থিত।
নরনারী দুইই বেঁধে যায় অনুরাগে।।
নারী করে গড়া শুরু; অপলক দেখে
তারপর মায়া জড়ালো প্রেমের রাশে।
জোড়াতালি দিয়ে জিতে নিলো আমা থেকে,
জুড়ে দিলো যা, তা আমার সর্বনাশে।।
তাই নারীর সাথেই প্রেমের সোহাগে সাজো।
ধনী করো তারে, আমার প্রেমেতে রাজো।।।।

৫২ নং পদ্যের উল্লেখ বিশেষভাবে প্রয়োজন। ২০ নং পদ্যে যেমন কবির দাবী ছিলো তাঁর প্রিয়ের সবটুকু প্রেমের, তা আসলে যে তিনি পাননি, সেটা এখানে এসে বোঝা যায়। তাঁর যে অসহায়তা ছন্দের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিলো, তার কারণ ঠিক কি তাও খানিক বোঝা যায়। আরেকটি বিশয় লক্ষণীয়। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন এই কবিতায় উল্লিখিত ‘key’ অর্থায় চাবি আসলে রূপক, এবং সেটি পুরুষ যৌনাঙ্গের দিকে দিকনির্দেশ করে। যদিও এই ব্যাখ্যাকে বেশিরভাগ মানুষই অতিরঞ্জিত হিসেবে গণ্য করেছেন।

কপালের ফেরে হাতের মধ্যে সেই চাবিখানি আছে
যাতে ছুটে ছুটে এসে ধরা দেবে সে যে তার সেই সিন্দুকে?
তাকে খুলে খুলে দেখা বারণ করেছে প্রেম ফিসফিসে পাছে
তাতে ভোঁতা হয়ে যাবে ধারের অংক বলে থাকে নিন্দুকে।।
সেই অংক মেনেই আমাদের দেখা দুর্লভ সাদামাটা।
বছর ঘুরেও কিঞ্চিৎ তারা কদাচিৎ ফিরে আসে।
কিছু নুড়ি পড়ে যেন পথের প্রান্তে আলগোঝ সাঁটা সাঁটা;
অথবা শিরোস্ত্রানের রত্ন খুলে পড়ে আছে পাসে।।
তেমনি টুকরো সময় যখন সিন্দুকে তোকে পাই;
যেন ভাঁজ করে রাখা যত্নের সাথে কামিজ রেখেছি তুলে।
কিছু বিশেষ সময় বিশেষ অর্থে সেরা করে রেখে যাই;
তোর বন্দী দম্ভ মেলে ধরা দেয় পূরানো অর্থ ভুলে।।
তোর মূল্য এমনই লুকোচুরি খেলে জিতে যায় মাঝেসাজে।
যেন পেলে মনে হয় সব পেয়ে গেছি; না পেলেও আশা বাজে।।।।

গানের শাস্ত্রে অনুষ্ঠানের ইতি টানতে হয় ভৈরবীতে। তাই এই কবিতার সফরে মুগ্ধ, শ্রান্ত এক পথিক বাধ্য হয়েই কিছু কথা বলে শেষ করবে তার লেখা। ইতিহাসে অনেক পরিচিত পুরুষ মুখ রয়েছেন যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে ইংরিজি সাহিত্যের সেরা সাহিত্যকার শেক্সপিয়ারের লেখা এই ১২৬টি কবিতার প্রেরণা হিসেবে। অনেক ব্যকরনগত দিক ছুলামনা খানিক ইচ্ছেয়, খানিক আলস্যে। … … … … শেক্সপিয়ার কি সমকামী ছিলেন? বা উভকামী? না কি তাঁর প্রেম ছিল প্লেটোনিক, শুধুই মানসিক ভাবের উদ্বেল। জানিনা। জানা সম্ভবও হবেনা কখনো। কিন্তু এই কবিতাগুলি, একজন প্রেমের কাঙাল, তাঁর প্রিয়ের প্রতি, উৎসর্গ করবে অনায়াসে; এবং করেও। কবির বাস্তবপ্রভাবিত কল্পমানব, সে এক অনিন্দ্যসুন্দর শাশ্বত বিন্দু, যাতে সমস্ত অভিমান, আক্ষেপ, অপারগতা নিঃশেষ হয়, আর অনন্ত আদর সূর্যের মতো ফিরে আসে, হিমশীতল জীবনে জাগায় উষ্ণতার আবেশ, ছুঁয়ে যায় অন্যরকম এক লজ্জায়। শেক্সপিয়ার আমাদের মনে বেঁচে থাকুন। বেঁচে থাকুক আমাদের প্রেমেরা, আমাদের স্বকীয় সোচ্চার অন্ত-ছন্দ-যুক্ত, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতিগুলি।

ছবিঃ উইকিপিডিয়া (ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স)

<< কালিজা ২০২২ (৫ম বর্ষ) – সূচীপত্র


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *